বিএনপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তুলছে: ওবায়দুল কাদের
গণমাধ্যমে প্রতিদিন বিএনপির নেতাদের বক্তব্য প্রচার হওয়ার পরও তারা অযৌক্তিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বলে অভিযোগ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছেন। অথচ প্রতিদিন গণমাধ্যমে বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারের বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এমনকি টেলিভিশনে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের মনগড়া ও নির্জলা মিথ্যাচার কোনো রকম সম্পাদনা ছাড়াই গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, টকশোসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিদিন সম্প্রারিত হচ্ছে। তারপরও তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আকাশ উন্মুক্ত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের আজ সোমবার মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রের বর্হিপ্রকাশ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাব আপনারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের পথ পরিহার করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থা রেখে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। আপনারা ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথ প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হবে। অন্যথায় আপনাদেরকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান বাংলাদেশের উন্নয়ন-অভিযাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সহস্রাধিক দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা এবং অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের সংবাদ কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার জন্য 'গণমাধ্যম কর্মী আইন' প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অথচ বিএনপি শাসনামলে সাংবাদিকদের মর্যাদা ও অধিকার বিবেচনা করা হয়েছিল শ্রম আইন-এর আওতায়। তাদের সময় সাংবাদিকদের ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করা হয়নি।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলের মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা 'ভূতের মুখে রাম নাম' ছাড়া কিছু নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্নীতি ও এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপি এখন দেউলিয়া ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জন বিচ্ছিন্ন বিএনপির একমাত্র অস্ত্রই হলো মিথ্যাচার ও গুজব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপি-জামাত অশুভ জোট শাসনামলে বিবিসির সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালুসহ ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। ওই সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫০০টিরও বেশি মামলা এবং ৮০০ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি বিট্রিশ টেলিভিশন চ্যানেল ৪-এর সাংবাদিক লিওপোল্ড ব্রুনো সরেন্তিনো, জেইবা মালিকসহ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত অনেক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছিল। যার কারণে 'রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্স' বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা মির্জা ফখরুল ইসলামদের মর্মবেদনা বুঝি। রাজনৈতিক ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ বিএনপির কাছে স্বাধীনতার অর্থ কী তা দেশবাসী জানে। বন্দুকের নলের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের জিম্মি করে রেডিও-টেলিভিশন ভাষণে নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতাদখলকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নেতাদের মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা মানায় না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকে তারা বাক স্বাধীনতার কথা বলেন। স্বাধীনতা তাদেরই থাকে যারা দায়িত্বশীল নিয়মসিদ্ধ আচরণ করে ও স্বীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার নেতৃত্বাদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো এবং জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি 'মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' বিকৃত করে বিএনপি সব সময় বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আসছে।
বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এদেশে গণমাধ্যমের বিকাশ, উৎকর্ষ সাধন এবং সাংবাদিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণে কী করেছে? বরং তারা গণমাধ্যমের বিকাশ রোধে এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। দেশবাসী যা ভুলে যায়নি।
Comments