চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলনের ১ মাসেও কমিটি হয়নি
চট্টগ্রামে যুবলীগের ৩টি সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এসব ইউনিটের কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন বলে জানান যুবলীগের অনেক নেতা।
যুবলীগ সূত্র জানায়, সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কিছু কারণে তারা তা করেননি।
গত ২৮ মে পটিয়া উপজেলার পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার এবং পরদিন হাটহাজারী উপজেলার হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পরে গত ৩০ মে বন্দরনগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে নগর ইউনিট যুবলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রথমত দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি থাকা এবং প্রার্থীদের বেশীরভাগই নগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ইউনিটের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুসারী থাকার কারণে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
যেমন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কাউন্সিলে মোট ৭ জন সভাপতি পদে এবং ২২ জন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ইউনিটের এক যুবলীগ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংগঠনের চেয়ারম্যান কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে সব প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন এবং পরে তিনি তাদের মধ্যে একজনকে সভাপতি এবং একজনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে বলেন।
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চললেও তাদের কেউই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে রাজি হননি।
বাকি দুই ইউনিটের সম্মেলনেও একই অবস্থা হয়। তাই কিছু দিন পর কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান।
এছাড়া মহানগর ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের বেশীরভাগই মূলত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছিলেন।
যুবলীগ সূত্র জানায়, দুই নেতাই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
বাকি দুই ইউনিটেও একই অবস্থা ছিল। উত্তর জেলা শাখায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারীরা, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালামের অনুসারীরা ও বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে প্রার্থী হন।
দক্ষিণ জেলা শাখায় আওয়ামী লীগের দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল আলম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে প্রার্থী হন।
সূত্র জানায়, সম্মেলনে কমিটির ঘোষণা করা হলে বিশৃঙ্খলা হতে পারতো এবং এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি ঘোষণা করেননি।
এদিকে কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সূত্র।
তাদের অনেকেই বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের শিগগির কমিটি ঘোষণা করা উচিত।
নগর ইউনিট যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নুরুল আজিম রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুবলীগের চেয়ারম্যান কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এক মাস পেরিয়ে গেছে।'
'কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় চট্টগ্রামে যুবলীগের নেতৃত্বে শূন্যতা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এতে করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করা কঠিন হয়ে পড়ছে,' বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রনি বলেন, 'যেহেতু শোকের মাস আগস্টে কমিটি ঘোষণা করা হয় না, তাই জুলাইয়ে কমিটি ঘোষণা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।'
নগর ইউনিটের আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী শিগগির কমিটি ঘোষণার অভিমত ব্যক্ত করলেও, এর আগে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাইয়ের ওপর জোর দেন।
একই অভিমত প্রকাশ করে নগর ইউনিটের সভাপতি প্রার্থী এম আর আজিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবিলম্বে কমিটি ঘোষণা করা উচিত। তবে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এটা করা উচিত, যেন কোনো হাইব্রিড নেতা কমিটিতে না আসে।'
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে জানতে চাইলে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের সম্পর্কে যাচাই বাছাই করতে একটু সময় লাগছে। তাই কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের চেয়ারম্যান এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি আগামী ২০ তারিখ দেশে ফিরবেন। তিনি ফিরে আসার পর এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছি।'
Comments