৬ বছরেও রাস্তা সংস্কার হয়নি

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী-রাজঘাটের এই রাস্তায় একসময় রিকশা, প্রাইভেট-কার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ সবধরনের যানবাহনই চলতো। এখন সেখানে ধানখেতের আইল সদৃশ সরু পথ। ছবি: স্টার

'সাংবাদিক সাব এক্কেনা লেইক্ক, সরহারত্তু আঁরা এ রাস্তাওয়া হরাত চাইদ্দে। রাস্তাওয়া লই অভাই বেশি দুক্কত আছি।' ভেঙে যাওয়া রাস্তা নিয়ে আকুতিভরা কণ্ঠে কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার (সদ্য গঠিত ঈদগাঁও উপজেলার আওতাধীন) পোকখালী ইউনিয়নের রাজঘাট গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোছেন (৬৬)।

পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী-রাজঘাট রাস্তাটি দিয়ে একসময় রিকশা, প্রাইভেট-কার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ সবধরনের যানবাহনই চলতো। এখন সেখানে রাস্তাটির অস্তিত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। আছে ধানখেতের আইল সদৃশ সরু পথ।

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাস্তাটি ২০১৬ সালের ২ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বিলীন হয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিলীন হওয়া রাস্তায় বালির বস্তা ফেলে আইলের মতো বানিয়ে কোনো মতে পায়ে হেঁটে চলাচল উপযোগী করে তোলে।

রাজহাটের বাসিন্দা কক্সবাজার মডেল পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাহুল (১৯) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাগরে জোয়ারের সময় ওই বালির বস্তাগুলো দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে থাকে। এসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিকষ্টে আইলের উপর দিয়ে চলাচল করে রাজঘাটসহ আরও তিন গ্রামের মানুষ।'

'কোনো কারণে পানির নিচে থাকা বস্তার উপর ঠিকমত পা ফেলতে না পারলে পড়তে হয় দুপাশে থাকা মৎস্যঘেরের খাদে। এসব মৎস্যঘেরের গভীরতা কমপক্ষে তিন থেকে চার ফুট। ঘেরের পানিতে পড়ে অনেককে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছে চিকিৎসকের কাছে।'

রাস্তাটিতে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় শিশু, মূমুর্ষ রোগী ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষকে অনেক কষ্টে রাস্তা পাড়ি দিতে হয় বলেও জানান গ্রামের বাসিন্দারা।

মৎস্যজীবী মোহাম্মদ তানবীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার রাস্তাটি টেকসই করার লক্ষ্যে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল।'

'নিযুক্ত ঠিকাদার কাজের অংশ হিসাবে রাস্তার পুরনো ইটগুলো তুলে নিয়ে রাস্তায় বালি ফেলার জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু রোয়ানো সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিলে সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তাটির নির্মাণ ও সংস্কার কাজ বন্ধ আছে।'

গ্রামের বাসিন্দারা ডেইলি স্টারকে বলেন, রাস্তার অভাবে এলাকায় পণ্য পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।

লবণচাষি আবদুস শুকুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উত্তর গোমাতলী, গাইট্যাখালী, আজিমপাড়া, রাজঘাট ও চরপাড়াসহ পাঁচ গ্রামের মানুষের সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র রাস্তা এটি। এ রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এছাড়া স্থলপথে ঈদগাঁও সদর স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত, সংস্কার না হওয়ায় মানুষ সীমাহীন কষ্টের শিকার হচ্ছে।'

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তাটির বর্তমান অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা দায়ী।

গোমাতলী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এম. আবদুল্লাহ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়া এ রাস্তাটির কারণে অনেকে গ্রাম ছেড়েছেন। ভোগান্তি থেকে রক্ষায় কেউ কেউ নৌপথে যাতায়াত করছেন।'

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের উপস্থিতিতে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া লিখিত ও মৌখিকভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকেও জানিয়েছি। গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন সভায় রাস্তাটির বিষয়ে বলে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।'

কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংসদ সদস্যের চাহিদা অনুযায়ী রাজঘাটের রাস্তাটি সংস্কারের প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।'

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এলজিইডির কক্সবাজার জেলা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'

তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

40m ago