রাজনীতি

ভুল দেখাচ্ছেন, আইনে বলা আছে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে পারে

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনি জটিলতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনি জটিলতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, আপনারা তাকে বিদেশে পাঠান চিকিৎসার জন্য। আমাদের মাথায় আসে না সমস্যাটা কোথায়? কেন আইনের কথা বলছেন, আইন তো ভুল দেখাচ্ছেন আপনারা। আইন দেখায়, বলে আইন মানি না। আইন আমরা মানি। ৪০১ ধারায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরকারই পারে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে।

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, গত ১ দশকে আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে আমরা হারিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবক দলের অনেক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে। আজ শুধু স্বেচ্ছাসেবক দল নয়, যুবদল নয়, ছাত্রদল নয়—সারা দেশের মানুষ কারাগারে বাস করছে। একটুও শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। মানুষ কেউ হাসি মুখে কথা বলে না, কেউ নিরাপদে রাস্তায় বের হতে পারে না। তাদের জীবন-জীবিকা চালাতে পারে না। ভয়াবহ এক অবস্থার মধ্যে এই বাংলাদেশের মানুষ পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। অত্যন্ত অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ। প্রতিদিন চিকিৎসকরা তার জীবন রক্ষায় পরিশ্রম করছেন। তাকে যেতে না দেওয়া কেন? তাকে শর্ত সাপেক্ষে আটক রাখা কেন? একটি মাত্র কারণ, খালেদা জিয়া একমাত্র নেত্রী যিনি এই বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করছেন। তিনি যখন বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ৯ বছর পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।

আজ অনেক বড় বড় কথা বলে আওয়ামী লীগের নেতারা। উন্নয়ন উন্নয়ন বলতে বলতে ওদের ফুলঝুড়ি ফোটে। আমার ছেলে-মেয়েরা স্কুলে পড়ে, তারা বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। তাদের হাফ পাস দিতে হবে। কারণ তাদের লেখাপড়া করতে খরচ এখন অনেক বেশি। তাদের মা-বাবা, যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তারা হিমশিম খাচ্ছে। একদিকে চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বই-খাতার দাম বেড়েছে। সেখানে বাস ভাড়া আরও বাড়িয়ে দিয়ে তাদের চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে—বলেন ফখরুল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, গণবিরোধী সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দিলো ১৫ শতাংশ। সঙ্গে সঙ্গে বাস মালিকদের-শ্রমিকদের নামিয়ে দিলো ভাড়া বাড়াতে হবে। এই ভাড়া বাড়ানো, জ্বালানির দাম বাড়ানো কার স্বার্থে? আওয়ামী লীগের ওই সব দুর্নীতি পরায়ণ সিন্ডিকেট নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য জনগণের পকেট কাটছে। সরকার বলছে আমরা বিআরটিসির ভাড়া তো কমালাম কিন্তু প্রাইভেট বাসের ভাড়া তো কমাতে পারবো না। তোমরা প্রাইভেট টেলিফোন-মোবাইল কন্ট্রোল করতে পারো, প্রাইভেট সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারো ব্যবসা-বাণিজ্য। বাস ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কমিয়ে দিয়ে সেখানে যদি ভর্তুকি দিতে হবে তা তোমরা দেবে না কেন? আজ এই সমাবেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। দাবি করছি অবিলম্বের তাদের হাফ পাস দেওয়া হোক এবং প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি দেবে।

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এখন হাসপাতালগুলোতে যাবেন, দেখবেন কোনো চিকিৎসা নেই। করোনার সময় আমরা দেখেছি, হাসপাতালগুলোতে সিট পাওয়া যায়নি। টিকা নিয়ে কী কেলেঙ্গারি করেছে আপনারা দেখেছেন। ঢাকা শহরে গত ১০ বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। সেটার যে ব্যয় ছিল তা ১০ গুণ বাড়িয়েছে। পদ্মা সেতু ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার, এখন সেটা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার। কালকেই পত্রিকায় দেখলাম, ভাঙ্গা থেকে মাওয়া ১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে তাদের খরচ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। আমেরিকাতেও এত খরচ হয় না!

এই কারণে তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে যেতে দিতে চায় না। তিনি যদি সুস্থ হয়ে জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন তাহলে এদের এই দুর্নীতি, এদের গণবিরোধী কাজ, জনগণের অধিকার খালেদা জিয়া আদায় করবেন। সেই জন্য তারা তাকে মুক্তি দিতে চান না, চিকিৎসা করাতে চান না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় আপনারা সাজা দিয়েছে সেটা একটা মিথ্যা মামলা। সেখানে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। তাকে ব্যক্তিগত কারণে, রাজনৈতিক কারণে, প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে—বলেন ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া সাধারণ নাগরিক নন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সাহসী সৈনিক। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ৯ বছর ধরে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। খালেদা জিয়াকে আমাদের দরকার। বিএনপির জন্য নয়, খালেদা জিয়াকে দরকার এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য। একজন মাত্র মানুষ আছে যিনি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। আমাদের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে পারেন। সেই জন্য তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English

Tanzim Hasan Sakib is the victim of a sexist culture

Tanzim – who said in a post that men marrying women who are used to “free-mixing at addas” would be depriving their children of a “modest” mother – is a victim of the toxic masculinity prevalent in his surroundings.

3h ago