প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড় দেননি: ওবায়দুল কাদের

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত

একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্য এবং অসদাচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেননি বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী। ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনীতিতে বিনয়, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা করে আওয়ামী লীগ। দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয়না, এ কথা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বার বার প্রমাণ করেছেন। যত বড় রাজনৈতিক পরিচয় হোক, অন্যায়, অনিয়ম কিংবা রাজনৈতিক শিষ্টাচার অথবা শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজ করলে দল কখনো তার পক্ষে দাঁড়ায় না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'দেশবাসী দেখেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্য এবং অসদাচরণের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। আর তার বিপরীতে দেশবাসী দেখলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের একজন নেতার অশালীন বক্তব্যকে নির্লজ্জভাবে কীভাবে দলীয়ভাবে সমর্থন দিলো। দেশবাসী বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে ভূ-লুণ্ঠিত করেছে। বিএনপি লালন করে প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র আর পরশ্রীকাতরতা। তাদের মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, তার কৃতঘ্ন। তারা জন্মলগ্ন থেকে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশকে কলুষিত করে আসছে।'

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, 'অবশ্য বিএনপি এমনই এক দল যাদের কৃতজ্ঞতাবোধ কখনো ছিল না, এখনও নেই। দলগতভাবে তারা শিষ্টাচার বর্জিত দল। তা না হলে শোকসন্তপ্ত মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে তারা দরজা বন্ধ করে অসম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে দিত না। গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সেদিনের অশালীন বক্তব্য সে সময় দেশবাসী শুনেছিল। তাই বলতে চাই, শিষ্টাচারহীনতা, অশালীনতা তাদের মজ্জাগত। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার।'

'মঞ্চে-সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা যে সব ভাষায় বক্তব্য রাখেন, তা বলার অযোগ্য, ছাপার অযোগ্য' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কথায় ও কাজে পরিশীলিত রুচিবোধ ও শালীনতা তাদের মাঝে নেই। না হয়, বিএনপি নেতা আলালের এমন অরাজনৈতিক কুরুচিপূর্ণভাষাকে কীভাবে রাজনীতিতে সজ্জন বলে বিবেচিত মির্জা ফখরুল সাহেবরা যৌক্তিকতা আছে বলে পাবলিকলি সার্টিফিকেট দেন? তাহলে জনগণ ধরে নিচ্ছে তাদের সব অপপ্রচার আর বিষোদগারের মতো লোক দেখানো ভদ্রতাও এক ধরণের মুখোশ? আসলে বিএনপির রাজনীতি এখন তলানিতে ঠেকে গেছে। তারা মেরুদণ্ডহীন ফরমায়েশ-সর্বস্ব এক রাজনৈতিক দল।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা কাউকে বিব্রত করতে চাইনা। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা আমাদের সে শিক্ষা দেননি। আমরা কখনো একথা বলতে চাই না যে, ১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে কেন শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অথচ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর জেনারেল অরোরা মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে, তখনও বেগম জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার মৃত্যুতে বেগম জিয়া তো কোনো শোক প্রকাশ করেননি। তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে সরাসরি অংশ নেওয়া তৎকালীন মেজর জানজুয়ার মৃত্যুতে।'

'জিয়া পরিবারের সদস্যদের অনেক কীর্তি এদেশের মানুষ জানে' উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'বিএনপি নেতারা আজ সে প্যান্ডোরার বাক্সর উন্মুক্ত করতে উস্কানি দিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা এতটাই অন্ধ এবং ফরমায়েশ নির্ভর হয়ে গেছেন যে, দলের একজন নেতা মিথ্যাচার করলো, অশালীন কথা বললো, অথচ সিনিয়র নেতারা তার পক্ষেই সাফাই গাইলেন। আবার তারা সরকারকে মানবিক হওয়ার সবক দেন। এ দেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি। অকৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে মানবিকতা এবং সহিষ্ণুতার যে নজির স্থাপন করেছেন, তা সমকালীন বিশ্বে নজিরবিহীন।'

'আমি অশ্লীল বক্তব্য প্রদানকারী অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে ধরে নেব, এটা বিএনপির দলীয় বক্তব্য। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। আশা করছি বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus gives election preparation deadline

Complete polls preparations by December: Yunus

Asks to review if those who served as polling officers in past three elections shall not be assigned the same roles again

1h ago