স্কুলের জমি রক্ষায় আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা ‘বিদ্যালয়ের জায়গায় বেড়া দিতে দেব না’ ও অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানাভাবে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

স্কুলের বিরোধপূর্ণ জমিতে প্রতিপক্ষ বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে আপত্তি জানায়।

আজ রোববার শিক্ষার্থীরা 'বিদ্যালয়ের জায়গায় বেড়া দিতে দেব না' ও অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

প্রতিপক্ষ বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে আপত্তি জানায়। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

স্কুলে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী মেহেরুন্নেছা খাতুন চৌধুরী এলাকার নারী শিক্ষার বিস্তারে সুলতানপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ১০৩ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়ের নামে ওই জমি রেকর্ড হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ বিদ্যালয়টি ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয় এবং প্রায় ৪৬৫ শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণীকক্ষের সংকট নিরসনে একটি একাডেমিক ভবনের অনুমোদন পায়। যেখানে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেখানের প্রায় ১৭ শতক জমিতে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত রজব আলীর স্ত্রী সামিনা খাতুন পরিবারের ২০-২৫ জন সদস্যসহ বসবাস করে আসছেন। ওই ১৭ শতক জমি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সামিনা খাতুনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ দীর্ঘদিনেও নিরসন হয়নি। এমনকি তাকে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজমা চৌধুরী এবং দাতা পরিবারের সদস্য শিক্ষক আবু জাবেদ পাপ্পু বলেন, 'এ অঞ্চলের একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়েছে এবং একটি নতুন ভবনের অনুমোদন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত এই স্থানটি অবৈধভাবে একটি পক্ষ দখল করে রেখেছে। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি নির্মাণ হলে শ্রেণি কক্ষের সংকট কমবে। আমরা প্রয়োজনে দাতা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অন্যত্র জমি দিয়ে ওই পক্ষকে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি।'

বিরোধপূর্ণ জমিতে বসবাসকারী পক্ষের সামিনা খাতুন ও তামিম আহমদ বলেন, 'দাতা কর্তৃক মৌখিক ক্রয় বলে দীর্ঘদিন ধরে ৩৬ শতক জমিতে দীর্ঘ দিন ধলে আমাদের পরিবারের ২০-২৫ জন সদস্য বসবাস করছি। তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ও বেড়া নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে বাধা প্রধান করে। এ নিয়ে আমরা আদালতে সত্ত্ব মামলা দায়ের করেছি। অন্যত্র স্থানান্তরে করে জমি দেওয়ার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বর্তমানের বাজারে অনেক কম মূল্যের।'

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মতিন বলেন, 'বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছে। একটি মহলের ইন্ধনে একটি বিশেষ মহল বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পায়তারা করছে।'

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইলিয়াস আলী চৌধুরী জানান, বিদ্যালয়টি এখন সরকারের। আমরা অনেক যোগাযোগ করে একটি ভবন পেয়েছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভবনের কাজ শুরু হলেও স্কুলের জমিতে অবৈধ দখলদার থাকায় এখানে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের জমির জটিলতার কারণে একাডেমিক ভবন ফেরত গেলে স্কুলের অনেক ক্ষতি হবে। বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী জানান, উভয়পক্ষকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আদালতে উভয়পক্ষের দেওয়ানী মামলা চলমান। আমরা এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উভয়পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছি।'

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার বলেন, 'আমি যতটুকু জানি, যিনি স্কুলে জমি দান করেছেন তিনিই প্রকৃত মালিক। আর এখন যারা জমির মালিকানা দাবি করছেন তারা হয়তো একটি জাল দলিল তৈরি করে জমির মালিকানা দাবি করছেন। বিষয়টি সমাধানে উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago