যে কারণে কিয়েভে ধ্বংসাত্মক হামলা করছে না রাশিয়া

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৭তম দিন আজ শনিবার। এ কয়দিনে ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলো একে একে রুশ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার খবর দিয়ে আসছিল পশ্চিমা গণমাধ্যম। তারা আরও জানিয়েছিল, কিয়েভ দখলে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিশাল রুশ কনভয়। সে হিসেবে কিয়েভের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কিয়েভের সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল, যা কিয়েভের হাগিয়া সোফিয়া নামেও পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৭তম দিন আজ শনিবার। এ কয়দিনে ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলো একে একে রুশ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার খবর দিয়ে আসছিল পশ্চিমা গণমাধ্যম। তারা আরও জানিয়েছিল, কিয়েভ দখলে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিশাল রুশ কনভয়। সে হিসেবে কিয়েভের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কিন্তু পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। রুশ বাহিনী এখন পর্যন্ত কিয়েভ দখলে নিতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিরোধসহ নানা কৌশলের মাধ্যমে রুশ সেনাদের অগ্রগতি ধীর করে দিতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিন্তু এটি নিছকই একটি ধারণা। কারণ পশ্চিমা গণমাধ্যমে যুদ্ধ পরিস্থিতির খবর যেভাবে আসছে, তার উল্টোটি বলছে রুশ গণমাধ্যম। এ কারণে ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাক্সার স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্স আজ বলছে, কিয়েভকে চারপাশ থেকে প্রায় ঘিরে ফেলেছে রুশ কনভয়। পাশাপাশি সেনারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে চালাচ্ছে হামলা। স্যাটেলাইট ছবিতে কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে বেশ কয়েক জায়গায় আগুনের ছবি ধরা পড়েছে। আগুনের চিত্র দেখা গেছে হোস্টোমেলের আন্তোনভ বিমানবন্দরেও।

একইসঙ্গে ইউক্রেনের অন্য শহরগুলোতেও রুশ বাহিনী বিমান ও স্থল হামলা জোরদার করেছে বলে জানা গেছে। সেসব শহরের দালানকোঠার ধ্বংসস্তূপের ছবিতে সয়লাব পশ্চিমা গণমাধ্যম। কিন্তু কিয়েভে হামলার খবর দিলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ছবি বা বিশ্বস্ত তথ্য দিতে পারছে না তারা। এ পর্যায়ে এসে রুশ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন জাগছে পশ্চিমা গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশন নিয়েও।

কিয়েভ পেচারস্ক লাভরা বা গুহা মঠ। ছবি: সংগৃহীত

অভিযানের পঞ্চম দিনের মাথায় রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ফেদরোভ জানিয়েছিলেন, ২ মার্চের মধ্যেই জয় দিয়ে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু এরপর চলে গেছে ১০টি দিন। এবার তাহলে পুতিন কী ভাবছেন, তার সমর কৌশলের আসল রহস্য কী?

ইউক্রেনকে দখলে নেওয়ার ইচ্ছে নেই, বেসামরিক লোকদের মারা হবে না- পুতিন আগে থেকেই বলে আসছিলেন এসব। তারপরও রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বোমা হামলা থেকে বাদ পড়েনি শিশু হাসপাতালও।

তাহলে কিয়েভের উপকণ্ঠে এসে কেন স্থবির রুশ বাহিনী, পুতিন কী কিয়েভকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে নারাজ?

এর সম্ভাব্য যেসব কারণ থাকতে পারে-

'দ্য মাদার অব অল সিটিস ইন দ্য রাশিয়ান এমপায়ার'

কিয়েভ দনিপার নদীর তীরে অবস্থিত ইউক্রেনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি পূর্ব ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্প, পরিবহন, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তাই একে বলা হয়, 'দ্য মাদার অব অল সিটিস ইন দ্য রাশিয়ান এমপায়ার'। বর্তমানে শহরটির বাসিন্দা প্রায় ৩০ লাখ ১০ হাজার।

কিয়েভ একটি দৃষ্টিনন্দন শহর যেখানে বহু উদ্যান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে। দনিপার নদীর ডান তীরে শহরের পুরাতন অংশে পাহাড়ের শীর্ষে গির্জা ছাড়াও অনেক প্রাচীন দুর্গ ও প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ আছে। নদীর বাম তীরের বেশিরভাগ স্থাপনা ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে তোলা হয়েছে।

মধ্যযুগে কিয়েভ ছিল ইউরোপের অন্যতম অগ্রগণ্য ধর্মকেন্দ্র। সেই আমলের বহু গির্জা আজও দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো সেন্ট সোফিয়ার মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল, যা হাগিয়া সোফিয়া নামেও পরিচিত। ১১শ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত এই গির্জার বেশিরভাগ ১৭শ-১৮শ শতাব্দীতে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এটি ইউক্রেনের প্রাচীনতম গির্জা, যা প্রাচীরচিত্র (ফ্রেস্কো) ও চিত্রোপল (মোজাইক) শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়াও, পেচারস্ক লাভরা বা গুহা মঠ ১১শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়, ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্রের জন্য পরিচিত এই ভবনটি ইউক্রেনের সবচেয়ে পবিত্র স্থাপনাগুলোর একটি। চোখে পড়ার মতো ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে বারোক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ১৮শ শতাব্দীর সাধু আন্দ্রেই গির্জা এবং ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত সাধু ভ্লাদিমিরের মহাগির্জা উল্লেখযোগ্য। কিয়েভের একদা প্রবেশপথ ১১শ শতাব্দীতে নির্মিত সোনালী প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষগুলোও বেশ চমকপ্রদ।

কিয়েভে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার মধ্যে ১৮৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সর্বাগ্রে গণনীয়। এ ছাড়াও, এখানে ইউক্রেনের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি ও ইউক্রেনের বৃহত্তম গ্রন্থাগার জাতীয় গ্রন্থাগার অবস্থিত। শিল্পকলার ক্ষেত্রে ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউক্রেনের জাতীয় শিল্পকলা জাদুঘর, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত মহান দেশপ্রেম যুদ্ধ জাদুঘর এবং ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমা ও প্রাচ্য শিল্পকলা জাদুঘর পরিদর্শনযোগ্য। এ ছাড়া, এখানে একটি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, একটি গীতিনাট্যশালা ও একটি বৃহৎ স্টেডিয়াম আছে।

পাখির চোখে কিয়েভ শহর। ছবি: সংগৃহীত

কিয়েভে প্রাগৈতিহাসিক যুগেই বসতি ছিল। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে এখানে পূর্বী স্লাভ জাতির লোকালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শিগগির এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও কনস্টান্টিনোপলের (ইস্তাম্বুল) মধ্যবর্তী প্রধান বাণিজ্যপথের ওপর অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। ৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ভাইকিং জাতির লোকেরা শহরটি জয় করে নেয়। তারা শহরটিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পূর্বী স্লাভীয় রাজ্যের কেন্দ্র বানায়, যে রাজ্যের নাম ছিল 'কিয়েভান রুস'। ৯৮৮ সালে প্রথম ভলোদিমিরের শাসনামলে কিয়েভের বাসিন্দারা গ্রিক প্রথানুবর্তী মণ্ডলীর খ্রিস্টান ধর্মমতে বিশ্বাস আনে এবং শহরটি কিয়েভান রুসের একটি প্রধান ধর্মকেন্দ্রে পরিণত হয়।

ইউক্রেনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ রুশভাষী। তারা জাতিগতভাবেও রুশ। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা তীব্রভাবে বিদ্যমান। কিয়েভের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী আসলে রুশদের ঐতিহ্যই বহন করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতোই অধিকাংশ রুশ মনে করেন, কিয়েভ ভিন্ন জাতির ভিন্ন জনপদ নয়, এটি 'মা' সোভিয়েত ইউনিয়নেরই আরেক আদুরে 'সন্তান'। যে কারণে দুঃস্বপ্নেও কিয়েভের ধ্বংসস্তূপ দেখতে চান না রুশরা। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে হামলা চালানোয় প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছেন রুশরা। রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, আটক হয়েছেন অনেকে। কিয়েভে পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালালে, নিজ দেশেই যে অসন্তোষের আগুন দপ করে জ্বলে উঠতে পারে, পুতিন সম্ভবত সে বিষয়ে সচেতন। 

অপরদিকে, ইউক্রেনও তার অন্য শহরগুলোকে রক্ষায় যতটা না মরিয়া, ঠিক ততটুকুই যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে রাজধানী কিয়েভকে। অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ বাহিনী প্রায় বিনা বাধায় ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কিয়েভের দিকে অগ্রসরের পর থেকেই তারা হোঁচট খাচ্ছে। রুশদের প্রতিহত করতে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিয়েভবাসীও। কারণ সবাই জানেন, কিয়েভের পতন হলেই ইউক্রেনের পতন। তাই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও জোর গলায় বলছেন, কোনোভাবেই কিয়েভের পতন হতে দেবেন না।     

কিয়েভের দুঃখের ইতিহাস বেশ পুরনো

দক্ষিণ সীমান্তের দিকে অরক্ষিত ছিল বলে কিয়েভ অনবরত আক্রমণের শিকার হতো। ১২৪০ সালে মঙ্গলীয় নেতা বান্টু খানের নেতৃত্বে মঙ্গলীয় সেনাবাহিনী শহরটিতে লুটতরাজ চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ১৩৬০-এর দশক পর্যন্ত শহরটি মঙ্গলীয় আধিপত্যের অধীনে ছিল। এরপর এটি লিথুয়ানীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৪৮২ সালে ক্রিমিয়ার তাতার জাতির লোকেরা কিয়েভ আক্রমণ করে। ১৫৬৯ সালে এটি পোল্যান্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। এরপর ১৬৮৬ সালে রুশ সাম্রাজ্য কিয়েভকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। শহরটি লিথুয়ানীয়, পোলীয় ও রুশ সাম্রাজ্যের প্রান্তিক নগরী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

কিয়েভের বর্ণিল ভবনের সারি। ছবি: সংগৃহীত

১৮শ শতাব্দীতে কিয়েভ নগরীর প্রতিরক্ষা জোরদার করা হয়। ১৯শ শতাব্দীতে রুশ সাম্রাজ্যে শিল্প বিপ্লব ঘটলে এটি একটি বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পুনরুত্থান লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) জার্মান সেনারা কিয়েভকে দখল করে রাখে। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর এখানে বহু লড়াই সংঘটিত হয়। একই বছর ইউক্রেন রুশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ১৯২১ সাল নাগাদ রুশ সাম্যবাদীদের লাল সেনারা কিয়েভ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৯৩৪ সালে কিয়েভ শহরটি ইউক্রেনের রাজধানী হিসেবে খার্কিভকে প্রতিস্থাপন করে। এসময় ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি সেনারা ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত কিয়েভ দখল করে রাখে এবং এসময় শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই যুদ্ধে কিয়েভের প্রায় ২ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। বিশ্বযুদ্ধের পর শহরটিকে পুনরায় নির্মাণ করা হয় এবং সোভিয়েত আমলের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে শহরটি আবার তার অবস্থান ফিরে পায়। এসময় এটি মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের পর সোভিয়েত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শহরের মর্যাদা লাভ করে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিয়েভ স্বাধীন রাষ্ট্র ইউক্রেনের রাজধানীতে পরিণত হয়। এসময় ইউক্রেনের অন্যান্য অংশ থেকে অধিবাসীরা ধীরে ধীরে কিয়েভে বসতি স্থাপন করে। দেশের অর্থনীতি এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে রূপান্তরের মাধ্যমে কিয়েভ ইউক্রেনের বৃহত্তম এবং ধনী শহরে পরিণত হয়। সোভিয়েত পতনের পর কিয়েভের অস্ত্রশস্ত্রনির্ভর শিল্পের উৎপাদন কমে যায়, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। কিন্তু অর্থনীতির নতুন অনেক খাত, যেমন: সেবাখাত এবং অর্থায়ন খাতে কিয়েভের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি, সেই সঙ্গে গৃহায়ন এবং পৌর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্রমাগত অর্থায়ন প্রদান করার মাধ্যমে কিয়েভ অল্প সময়ের মধ্যেই অভাবনীয় উন্নতি করে। কিয়েভ ইউক্রেনের সবচেয়ে পাশ্চাত্যমুখী অঞ্চল হিসেব পরিচিত, যেখানে প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই রাজনৈতিক দলগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হওয়ার বিষয়ে সমর্থন জ্ঞাপন করেছে।

সংকটের শুরু, ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেন অভিযানের উদ্দেশ্য

সাম্প্রতিক ইতিহাস বিবেচনায় নিলে চলমান সংকটের সূত্রপাত ২০১৪ সালে। ইউক্রেনে দুটি রাজনৈতিক ধারা প্রবল। একটি ধারা পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আগ্রহী। অপর ধারাটি রুশপন্থী। তারা রাশিয়ার বলয়ে থাকতে চায়।

বিক্ষোভের মুখে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতন হয়। তিনি দেশ ছেড়ে পালান। ইয়ানুকোভিচের পতনের পর পূর্ব ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া।

ম্যাক্সার স্যাটেলাইটের ছবিতে হোস্টোমেলের আন্তোনভ বিমানবন্দরে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: ম্যাক্সার টেকনোলজিস

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য নয় ইউক্রেন। তবে দেশটি ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। বিষয়টি মানতে নারাজ রাশিয়া। এ কারণে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা চায় যে ইউক্রেনকে কখনো ন্যাটোর সদস্য করা হবে না।

পুতিন মনে করেন, রাশিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো ন্যাটোকে ব্যবহার করছে। ইউক্রেনকেও এ উদ্দেশ্যে ন্যাটোতে নেওয়া হতে পারে। এ কারণে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করছেন তিনি।

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। এ ভাঙনকে রাশিয়ার জন্য একটি ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করেন পুতিন। তারপর থেকে রাশিয়া দেখছে, সামরিক জোট ন্যাটো ধীরে ধীরে তাদের ঘিরে ফেলছে। সংগত কারণেই রাশিয়া তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

জর্জিয়া, মলদোভা বা ইউক্রেনেরও ন্যাটোতে যোগ দেওয়া আকাঙ্ক্ষা আছে। কিন্তু রাশিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। তবে এই ৩ দেশে রুশপন্থী বিদ্রোহী আছে। এই দেশগুলোর কোনোটি যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে তা রাশিয়ার জন্য মেনে নেওয়া কঠিন হবে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত দনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে থাকা ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

পুতিনের নির্দেশের পরপরই স্থানীয় সময় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ার সেনারা। রাশিয়ার সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায় উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে। বেলারুশ থেকেও হামলা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Lightning fatalities on the rise

Bangladesh has been witnessing a rise in casualties from lightning mainly due to drastic shifts in weather patterns.

53m ago