হজে গিয়ে ভিক্ষুক: দেশে ৫০ বিঘা জমির মালিক, দাঙ্গা-চুরি মামলার আসামি

সৌদি আরবে ভিক্ষা করার সময় দেশটির পুলিশের হাতে আটক মেহেরপুরের মতিয়ার রহমান মন্টু ৫০ বিঘার বেশি জমির মালিক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করা তার স্বভাব।

এছাড়া সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

মতিয়ারের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের বাসিন্দা। বোমা বানাতে গিয়ে হাত হারিয়েছিলেন মতিয়ার। এরপর শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি।

গত ২২ জুন মতিয়ার ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন। তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে শুরু করেন ভিক্ষা। পরে সৌদি পুলিশ বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে 'মেহেরপুরের আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক' বলে। এতে বিব্রত মতিয়ারের সন্তান ও স্বজন।

গত ২৫ জুন ওই ট্র্যাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

মতিয়ারের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামে মতিয়ারের রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি। যা তিনি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। তার বড় ভাই আতিয়ার রহমান জানান, মতিয়ারের এসব জমিতে ফসল ফলে। তিনি একজন সচ্ছল মানুষ।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন জানান, তার স্বামী হজ পালন করতে গেছেন। সেখানে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি জানান, মতিয়ার এ পর্যন্ত ৪ বার হজে গেছেন। কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।

মমতাজ খাতুন আরও জানান, মতিয়ার ভারত হয়ে সৌদিতে যেতেন। ভারত এবং বাংলাদেশ হয়ে অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি আরবে গেছেন তিনি।

তবে বিদেশে গিয়ে তার স্বামী কী করেন, তা জানা নেই বলে দাবি করেন মমতাজ।

সূত্র জানায়, এক সময় ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মতিয়ার। ২০০৬ সালে বোমার আঘাতে ২ হাতের কবজি হারানোর পর ডাকাতির ছেড়ে দেন।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, মতিয়ারের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন মতিয়ার ৬ বার হজে গেছেন। সেখানে হজ মৌসুমে তিনি ভিক্ষা করেন। প্রতিবার প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ করে টাকা উপার্জন করে দেশে ফেরেন তিনি।

একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ব্যয় করে হজ ভিসায় সৌদি যান মতিয়ার। গ্রামে ফিরে প্রথমেই তিনি জমি কেনেন। এভাবে ৩৫ থেকে ৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মতিয়ারের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ২০১০ ও ২০১২ সালে গাংনী থানায় দুটি মামলা হয়। সেই মামলার আসামি মতিয়ার। এছাড়া কুষ্টিয়া থানায় তার নামে মামলা ছিল। তবে সেই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

ICT chief prosecutor seeks Interpol Red Notice for Hasina's arrest

"As an international policing agency, Interpol has been requested to take necessary steps to ensure her arrest"

1h ago