মরিয়মরাও ঈদ করবে
প্রতিদিন অন্য শিশুদের সঙ্গে ট্রেনের বগিতে প্লাস্টিকের বোতল কুড়াত মরিয়ম। তবে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া স্টেশনে যখন ঢুকছিল চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে যায় ৯ বছরের মরিয়ম। ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে ডান পায়ের নিচের অংশ।
ট্রেন চলে যাওয়ার পর আশেপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মরিয়মকে উদ্ধার করে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে।
একটি ট্রেন দুর্ঘটনা মরিয়ম ও তার পরিবারের মুখের হাসি কেড়ে নেয়। দিনমজুর মা-বাবা কীভাবে চিকিৎসা করাবেন সন্তানের তাই নিয়ে দিশেহারা। তবে শিশুটির পাশে দাঁড়ান দেশ–বিদেশের নানা পেশার মানুষ।
হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়ে কিছুদিন আগে মরিয়ম ফিরেছে তার ঠিকানা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশনে।
এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ যখন ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরানো মরিয়মদের ঘরে হাহাকার। তবে গত শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মুখে হাসি ফুটেছে মরিয়মের মতো ৫০টি পথশিশুর মুখে।
কুলাউড়ার জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের সম্মুখে গত শুক্রবার ইফতারের আগে পৌরশহরের এমনই ৫০ জন পথশিশুর মধ্যে ঈদের উপহার হিসেবে একটি ঝুঁড়িতে পোলাও চাল ২ কেজি, সেমাই ২ প্যাকেট, ময়দা ১ কেজি, চিনি ১ কেজি, সয়াবিন তেল ১ লিটার, গুড়ো দুধ ৫০০ গ্রাম, হালিম মিক্স ১ প্যাকেট, নুডুলস ১ প্যাকেট, ডাল ১ কেজি, মাল্টা ৩টা, আপেল ৪টা, আনারস ২টা, তরমুজ ১টা, গরম মসলা, সাগু ৫০০ গ্রাম, সুজি ৫০০ গ্রাম, বাদাম, বিস্কুট ১ প্যাকেটসহ একটি ঝুড়ি তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ঈদের মুহূর্তে তাদের মুখে যেন হাসি ফুটে সেটাই চেষ্টা করেছি। আগামীতেও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন। কাউকে পেছনে ফেলে ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায় না। এজন্য আমাদের এই আয়োজন।
মরিয়ম জানায়, ঈদ আসছে কিন্তু কিছু তো ছিল না আমাদের। তাই খুব চিন্তায় ছিলাম। ঈদ উপহারগুলো মা-বাবাকে দিয়েছি। মা তো এসব দেখে কেঁদেই ফেলেছে।
মরিয়মের মা আম্বিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'জগতে ভালা মানুষ আছে। এর লাগি আমরা ঈদটা করতে পারব। কারণ আমরার থাকার ছুপরিত এক কেজি চাউলও আছিল না।'
Comments