সাড়ে ৩ বছর বন্ধ শিশুপার্ক: আধুনিকায়ন কাজে নেই অগ্রগতি

আধুনিকায়ন কাজ করতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্ক। কিন্তু, গত সাড়ে ৩ বছরেও এই প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

আধুনিকায়ন কাজ করতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্ক। কিন্তু, গত সাড়ে ৩ বছরেও এই প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৭টি ঈদ। কিন্তু, শিশুদের নিয়ে রাজধানীতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম শাহবাগ শিশুপার্কে যেতে পারেননি অভিভাবকরা।

পার্কটির জমির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পার্কের ভেতরে একটি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ করছে। সেই পার্কিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও ২ বছর সময় লাগবে। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) যান্ত্রিক বিভাগ আলাদা একটি প্রকল্পের আওতায় পার্কের আধুনিকায়ন কাজ করবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আধুনিকায়ন কাজ শেষ করে পার্কটি পুনরায় চালু করতে আরও ৩ বছর সময় লাগবে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পার্কের সামনে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে তা বন্ধ ঘোষণা করে ডিএসসিসি। সেখানে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন কাজের সময় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে এটি সর্বসাধারণের জন্যে বন্ধ থাকবে।

মন্ত্রণালয় প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী, স্বাধীনতা স্তম্ভের (৩য় পর্যায়) নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের মধ্যে। শিশুপার্কটিও একই সময়ে নতুন ভূগর্ভস্থ পার্কিং ও অবকাঠামোসহ খোলার কথা ছিল।

তবে, বাজেট বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট কিছু জটিলতার কারণে প্রায় ৪১ মাস পেরিয়ে গেলেও পার্কের অভ্যন্তরের নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি।

এ ছাড়াও, স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের সময়সীমা বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন। তবে, এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ বাকি থাকায় মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের মোট ২৬৫ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে নতুন রাইড সংযোজনসহ পার্কটির আধুনিকায়নে জন্যে ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল।

তবে, প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি ছিল ডিএসসিসির। তারা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, পার্কে বিদ্যমান পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ রাইডগুলো বদলে নতুন সেট স্থাপনে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

পরে দেড় বছর আগে ডিএসসিসিকে একটি নতুন প্রকল্পের আওতায় পার্ক আধুনিকায়নের কাজ করতে বলে মন্ত্রণালয়। পরে ৬১৬ কোটি টাকার বাজেটের একটি প্রস্তাব তৈরি করে তা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ডিএসসিসি।

এলজিইডি প্রকৌশলীদের মতে, ডিএসসিসির প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পেলে পার্কটি পুনরায় চালু করতে আরও তিন বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ, ২০২৫ সালের আগে এটি খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্কটি বন্ধের ফলে শিশুদের একটি পুরো প্রজন্ম সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'ঢাকায় শিশুদের জন্যে জায়গা খুব সীমিত। সেগুলোর মধ্যে এই শিশুপার্কটি অন্যতম। প্রায় অর্ধদশক ধরে এটি বন্ধ থাকবে, এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের কাছেও পার্কটি পুনরায় খোলার বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই।'

সম্প্রতি পার্কটি পরিদর্শন করে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা দেখতে পান, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের নির্মাণকাজ পার্কের প্রায় পুরো এলাকা দখল করে নিয়েছে। পার্ক ও পার্কিংটি নির্মাণের পরে কেমন হবে, সে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না। সেখানে শুধু একটি ছোট সতর্কতামূলক বোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী রাইডগুলোর বেশিরভাগই এখন আর নেই এবং স্পিনিং হুইল দুটি টিন দিয়ে ঘেরা ছিল। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে উপহার পাওয়া  জেটটি পার্কের পশ্চিম দিকের ঝোপের ওপর ধুলোয় ঢাকা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এই সংবাদদাতা সেখানে কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখেননি। পার্কিং লটের নির্মাণস্থলের ভেতরে একটি জলাবদ্ধ জায়গায় মশার লার্ভাও ছিল, যা ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাসের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আমাদের প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে। তবে, অনুমোদনের জন্য এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কাছে জমা দেওয়া হয়নি।'

'আমাদের পরিকল্পনায় শিশুদের জন্যে ১৫টি নতুন আধুনিক রাইড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে সব দিকে থেকেই এটি হবে একটি আধুনিক পার্ক,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

11h ago