আরব আমিরাতে হুতিদের ড্রোন হামলা কী বার্তা দিচ্ছে?

ছবি: এপি

আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেনে গত ৭ বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ মূলত দেশটির প্রায় ৫৬ শতাংশ সুন্নি ও প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশ শিয়াদের মধ্যে। ইয়েমেনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান যুদ্ধের প্রধান বিবদমান পক্ষ জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার ও বিরোধী হুতি আন্দোলনকারী।

হুতিদের আনুষ্ঠানিক নাম আনসারুল্লাহ। স্থানীয়ভাবে তাদের হুতি বলে ডাকা হয়। তারা মূলত শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। সাধারণভাবে বলা হয়, হুতিদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে শিয়াপ্রধান ইরান।

অপর দিকে, সুন্নিদের সহায়তা দিয়ে থাকে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব সামরিক জোট। এই জোটের অন্যতম সদস্য তেলসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটি অর্থনীতি ও সামরিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে বেশ শক্তিশালী।

আরব সামরিক জোটের সদস্যরা সৌদি আরব থেকে ইয়েমেনে নিয়মিত হামলা করে থাকে। এর জবাবে হুতিরা নিয়মিত হামলা চালায় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয়।

কিন্তু, গত ১৭ জানুয়ারি হুতিরা ইয়েমেনের সীমান্ত থেকে ১ হাজার মাইল দূরে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ড্রোন হামলার দাবি করে। এমন হামলার পর পাল্টে যায় মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তির হিসাব-নিকাশ।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক ও পাকিস্তানসহ বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ হামলার নিন্দা জানালেও সামরিক দিক থেকে আরব আমিরাতের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

হামলার এক দিন পর ইরান জানিয়েছে, ইয়েমেন সংকট সামরিক অভিযানের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনাকে বলেন, 'সামরিক অভিযানে সমস্যার তো সমাধান হবেই না বরং তা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াবে।'

অন্যদিকে, ইরান-সমর্থিত ইরাকের আসাইব আহল আল-হক সশস্ত্র সংগঠন আবুধাবিতে হামলার জন্য হুতিদের 'অভিনন্দন' জানিয়েছে।

আরব আমিরাতের পুলিশের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, আবুধাবির একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনায় হামলা চালানো হলে ৩টি তেলের ট্যাংকার বিস্ফোরিত হয়। এ ছাড়াও, আগুন লাগে আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত এলাকায়। এসব ঘটনায় ২ ভারতীয় ও এক পাকিস্তানি নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ জন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, আরব আমিরাতে হুতিদের হামলায় শুধু আঞ্চলিক উত্তেজনাই বাড়েনি, এর ফলে তেলের দাম বেড়েছে গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনওয়ার গারগাশ বলেছেন, এই হামলায় তার দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা 'বিঘ্নিত হবে না'।

লন্ডনের কিং'স কলেজের স্কুল অব সিকিউরিটি স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আন্দ্রিয়াস ক্রেইগ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, 'এই হামলায় বোঝা যাচ্ছে যে এই অঞ্চলে লড়াই হচ্ছে শেয়ানে শেয়ানে।'

তার মতে, এর ফলে এই ছোট ধনী রাষ্ট্রটি বুঝতে পেরেছে যে তার অনেক 'দুর্বলতা' আছে। 'শুধু তাই নয়, এর ফলে আরব আমিরাতের সম্মানহানিও হয়েছে। কেননা, তারা সবাইকে বলতো যে ব্যবসার জন্য এ দেশ নিরাপদ,' যোগ করেন তিনি।

ক্রেইগের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডলইস্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মার্ক-ওয়েন জোনস। তিনি বলেন, 'এই হামলার ফলে ভ্রমণ বা ব্যবসার জন্য নিরাপদ দেশ হিসেবে আরব আমিরাতের সুনামই শুধু নষ্ট হয়নি, পাশাপাশি দেশটির পরমাণু শক্তিধর হওয়ার ইচ্ছা কতটা নিরাপদ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।'

সৌদিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, হুতিদের হামলার পর আরব আমিরাতকে 'নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা' সম্পর্কিত সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট গতকাল চিঠিতে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদকে বলেছেন, 'এই অঞ্চলে চরমপন্থি দলগুলোকে মোকাবিলায় আপনাদের সঙ্গে ইসরায়েল ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। কেননা, আমাদের শক্র অভিন্ন।'

বাহরাইনভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষণ সংস্থা 'লে বেক ইন্টারন্যাশনাল'র ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল হোরোবিৎজ বলেন, 'এখন আরব আমিরাতকে যুদ্ধে জড়ানোর চেয়ে নিজের নিরাপত্তার ওপর বেশি মনোযোগ দিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

India, Pakistan agree ceasefire: Trump

US President Donald Trump on Saturday said that India and Pakistan have agreed to a "full and immediate ceasefire," amid both countries launching strikes and counter-strikes against each other's military installations

29m ago