‘যতো দুর্ভোগ সব আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের’

পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর গতরাত থেকেই গাজীপুরের সড়ক মহাসড়কে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজ শনিবার ভোরের পর থেকে এ ভিড় আরও বাড়তে থাকে।
গণপরিবহন না থাকায় পায়ে হেঁটে, ব্যাটারি-সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপে করে যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন। ছুটে চলা এসব মানুষের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি।
এসব মানুষের অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে জড়ো হয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন। অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। হালকা গণপরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাক, পিক-আপে তাদেরকে গাদাগাদি করে বসতে দেখা গেছে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।

শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, হোতাপাড়া, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা, জৈনাবাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী, চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসস্ট্যান্ডের খবর নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রায় একযোগেই গাজীপুরের সীমানায় প্রবেশ করছেন।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভূবনকোঁড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার মণ্ডল গার্মেন্টস লিমিটেডের অপারেটর।
তিনি বলেন, 'শুক্রবার রাতে মানুষের মুখে সব কারখানা খুলে দেওয়ার খবর পেয়েছি। পরে শনিবার ভোরেই বাসা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। শ্রীপুরের জৈনাবাজার পর্যন্ত পৌঁছতে বেলা সাড়ে ১০টা বেজেছে। পথে পরিবহন খরচ হয়েছে দুই হাজার ৯০ টাকা। যেতে হবে আরও ২০ কিলোমিটার পথ। কীভাবে যাব তা নিয়েই ভাবছি। এদিকে, হাতে যে টাকা-পয়সা ছিল তাও শেষের দিকে। বাসায় গিয়ে আবার চাল-ডাল কেনার চিন্তা আছে। ভাবতে পারছি না।'

জামালপুর জেলার চিকাজানী গ্রামের নজরুল ইসলাম স্ত্রীসহ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আমানটেক্স লিমিটেডে অপারেটর পদে চাকরি করেন।
তিনি বলেন, 'সহকর্মীদের কাছে রোববার কারখানা খোলার খবর পেয়েছি। ভোর ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। পথে পথে পুলিশের গাড়ি আটকিয়ে দেওয়া, কোনো গণপরিবহন না পাওয়াসহ নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। অবশেষে পণ্যবাহী ট্রাকযোগে সকাল ১১টার দিকে জৈনাবাজার পর্যন্ত এসেছি। সেখানে পুলিশ চেকপোস্টে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি ১৫ কিলোমিটার পথ যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অনেককে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যেতে দেখছি। কিন্তু ভাড়া তিন থেকে চারগুণ বেশি নিচ্ছে।'
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা গ্রামের সাদেক হোসেন জানান, তিনি শনিবার ভোর ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো হালকা যানবাহন আবার কখনো পণ্যবাহী যানবাহনে বেলা পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছান। যেতে হবে টঙ্গী মিলগেটে।

তিনি বলেন, 'কারখানা খোলা অথচ গাড়ি-ঘোড়া চলে না, এ কেমন পরিবেশ। যতো দুর্ভোগ সব আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের। কারখানায় কাজে যোগ না দিলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় আছে। সপরিবারে এ পর্যন্ত আসতে আমার আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে।'
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাজারো শ্রমিক আসছে। শুক্রবার রাত থেকেই পোশাক শ্রমিকদের কিছুটা চাপ দেখা গেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। পরিবহন বন্ধ। এরমধ্যে যে কয়েকটা ছোট ছোট পরিবহন সড়কে আছে, সেখানে ভিড়ের জন্য পা ফেলা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। মাইকিং করছি, হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। আজকের পর ভিড় থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।'

গাজীপুরের কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, 'কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় হঠাৎ করে মহাসড়কে হালকা তিন চাকার যানবাহন, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপসহ মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে, অননুমোদিত যানবাহন বন্ধে প্রতিদিন মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ সক্রিয় আছে। এগুলো আটক করে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে পার হয়ে যাচ্ছেন।'
Comments