ভাতার টাকায় ‘প্যাট চলে না’ কান্দ্রি বালাদের

কান্দ্রি বালা। ছবি: স্টার

সরকারের বিধবা ভাতার সুবিধাভোগী কান্দ্রি বালার (৫৮) দিন কাটছে হতাশা আর দুশ্চিন্তায়। ঠিকমতো ২ বেলা ভাতও জুটছে না।

কিছুদিন আগ পর্যন্তও শ্রমিকের কাজ করে খাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ছিল এই বিধবার। এখন তা আর নেই। উপরন্তু মাঝে-মধ্যে ওষুধও কিনতে হয়। ভাতা হিসেবে যে ৫০০ টাকা তিনি পান, তা দিয়ে ১ সপ্তাহ চলাও কষ্টকর।

এ অবস্থায় এই নারী বলছেন, প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পাওয়া গেলে হয়তো একটু স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকতে পারতেন তিনি।

প্রায় ১০ বছর আগে মারা যাওয়া কান্দ্রি বালার স্বামী সুধীর চন্দ্র রায় দিনমজুর ছিলেন। তার নিজের জমি নেই। থাকেন ছেলের সংসারে। ছেলে সুধান চন্দ্র রায়ের পেশাও দিনমজুরি। পরিবারে সদস্য ৬ জন।

কান্দ্রি বালা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার হামাক ভাতা দিয়া উপকার করছে। হামাক যেইকনা ভাতার টাকা দ্যায় সেইকনা দিয়া হামার প্যাট চলে না। ভাতার টাকা ২০০০-২৫০০ হইলে হামরাগুলা বাঁচি থাকির পাইলোং হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'মুখোত তো মাছ-মাংস চড়ে না। ঠিকঠাক মতোন ভাতে খাবার পাঙ না। গাত আর শক্তি নাই। এ্যলা কাজ করির যাবার পাঙ না।'

কান্দ্রি বালার মতো একই অবস্থা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী খোদেজা বেওয়ার (৬৮)। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামারগুলার বাঁচার আর উপায় নাই। সরকার মাসে ৫০০ টাকা করি দ্যায়। তাক দিয়া হামার কিছুই হয় না।'

ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে মাঝে-মধ্যে ভিক্ষা করতেও বাধ্য হন খাদিজা। বলেন, 'প্যাটের ভোগ সহ্য কইরবার না প্যায়া মুই মাঝে-মধ্যে ভিক্ষা কইরবার যাঙ।'

ভাতার টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে খাদিজাও বলেন, 'সরকার যদি হামাক ২০০০-২৫০০ টাকা ভাতা দ্যাইল হয় তাক হইলে হামারগুলার কষ্ট ঘুচিল হয়।'

এ দিকে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সরকারেরহাট গ্রামের মিলন ইসলাম (২৪) প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রতি মাসে ভাতা পান ৭৫০ টাকা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই যুবক বলেন, 'হামরাগুলা চোখে দেখি না। কী কাম আর করমো? সরকার হামাক যে টাকা দ্যায়, তাক দিয়া ৭ দিনও চইলবার পাই না।'

এ কারণে মিলনও সরকারের কাছে ভাতার অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৯ জন এবং কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ২ লাখ ২৪ হাজার ৯৭০ জন সরকারের ভাতা পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ বয়স্ক ভাতাভোগী।

ভাতা হিসেবে প্রতিমাসে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা পান ৫০০ টাকা করে। প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয় ৭৫০ টাকা করে। এ ছাড়াও, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা পান ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এ বাদে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বিশেষ ভাতা হিসেবে ৬০০ টাকা এবং দলিত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ৫০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন।

এর বাইরে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত হিজড়া জনগোষ্ঠী এবং দলিত ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর সদস্যরা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ভাতা পান।

লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এ মতিনের ভাষ্য, সরকারের ভাতা প্রদান কার্যক্রম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছেন।

ভাতার অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা মনে করেন, 'এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। ভাতার টাকা বাড়লে অবশ্যই এর উপকারভোগীরা আরও ভালো থাকতে পারবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

10 ministries brace for budget cuts

The railway ministry, the power division, and the primary and mass education ministry will see the biggest chop.

9h ago