উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির অপেক্ষায় কৃষক, আমন চাষ ব্যাহতের শঙ্কা

বৃষ্টির অভাবে জমি খালি পড়ে আছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রাম থেকে তোলা ছবি। ছবি: স্টার

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রভাব পড়েছে আমন চাষে। পানির অভাবে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না। কৃষকেরা বলছেন, নষ্ট হচ্ছে বীজতলার চারাও।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছমির আলী বলেন, 'জুলাইয়ের শুরু থেকে আমরা জমিতে আমনের চারা রোপণ শুরু করি। কিন্তু এবার জমিতে পানি না থাকায় চারা রোপণ করা যাচ্ছে না।'

তিনি জানান, ১২ শতাংশ জমিতে বীজতলা করেছেন, কিন্তু পানির অভাবে চারাগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

রংপুর সদর উপজেলার লাহিড়ীহাট এলাকার কৃষক সন্তোষ চন্দ্র সেনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'এই সময়টায় সাধারণত বৃষ্টির পানিতে জমি ভরা থাকে। এবার বৃষ্টি নেই।

তিনি জানান, ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। 'আর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব। বৃষ্টি না হলে স্যালোমেশিনে পানি তুলেই চাষ করতে হবে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) জানান, 'জুলাই মাসে আমরা মাঠে চারা রোপণ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এখনো জমিতে হালচাষই করা হয়নি। তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি নাই। সময়মতো যদি চারা রোপণ না করতে পারি তাহলে ফলনও ভালো হবে না।'

বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে এক বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করেছেন রংপুরের মহিপুর এলাকার কৃষক আবদার হোসেন। জানান, এতে শুধু পানি সেচেই ১৫০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। তিনি আরও আট বিঘা জমিতে আমন লাগাতে চান।

'এভাবে খরচ বাড়লে লাভের মুখ দেখা কঠিন হবে,' বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ টন।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণে দেরি হচ্ছে। তবে জুলাই মাসজুড়ে আমন লাগানো যায়। সময়মতো রোপণ ও পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করা গেলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।'

তিনি জানান, 'বৃষ্টি না হলে বীজতলার চারাগুলো নষ্ট হতে পারে। তবে চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, যা কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পযর্বেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র রায় জানান, গেল তিন সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি এলাকায় বৃষ্টি হলেও তা সর্বোচ্চ ২ মিলিমিটার। আজ বুধবার রাত থেকে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

How Dhaka’s rickshaw pullers bear a hidden health toll

At dawn, when Dhaka is just beginning to stir, thousands of rickshaw pullers set off on their daily grind.

19h ago