বঙ্গবন্ধু সেতুর ৪৫ শতাংশ বিয়ারিংয়ে সমস্যা

বঙ্গবন্ধু সেতু। ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ৪৫ শতাংশ পট বিয়ারিংয়ে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে ভার স্থানান্তরের (লোড ট্রান্সমিশন) জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণগুলো বদলানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই সমস্যাকে সেতুর জন্য তাৎক্ষণিক কোনো হুমকি মনে না করলেও, ত্রুটিযুক্ত বিয়ারিং প্রতিস্থাপনে দেরি হলে তা ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বৃহৎ স্থাপনাটির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এর মধ্যে বিয়ারিং সরবরাহকারী ইতালিয়ান কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সেতু বিভাগ।

যমুনা নদীর ওপর দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুটি ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত অর্থনৈতিক স্থাপনা, যা সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সংযোগের মাধ্যমে রাজধানীকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে গত ২৪ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, পট বিয়ারিংগুলো সরবরাহ করেছিল ইতালীয় কোম্পানি এফআইপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল। সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়াল অনুসারে, এসব বিয়ারিংয়ের সার্ভিস লাইফ ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পট বিয়ারিং সেতুর জন্য বানানো বিশেষ এক ধরনের বিয়ারিং, যা মূল স্থাপনা (সুপারস্ট্রাকচার) থেকে পিয়ারে ভার স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। একই সঙ্গে সেতুতে যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট কম্পন কমিয়ে আনে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি)।

সিসিসিসির এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে ২৪ আগস্টের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, সেতুর ১১২টি বিয়ারিংপ্যাডের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তবে এর জন্য এই মুহূর্তে সেতুতে ঠিক কী ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত বলেন, সেতুতে ব্যবহৃত পট বিয়ারিংয়ের সার্ভিস লাইফ ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তার মতে, ৪৫ শতাংশ বিয়ারিংয়ে সমস্যা থাকলেও তা সেতুর জন্য তাৎক্ষণিক কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না।

তিনি বলেন, সমস্যাটি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিয়ারিংগুলোর সার্ভিস লাইফ শেষ হয়েছে এবং এগুলো অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করা দরকার।

তবে, সড়ক ও সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীর মতে, দেশের বেশিরভাগ সেতুর ক্ষেত্রে নিয়মিত ও পর্যায়ক্রমিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করা হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রকৌশলীর মতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ৪৫ শতাংশ বিয়ারিংয়ে সমস্যা থাকার বিষয়টিও নিয়মিত ও পর্যায়ক্রমিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকে নির্দেশ করছে।

তিনি আরও বলেন, বিয়ারিংগুলো সময়মতো প্রতিস্থাপন না করা হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।

দুই বিশেষজ্ঞই বলছেন, বিয়ারিং প্রতিস্থাপনের কাজটি খুবই টেকনিক্যাল। আর ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিংগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। যদিও সেতু সচল রেখেই পরিবর্তনের কাজটি করা সম্ভব।

সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক জানান, বিয়ারিং প্রতিস্থাপনের জন্য তারা এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতালীয় সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'যদি তারা (ইতালীয় কোম্পানি) বিয়ারিং সরবরাহ করতে না পারে, তাহলে আমরা অন্য উৎসের খোঁজ করব।'

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh energy import from Nepal

Nepal set to export 40mw power to Bangladesh via India today

Bangladesh has agreed to import electricity from Nepal for the next five years

53m ago