রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে কেন এতো ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট

রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নিয়ে করা সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হলে সেখানে অনেকেই প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন ধরেনর রিঅ্যাক্ট দেন। এর মধ্যে রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নিয়ে করা সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হলে সেখানে অনেকেই প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন ধরেনর রিঅ্যাক্ট দেন। এর মধ্যে রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে 'হা হা' রিঅ্যাক্ট দেওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

দ্য ডেইলি স্টারের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিভিন্ন সময় রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নিয়ে করা সংবাদ শেয়ার করা হয়। দেশের প্রধান ২টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে পাঠকের প্রতিক্রিয়া হিসেবে 'হা হা' রিঅ্যাক্ট কেমন ব্যবহৃত হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। 

এ ক্ষেত্রে প্রধান ২টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য নিয়ে শেয়ার করা সংবাদের ১০টি করে মোট ২০টি পোস্ট বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্যে মোট ৫১ হাজার ৮০ রিঅ্যাক্ট পড়েছে। তার মধ্যে 'হা হা' রিঅ্যাক্টের সংখ্যা ৩১ হাজার ৩৩৩। যা মোট রিঅ্যাক্টের ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

অপর আরেকটি দলের নেতার বক্তব্যে মোট ৩৮ হাজার ৪৬১ রিঅ্যাক্ট পড়েছে। যার মধ্যে 'হা হা' রিঅ্যাক্ট ৫ হাজার ৫৩৯টি। যা মোট রিঅ্যাক্টের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

এই 'হা হা' রিঅ্যাক্টের অর্থ কী এবং রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে কেন এই রিঅ্যাক্ট, তা জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে জার্মান মনোবিজ্ঞানী হ্যান্স ওয়ারনার ম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমদের সঙ্গে।

তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, যখন কোনো কিছু মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনে হয়, হাস্যকর মনে হয়, তখন এই রিঅ্যাক্ট ব্যবহৃত হয়।

জার্মান মনোবিজ্ঞানী হ্যান্স ওয়ারনার ম্যান বলেন, 'যখন কোনোকিছু বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, তখন এই হা হা রিঅ্যাক্ট ব্যবহার করা হয়। এই রিঅ্যাক্ট ব্যবহারের অর্থ হলো যে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়া।'

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতি একটি হাস্যকর, স্থূল ও কৌতুকের জায়গায় চলে গেছে। মানুষ এটি আর গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না। একটি গুরুত্বহীন বিষয় হিসেবে মনে করার কারণে রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে হা হা রিঅ্যাক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'কৌতুক শুনলে যেমন আমরা হা হা করে হাসি, তেমনি অনেক রাজনীতিবিদের কথা শুনেও মানুষ হা হা করে হাসে। মানুষ রাজনীতিবিদদের কথা আর বিশ্বাস করতে চায় না। তাদের কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় না। তাদের কথাগুলো সবাই হাস্যকর মনে করেন। তারা মনে করে যে রাজনীতিবিদরা এসব কথা সিরিয়াসলি বলে না। তারা গালভরা বুলি বলে, গালভরা প্রতিশ্রুতি দেন। রাজনীতি এখন বাগাড়ম্বর পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারা যা বলে, নিজেরাও তা বিশ্বাস করে না। রাজনীতিবিদদের কথায় মানুষ কোনো সত্য খুঁজে পায় না।'

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার এই শিক্ষক মনে করেন, 'অধিকাংশ রিঅ্যাক্ট তরুণরা দিচ্ছেন। তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক বিমুখতা কাজ করছে। তাদের কাছে রাজনীতি এখন হাস্যকর জায়গায় চলে গেছে। এই কারণে তারা এই হা হা রিঅ্যাক্ট দেন। এই রিঅ্যাক্টের এই অর্থ হলো হাস্যকর কিছু।'

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের আশা-ভরসা, আস্থার জায়গা খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতিবিদদের অনেক বক্তব্যকে মানুষ বিতর্কিত মনে করেন। কারণ তারা মুখে যা বলেন, বাস্তবে তা মেলে না। সব দলের ক্ষেত্রে এমন হয়। এ কারণে তাদের কথাগুলোর প্রতি হা হা রিঅ্যাক্ট দেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।'

রাজনীতির প্রতি মানুষের এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে এই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, 'রাজনীতিবিদদের কথার প্রতি এখন আর মানুষের সম্মান নেই। দেশেও সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা নেই। বিভিন্ন কারণে রাজনীতিকে মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।'

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'তবে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আদব-কায়দার সঙ্গে পরিচিত না। এটি ব্যবহারের যে কিছু নিয়মকানুন আছে, অনেকেই তা জানে না। সেকারণেই অনেকেই এমন হা হা রিঅ্যাক্টসহ অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট করে থাকে।'

'অনেক সময় আবার একজন হা হা রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন বলে আরেকজন দিয়ে দেন। হা হা রিঅ্যাক্টের অর্থ হলো তাচ্ছিল্য করা, হাসিরপাত্র মনে করা, সেই কথায় হাসির কারণ ছাড়া আর কিছু না থাকা', যোগ করেন তিনি।

Comments