ক্যানসারের চিকিৎসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি আমরা পালন করেছি: প্রধানমন্ত্রী

মানুষের সেবা করাটাই আওয়ামী লীগের বড় কাজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হার্ট, কিডনি ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৮ সালে আমরা উল্লেখ করেছিলাম। সেসব প্রতিশ্রুতি আমরা পালন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)। ছবি: পিআইডি

মানুষের সেবা করাটাই আওয়ামী লীগের বড় কাজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হার্ট, কিডনি ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৮ সালে আমরা উল্লেখ করেছিলাম। সেসব প্রতিশ্রুতি আমরা পালন করেছি।

আজ রোববার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ে ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি বলেন, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে আমরা উদ্যোগ নেই কীভাবে এ দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। সে কথা চিন্তা করেই আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার। প্লাস-মাইনাস ৬ হাজার মানুষ যাতে চিকিৎসা নিতে পারে সে কথা মাথায় রেখে সমগ্র দেশব্যাপী ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেই। ১১ হাজার ভবন আমরা করে ফেলি, ৪ হাজার চালু হয়ে যায়। চালু হওয়ার ১ বছর পরে পরীক্ষাও নেওয়া হয়। দেখা যায়, আমরা ৭০ ভাগ সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিএনপি-জামায়াত যখন ২০০১ সালে সরকারে আসে তখন এই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। তাদের বন্ধ করার একটা উদ্দেশ্য ছিল যেটা তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক যদি চালু থাকে তাহলে ওই অঞ্চলের মানুষ নাকি নৌকায় ভোট দেবে। সে জন্য এটা বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ তাদের রাজনৈতিক স্পৃহা বড় হয়ে যায়, মানুষের সেবাটা না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এটাই হচ্ছে বড় তফাৎ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারে এসে আবার তা চালু করেছি। ৯৬ সালে প্রথমবারের মতো আমরা একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করি। অধিক জনসংখ্যার একটি দেশ, এখানে নীতিমালা থাকার দরকার। বাংলাদেশে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা প্রতিষ্ঠা করি। যদিও প্রতষ্ঠা করতে গিয়ে সেখানেও বিএনপি অনেক বাধা দেয়। তারপরও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসাক্ষেত্রে গবেষণা ও মানুষের সেবার ব্যবস্থা আমরা করে দেই।

ক্যানসার, কিডনি, নিউরোসহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউটগেুলো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যখন আমরা কাজ শুরু করি, বিএনপি আসার পরে সেগুলো যে আমরা করেছি সেসব কথা ফেলে দিয়ে বন্ধ করে দেয় কিছু, নিজেদের মতো করার চেষ্টা করে। কার্যকরভাবে কোনোটাই তারা চালু করেনি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আমরা পুষ্টি নীতিমালা গ্রহণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। বাংলাদেশ প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে, খাদ্য-পুষ্টি ও চিকিৎসা সেবা—এই সেবাটা আমরা যখন দেওয়া শুরু করি, তার ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু উন্নীত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে ছিল মাত্র ৫৮ দশমিক ৭ বছর, সেটা ৫ বছরে বেড়ে ২০০১-এ গড় আয়ু ৬৩তে উন্নীত হয়। অবশ্য এখন ৭২-এর উপরে আমাদের গড় আয়ু, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে সেই ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম। এখন কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়া যাচ্ছে এবং একেবারে উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও ওয়েব ক্যামেরা আমরা দিয়ে দেই, বিশেষায়িত চিকিৎসকের পরামর্শ যেন নেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। আরও ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ আমরা হাতে নিয়েছি। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হার্ট, কিডনি ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৮ সালে আমরা উল্লেখ করেছিলাম। সেসব প্রতিশ্রুতিও আমরা পালন করেছি।

আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি, ১৩ বছরে ১২টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১১টি বিশেষায়িত হাসপাতালকে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা সেখানে সম্পূর্ণ আধুনিক একটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। প্ল্যানটাও করে ফেলেছি। সেখানে প্রায় ৫ হাজার রোগী একসঙ্গে যাতে চিকিৎসা পায় এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাগুলোও যেন সেখানে পায় তার ব্যবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য আমরা তৈরি করেছি। আশা করছি, শিগগির এর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবো। তবে এটা বাস্তবতা যে আমরা সম্পূর্ণভাবে মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে করতে পারবো না। আমাদের ধাপে ধাপে একেকটা উইং আলাদাভাবে করতে হবে যাতে রোগীর চিকিৎসা চলে আবার উন্নয়নের কাজটাও চলতে পারে। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ একেবারে শিশু এবং বয়োঃবৃদ্ধ যারা, তাদের চিকিৎসা সেবাটা যাতে বিনামূল্যে দেওয়া যেতে পারে সে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ বিনা পয়সায় টিকা দেয় না। অনেক উন্নত দেশও দেয় না। বাংলাদেশে আমরা কিন্তু ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দিচ্ছি। কারণ মানুষের সেবা করাটাই আমাদের বড় কাজ। এ জন্য বাজেটে আলাদাভাবে আমরা টাকাও বরাদ্দ রেখে দিয়েছি এবং যত টাকাই লাগুক আমাদের এ কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রম থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রধানমন্ত্রী মাস্ক ব্যবহার, জনসমাগম এরিয়ে চলা, বড় সমাবেশ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।

চিকিৎসা গবেষণায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। এর মূল উদ্দেশ্যটা হলো, চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গবেষণা করা। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে গবেষণা অপরিহার্য। আমি সবাইকে উৎসাহিত করছি, আহ্বান করছি। অনেকে খুব ভালো গবেষণা করে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ যারা নামি-দামী চিকিৎসক হয়ে যান, তারা চিকিৎসা সেবা দিতেই ব্যস্ত থাকেন। কিছুটা সময় যদি আপনারা ব্যয় করেন, গবেষণার দিকে নজর দেন, আমাদের দেশের পরিবেশ-আবহাওয়া-জলবায়ু মিলিয়ে এ দেশের মানুষের কী ধরনের রোগ দেখা যায়, কীভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় সেটা কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Heat stress jeopardises dairy industry

There are around 2.5 crore cows and 13 lakh to 14 lakh farmers in the country. Of the farmers, 3.5 lakh own large farms, according to the Dairy Farm Owners Association in Bangladesh.

1h ago