সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তনে আবারও তোড়জোড়

স্টার ফাইল ফটো

আবারও গতি পেয়েছে সরকারের সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ। সংশোধিত আইনের খসড়ার ওপর আলোচনার জন্য আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংগঠন ও নাগরিকদের মতামত জানতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।

পরিবহন সংগঠনগুলোর চাপের মুখে ১৪টি ধারায় আইন লঙ্ঘনের অপরাধে বিভিন্ন জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ কমিয়ে আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সংশোধনী কার্যকর হলে যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে গাড়ি চালাবে বা অবৈধভাবে যানবাহনে পরিবর্তন আনবে তারা জামিন পেতে পারবেন।

খসড়া অনুযায়ী, আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে অন্তত ২৯টি সংশোধন করা হবে।

জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ২৩টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিভাগ ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের আজকের অনলাইন বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছিল।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জনগণের মতামত চেয়ে সংশোধনের খসড়াটি আপলোড করে। এ ছাড়া মতামত জানতে চেয়ে খসড়াটির ১৫ থেকে ১৬টি মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইউসুব আলী মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খসড়ার ওপর প্রায় সাত-আটটি মন্ত্রণালয়, শ্রমিক ও অন্যান্য সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা তাদের মতামত দিয়েছেন।'

প্রয়োজনে খসড়ায় পরিবর্তন আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বৈঠকে সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এরপর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে বিভিন্ন কমিটিতেও পাঠানো হবে।'

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। তবে, ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার আইনটি কার্যকর করেনি।

আইনটি পাস হওয়ার পরই পরিবহন শ্রমিকরা আইনটি পরিবর্তনের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।

আইনটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন, স্বরাষ্ট্র ও রেলমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

২০১৯ সালের নভেম্বরে সরকার আইনটি কার্যকরের উদ্যোগ নিলে পরিবহন সংগঠনগুলো ওই আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়।

সরকার সে সময় ওই আইনের বেশ কিছু ধারা কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

গত বছর একজন মন্ত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিন মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে পরিবহন নেতাদের একাধিকবার বৈঠক হয় এবং তারা আইনের বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেন।

খসড়া অনুযায়ী আইনটি সংশোধন করা হলে বেপরোয়া ও অবহেলায় গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে চালককে দায়ী করা যাবে না। শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আইনটি প্রযোজ্য হবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তন করা হবে। চালকরা, যারা নিবন্ধিত থ্রি-হুইলার চালাবেন তাদের অষ্টম শ্রেণীর পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণীর সার্টিফিকেট থাকলেও লাইসেন্স পাবেন।

অন্যান্য যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা অপরিবর্তিত থাকবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যদি লাইসেন্স প্রাপ্ত কন্ডাকটর বা সুপারভাইজার কমপক্ষে ১০ বছর যানবাহনে কাজ করে ড্রাইভার হিসেবে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন এবং ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাস করতে পারেন, তাহলে এই যোগ্যতাগুলোর প্রয়োজন হবে না।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর বক্তব্য

খসড়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট নয় উল্লেখ করে এর কিছু পরিবর্তন চেয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, তারা এই আইনের ৩৪টি ধারায় পরিবর্তনের কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন তাদের দাবি পূরণ না হলে বিক্ষোভ করবেন।

গতকাল তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা খসড়াটি দেখেছি এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছি।'

খসড়া সংশোধনটি এখনও চূড়ান্ত নয় এবং তারা আজকের বৈঠকের ফলাফল দেখবেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'দু-একটি বিষয় বাদে শ্রমিক সমিতির উত্থাপিত বেশিরভাগ বিষয়ের সমাধান হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা যা দাবি করেছি, তার শতভাগ আদায় নাও হতে পারে।'

 

অনুবাদ করেছেন মুনীর মমতাজ

Comments