ভেঙে পড়াটাই ছিল স্বাভাবিক
ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষদের ঘর তৈরি করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ উদ্যোগটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে অবাস্তব বাজেট, নিচু এলাকায় খাস জমি নির্বাচন, প্রকৌশল বিভাগকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ার কারণে।
উদ্যোগটির পেছনের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও পরিকল্পনাটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ জানুয়ারি ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রশংসনীয় উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন। গত ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় আরও ৫৩ হাজার পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়।
একটি রান্নাঘর, পেছনের দিকে একটি শৌচাগার ও সামনের দিকে একটি উঠানসহ দুই কক্ষের প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে এক লাখ ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
তবে সরকারি প্রকৌশলীদের মতে, প্রকল্পের প্রতিটি ধাপেই ত্রুটি হয়েছে। জমি নির্বাচন, নির্মাণ শুরুর আগে মাটি প্রস্তুতি, বাজেট নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা এবং নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে রঙ শুকানো পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ধাপেই ত্রুটি দেখা গেছে।
উপর মহল থেকে আসা অনেক পুনর্বাসন প্রকল্পের মত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই প্রকল্পটিও গৃহহীনদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে একই ভুল করেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমিরূপ ও নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও কিছু ত্রুটিপূর্ণ, গড়পড়তা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ২২টি জেলার ২৪টি উপজেলায় এই প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর সরাসরি তদন্ত করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অন্তত ১০টি জেলার প্রকল্পে নির্মাণ সংক্রান্ত ত্রুটি ছিল, যার মধ্যে বাড়ি ধসে পড়ার অভিযোগ অন্যতম।
প্রথমে ভূমি নির্বাচন নিয়ে কথা বলা যাক। প্রায় সব জায়গায় বালু ও পলিমাটি দিয়ে ভরাট করে নিচু জলাজমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) প্রকৌশল শাখার সূত্রগুলো জানায়, মাটিকে সংহতকরণ (কম্প্যাকশন) করা হয়নি, যার অর্থ হচ্ছে বাড়িগুলোকে যে মাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেটি স্থিতিশীল নয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া লিখিত নির্দেশিকায় (যেটি প্রকল্পের ওয়েবসাইটেও দেওয়া আছে) পরিষ্কারভাবে মাটি সংহতকরণ প্রক্রিয়াটিকে আবশ্যিক করা হয়েছে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে নির্মাণ করা বাড়িগুলো গৃহহীনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ছয় মাসের মাথায় এক তৃতীয়াংশ বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শরীয়তপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাহমিনা আখতার আমাদের সংবাদদাতাকে নিশ্চিত করেন, নিচু এবং সঠিকভাবে ভরাট করা হয়নি এরকম জমিতে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
'যেখানে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে তার পেছনে জয়ন্তী নদী ও সামনে একটি খাল রয়েছে। এখানে বৃষ্টি হলেই মাটি সরে যায়। বৃষ্টির পানি বাড়লে জায়গাটি তলিয়ে যায়। পানি নেমে গেলে মাটি দেবে যায়', জানান তাহমিনা।
একইভাবে, বগুড়ার শেরপুরে নির্মাণ করা এক তৃতীয়াংশ ঘরে ফাটল ধরেছে এবং বর্ষাকালে এর অনেকগুলো আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।
শেরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিচু জমি ভরাট করে তারা নির্মাণকাজ চালান।
'এখন বৃষ্টিতে মাটি ক্ষয় হয়ে খালের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এর ফলে সাতটি শৌচাগার ও কয়েকটি বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়েছে', জানান তিনি।
প্রথিতযশা স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, বাংলাদেশে পাঁচ ধরণের মাটি আছে এবং বাড়ি বানানোর সময় এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
'যে খাস জমিতে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো এলাকার সবচেয়ে নিম্নমানের জমি। এ ধরনের জমিতে কোন অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে সেটিকে মাটির গুণগত মানকে বিবেচনায় রেখে নির্মাণ কাজ চালাতে হবে। এই প্রকল্পে প্রতিটি উপজেলার ক্ষেত্রে হুবহু একই নির্মাণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে', বলেন তিনি।
কেন তাহলে ঘর তৈরির আগে মাটি প্রস্তুত করা হয়নি?
এখানে চলে আসে বাজেট প্রসঙ্গ। প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই বাজেটের ঘাটতি ছিল।
গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা টাকার পরিমাণ তাদের ২০১৮ সালের মূল্য সূচকের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা উল্লেখ করেন, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত প্রকল্পের নকশায় দেখা গেছে প্রতি বর্গ ফুট শূন্য দশমিক ৩৬ মিলিমিটার মোটা ঢেউটিন কেনা, পরিবহন করা ও বসানোর জন্য ৪৬৪ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এই মানের প্রতি বর্গ ফুট ঢেউটিনের খরচ ৬০০ টাকা।
ইকবাল হাবিব জানান তিনি বাজেটটি দেখেছেন এবং তার মতে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
তিনি জানান, 'ঘটনাচক্রে আমি এই বাড়িগুলোর নকশা দেখেছি। আনুষঙ্গিক সবকিছুসহ নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য কমপক্ষে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল।' কিন্তু প্রতিটি বাড়ির জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৯০ হাজার টাকা।
ফলশ্রুতিতে শরীয়তপুরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের নিজেদের তহবিলের টাকা খরচ করে মাটি প্রস্তুত করতে হয়েছে।
তাহমিনা জানান, 'আমাদেরকে জমি ভরাট করার জন্য নিজেদের বাজেট খরচ করতে হয়েছে, কারণ বরাদ্দ করা টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল।'
'কিন্তু যেহেতু আমাদের ওপর সরকারি নির্দেশ ছিল, আমাদেরকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে', জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) প্রতিটি বাড়ির জন্য প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উভয় পর্যায় মিলে ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঠিকমত মাটি প্রস্তুত না করার কারণে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে বিপর্যয় ঘটে। বর্ষাকালে সেখানে ২১টি ঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে গেলে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। মে মাস থেকে তারা সেখানে থাকতে শুরু করেছিলেন।
সরিষাবাড়ি উপজেলা পরিষদের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন পাঠান বলেন, 'জমি নির্বাচনের আগে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল, কারণ প্লাবনের সময় স্থানীয় নদীটির পানি দুই কূল ছাপিয়ে যায়।'
বাজেট ঘাটতির কারণে নির্মাণকাজও ঠিকমত করা হয়নি। কংক্রিটের কাঠামোর পরিবর্তে বাড়িগুলো শুধু ইটের গাঁথুনির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে।
আমাদের বরিশাল সংবাদদাতা জানান, মেহেন্দিগঞ্জে কংক্রিটের পরিবর্তে শুধু ইট ব্যবহার করায় ১৪টি বাড়ি ধসে পড়েছে। ভোলার লালমোহনে ১২টি বাড়ি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।
প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর জোয়ারে মেহেন্দিগঞ্জ প্লাবিত হয়। বাড়িগুলো নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছিল। কংক্রিটের কাঠামো না থাকায় ইটের দেয়ালগুলো ধসে পড়ে।
আমাদের সংবাদদাতা জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রতিটি বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকা, কিন্তু সেখানে এই আকারের বাড়ি বানানোর খরচ প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো।
বরগুনার আমতলীতে আবুল কালামের নতুন বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ১২টি জায়গায় ফাটল ধরে। বাড়ির সামনের পিলারটি ভেঙে পড়ার পর সবাইকে সেখান থেকে সরে যেতে হয়।
আমতলিতে গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ করা ৪৫০টি বাড়ির মধ্যে কমপক্ষে ১০০টির কাঠামোতে সমস্যা দেখা দেয়, কারণ সেগুলোতে কোন লিনটেল নির্মাণ করা হয়নি। লোহার রড ও কংক্রিট দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে তৈরি করা বিমগুলোকে লিনটেল বলা হয়, যেগুলো বাড়িকে মাটির ওপর দৃঢ়ভাবে বসে থাকতে সাহায্য করে।
দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতাকে নির্মাণকর্মীরা জানান, খরচ বেশি হওয়ায় তারা লোহার রড ব্যবহার করতে পারেননি।
নির্মাণকর্মীরা আমতলীর ইউএনও মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে জানিয়েছিলেন, লিনটেল ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করা হলে সেটি ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাদেরকে নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়।
৫ জুলাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ইউএনও মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে।
এ যাবত এই প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত প্রশাসন ক্যাডারের পাঁচ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আছেন সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুরের ইউএনও শফিকুল ইসলাম, বগুড়ার শেরপুরের সাবেক ইউএনও লিয়াকত আলি শেখ, মুন্সিগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও রুবায়েত হায়াত এবং মুন্সিগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বাজেট ঘাটতির কারণে কর্মকর্তারা বাড়িগুলোর মেঝে নির্মাণের সময় প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করেননি।
এই মুহূর্তে মুন্সীগঞ্জের নয়াশংকর গ্রামের আটটি বাড়ির প্রতিটির মেঝে নতুন করে ঢালাই করতে হচ্ছে। সেগুলোতে আগে তিন ইঞ্চির পরিবর্তে এক ইঞ্চি ইটের স্তর দেওয়া হয়েছিল।
মেরামতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ মফিজ দেওয়ান বলেন, আগের নির্মাণকর্মীরা দায়সারা কাজ করেছেন।
'ঢালাইয়ে সিমেন্টের পরিমাণ খুবই কম ছিল, যার কারণে বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে মেঝেগুলো আবারও ঢালাই করা হচ্ছে।'
বরাদ্দকৃত বাজেটের পুরো অংশ নির্মাণকাজে ব্যয় হয়ে যাওয়াতে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিয়েছেন।
বাজেট ঘাটতি নিয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আপনি বাস্তবায়নকারীকে বাজেটের ব্যাপারে প্রশ্ন করছেন। আপনার উচিত যারা এ প্রকল্পের কারিগরি ব্যাপারগুলো নির্ধারণ করেছেন, তাদেরকে প্রশ্ন করা।'
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের নীতিমালাটি গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তবায়নের জন্য খুব কম সময় রেখে, প্রায় ৭০ হাজার বাড়ির মালিকানা এ বছরের জানুয়ারিতে হস্তান্তর করা হয়।
গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা ভেঙে পড়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ করার জন্য বড় ধরনের চাপ আসে। এ কারণে সিমেন্ট ও ইটের গাঁথুনি ঠিকমত বসানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি।
ইটের কাজ, প্লাস্টার ও রঙ করার কাজগুলো সব একসঙ্গে চলছিল। সাধারণত প্রতিটি স্তরের কাজ শেষ করে সেটিকে জমাট বাঁধার জন্য কিছুদিন রেখে দেওয়া হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি।
ফলশ্রুতিতে, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় নির্মিত ১০১টি বাড়ির প্রতিটিতে দেয়াল, মেঝে ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাসুদেবপুর গ্রামের খাস জমিতে নির্মিত বাড়িগুলোর কাজ মার্চে শেষ হয়।
খামখেয়ালিপূর্ণ নির্মাণকাজ এবং একাধিক জেলায় স্থানীয় ভূমিরূপ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব পরিকল্পনাটির অন্য একটি বড় ত্রুটির দিকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, যেটি হচ্ছে পুরো প্রকল্পে কোনো পর্যায়ে প্রকৌশলীদের কোনো ধরনের উপস্থিতি না থাকার ব্যাপারটি।
গণপূর্ত বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত ছিলেন শুধুমাত্র ইউএনও এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা।
ইকবাল হাবিব বলেন, 'সরকার তার প্রশাসনিক বিভাগকে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত করে এবং এক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা কোনো ধরনের নিরীক্ষণ চালাননি।'
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় নির্মিত বাড়িগুলোর এক তৃতীয়াংশকেই আবারও নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে, কারণ বাড়িগুলোর উচ্চতা কোনক্রমে সাত ফুটও ছুঁতে পারেনি। প্রকল্পের নকশা ও নির্দেশনা অনুযায়ী, বাড়িগুলোর উচ্চতা কমপক্ষে সাড়ে আট ফুট হতে হবে।
প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়ায় প্রায় ৩৭২টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০০টিতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, 'নির্মাণকাজ খুব দ্রুত শেষ করতে হয়েছে এবং আমরা প্রতিটি জায়গা সঠিকভাবে নিরীক্ষণ করতে পারিনি।'
বরগুনার আমতলীতে ইউএনও আসাদুজ্জামান প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে একজন উপজেলা প্রকৌশলীকে রেখেছিলেন, কিন্তু তাকে একদিনও কাজ করতে হয়নি।
প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের সংবাদদাতাকে জানান, 'আমি বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ সম্পর্কে কিছুই জানি না। কালেভদ্রে ইউএনও আমার কাছে কয়েকজন লোককে পাঠিয়েছিলেন যারা আমাকে মিটিং আছে জানিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।'
দ্য ডেইলি স্টার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেনের সঙ্গে অনেকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
তবে তিনি ১০ জুলাই বগুড়ার শেরপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি ব্রিফিংয়ে জানান তারা শিগগির প্রয়োজন অনুযায়ী মেরামতের কাজ শুরু করবেন।
দ্য ডেইলি স্টার তার সহকারী জাহেদুরের কাছে এই মেরামতের কাজের জন্য বাজেটের উৎস সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি জানান, 'গাইড ওয়াল (অবকাঠামোকে আরও শক্ত করার জন্য ব্যবহৃত) নির্মাণের জন্য আমাদের কিছু বাজেট বরাদ্দ আছে। অন্যান্য মেরামতের কাজগুলো স্থানীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল এবং তারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।'
তবে ইকবাল হাবিব বলেন, 'প্রকৌশলীদের এর সঙ্গে সংযুক্ত না করা পর্যন্ত আমি এই মেরামতের কাজকে সমর্থন করি না। এই বাড়িগুলোকে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অবকাঠামোগত প্রত্যয়ন পেতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে যদি বাড়িগুলো ধসে পড়ে আর কোনো প্রাণহানি হয়, সেক্ষেত্রে সরকারকে তার দায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্দশায় পড়া মানুষদের আবাসনের জন্য প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। বর্তমানে চলমান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের আবাসন দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯ট পরিবারের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
[এই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহায়তা করেছেন আমাদের গাজীপুর, শরীয়তপুর, বগুড়া, বরিশাল, জামালপুর, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, এবং ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতারা]
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments