সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত এবং ১৭টি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছ। সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

সোমবার রাতে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তার এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যাকে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সঙ্গে গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বকুল মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। শহিদুল মলয় বোস হত্যা মামলার স্বাক্ষী এবং বকুল মাতুব্বর মামলার আসামি।

ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে শহিদুলের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের জালাল শেখ ও রবিউল শেখের সঙ্গে বকুল মাতুব্বরের অনুসারী আমিনুল মাতুব্বরের সমর্থক খবির শেখের কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। 

সেনাটি, গবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বালিয়া গ্রামের কয়েক শ মানুষ সংঘর্ষে অংশ নেয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতুব্বর, ফিরোজ মাতুব্বর, আহম্মদ মাতুব্বর ও জালাল শেখসহ উভয় গ্রুপের অনন্ত ১০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে। 

আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ রাজিব মোল্লা (২০) ও ইস্রাফিল শেখকে (২৫) রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

বকুল মাতুব্বরের সমর্থক আমিনুল মাতুব্বর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতুব্বর তার দলের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনাটী, গবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাব থেকে কয়েক শ মানুষ এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের ৩টি ও সাত্তার মাতুব্বরের ২টি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।'

ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সমর্থক সামাদ মাতুব্বর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রাম্য দল নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতুব্বর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক মানুষ এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এর ফলে মোহাম্মাদ ফকিরের ২টি, কুদ্দুস মাতুব্বরের ৩টি, মানিক মাতুব্বরের ৩টি, জালাল শেখের ২টি ও শুকুর মশালচীর ২টি বসতঘর তারা ভাঙচুর করে।'

সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, 'গত এক বছরের মধ্যে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা সালথায় হয়নি। সংঘর্ষে কয়েক গ্রামের দেড় হাজারের বেশি মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়। থানা ও জেলা পুলিশ সংঘর্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে শর্টগানের ১৫ রাউন্ড গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। তবে ফের সংঘর্ষেও আশঙ্কায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।'

দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এ রকম কথা শুনেছি। তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। যদি এ ঘটনা ঘটে তাতে প্রমাণ হয়, ওই দুজন সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

More than 290 killed in Air India plane crash: police

It’s the first Dreamliner crash since its 2011 commercial debut, says Aviation Safety Network

7h ago