মেট্রোরেলের টেস্ট রান রোববার

দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প নতুন একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে আগামী রোববার। এদিন মূল ট্র্যাকগুলোতে একটি মেট্রো ট্রেনের টেস্ট রানের প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রোববার মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেটটি প্রথমবারের মতো ডিপো থেকে বেরিয়ে আসবে এবং এলিভেটেড রেল ট্র্যাকে চলবে। প্রকল্প এলাকার বাইরে থেকে নগরবাসী এটি দেখতে পাবেন।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, 'ডিপোর ভেতর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২৯ আগস্ট ভায়াডাক্টে প্রথম মেট্রো ট্রেনের পারফরম্যান্স পরীক্ষা শুরু হবে।'

গতকাল তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা পারফরম্যান্স পরীক্ষার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আগামী দুদিনের মধ্যে পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাব।'

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার সকাল ১০টায় 'ভায়াডাক্টে চলাচলকারী সর্বপ্রথম মেট্রো ট্রেনের আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী' অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান এমএএন সিদ্দিক।

অবশ্য, নগরবাসীকে এ মেট্রো ট্রেনে চড়তে এক বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কাজে দেরি হয়ে যাওয়ায়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কিছু পরিকল্পনা সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায়, অন্তত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইনটি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করতে চাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোরেল ব্যবস্থা মাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে।

কাজ সম্পন্ন হলে, ১৬টি স্টেশনের মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার জনকে বহন করতে সক্ষম হবে। ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়ার সময় কমে প্রায় ৪০ মিনিট হয়ে যাবে। বর্তমানে এ পথ পাড়ি দিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পটির সামগ্রিক অগ্রগতি ছিল ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রথম ধাপে অগ্রগতি ছিল ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, ট্র্যাক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং গাড়ি কেনায় ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেট গত ২১ এপ্রিল ঢাকায় এবং এর দুদিন পর ডিপোতে পৌঁছায়। এসব ট্রেনের প্রতিটিতে ছয়টি গাড়ি রয়েছে, যা একবারে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জনকে বহন করতে পারে। এগুলো জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তৈরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেনটি গত ১১ মে রাজধানীর দিয়াবাড়ি ডিপোর ভেতর পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বর্তমানে দেশের সব ট্রেন ডিজেল দিয়ে চলে।

সেদিন থেকে কর্তৃপক্ষ পারফরম্যান্স পরীক্ষা শুরু করার পর ডিপোর ভেতর এমন পরীক্ষা চলতে থাকে। এ ছাড়া, গতি পরীক্ষার জন্য একটি টেস্ট ট্র্যাকেও ট্রেনটি চালানো হয়।

এরপর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ উত্তরা, পল্লবী এবং মিরপুর-১১ তে অবস্থিত প্রথম পাঁচটি স্টেশনকে পারফরম্যান্স পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুত করতে বলে।

তবে কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, পল্লবী স্টেশনে টার্নআউট পয়েন্ট থাকায়, পারফরম্যান্স পরীক্ষা করা হবে আসলে প্রথম চারটি স্টেশন নিয়ে। মিরপুর-১১ স্টেশনটিও প্রস্তুত করার কারণ হচ্ছে, পল্লবী স্টেশনে পৌঁছানোর পর ট্রেনটি ওই স্টেশনের পাওয়ার সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পাবে।

ট্রেনটি চারটি স্টেশনের মধ্যে ধীরগতিতে চলবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এর মধ্যে, প্যাকেজ তিন ও চার ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট নির্মাণের জন্য। এ ছাড়া, প্যাকেজ সাত বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার রাখার জন্য এবং প্যাকেজ আট রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো সরঞ্জাম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ চারটি প্যাকেজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পারফরম্যান্স পরীক্ষা সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ২৪টি মেট্রো ট্রেনের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারটি দেশে পৌঁছেছে।

রোববারের কর্মসূচি সফল করতে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ গতকাল এমএএন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আটটি প্যাকেজের পরামর্শদাতা এবং টিমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে

গত ১১ মে ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এমএএন সিদ্দিক জানান, ভায়াডাক্টে রেল ট্র্যাকের পারফরম্যান্স পরীক্ষার পর তারা ইন্টেগ্রিটি পরীক্ষার দিকে যাবেন। সবকিছুর সিঙ্ক্রোনাইজেশন সঠিকভাবে হয়েছে কি না এবং সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের জন্য প্রস্তুত কি না, তা ওই টেস্ট রানের সময় যাচাই করা হবে।

বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ছয় মাস থেকে এক বছর, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লেগে যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সার্ভিস চালু করার আগে কর্তৃপক্ষ একটি পরীক্ষামূলক চলাচলের ব্যবস্থা করবে।

'যাত্রী নিয়ে ও যাত্রী ছাড়া—দুই ধরনের টেস্ট রান সম্পন্ন করতে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে', যোগ করেন তিনি।

মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রকৃত সময়সীমা ২০১২-২০২৪ সাল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০১৯ সালের মধ্যে এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২০ সালের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দেন।

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালের মে'তে কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল সেবা চালু করা হবে। কিন্তু, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি বছরের জুনে তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে যাত্রী পরিবহন চালু করার কার্যক্রম চলছে।

গত ৩০ জুলাই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে অংশ নিয়ে এমএএন সিদ্দিকও বলেন, 'আমরা আশা করি, ঢাকা শহরবাসী ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ ব্যবহার করতে পারবেন।'

গতকাল এ প্রতিবেদক মেয়াদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে এমএএন সিদ্দিক বলেন, ওই সংক্রান্ত তথ্য সেতুমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago