ন্যাটো-ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট: যে ৫ বিষয় জানা দরকার

ছবি: রয়টার্স

বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইউক্রেন প্রসঙ্গে রাশিয়া ও পশ্চিমের শক্তিদের মাঝে চলমান অচলাবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা জোট ন্যাটো।

রাশিয়া নিশ্চয়তা চাইছে, তাদের প্রতিবেশী ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম শরীক ইউক্রেন কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। অর্থাৎ, ইউক্রেনের এই জোটে যোগদানের ওপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, এমনটাই চাইছে ক্রেমলিন।

এছাড়াও তারা ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, পূর্ব ইউরোপের সব ধরনের সামরিক সম্প্রসারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। বস্তুত, ন্যাটো পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে দাবি করছে রাশিয়া।

ছবি: রয়টার্স

তবে পশ্চিমা পরাশক্তিরা রাশিয়ার এসব দাবি মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তারা যুক্তি দেন, রাশিয়া, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্তে নাক গলাতে পারে না। তারা ন্যাটোর 'খোলা দরজা নীতির' কথা উল্লেখ করে জানান, যেকোনো ইউরোপীয় রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্যপদ চাইতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সংকটে ন্যাটোর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে ৫টি বিষয়ে সবার জানা থাকা উচিত।

১। ন্যাটো কী এবং কেনো এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) প্রতিষ্ঠিত হয়।

সে যুগে, এ জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (ইউএসএসআর) আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মিত্ররা বৃহত্তর রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে ন্যাটোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

কয়েক দশক পর, ২০২২ সালে এসে দেখা যায়, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ন্যাটোর প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে। এর পেছনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের একটি বড় ভূমিকা আছে।

স্বভাবতই, এতে রাশিয়া অস্বস্তিতে পড়েছে। ন্যাটোর প্রভাব যতই রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি এসে পৌঁছাচ্ছে, ততই তারা তেতে উঠছে।

ন্যাটোর সদর দপ্তর । ছবি: রয়টার্স

২। ন্যাটোর সদস্য কারা?

বর্তমানে ৩০টি দেশ এই জোটের সদস্য।

বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। ২০২০ সালে জোটে যোগ দেয় সর্বশেষ সদস্য উত্তর মেসিডোনিয়া।

তথাকথিত সহযোগী দেশ ইউক্রেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং জর্জিয়া এই জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।

ন্যাটো বলেছে, 'রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্যোগের মাধ্যমে জোটের সব সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।'

৩। ইউক্রেন কেনো ন্যাটোর সদস্য হতে চায়?

ইউক্রেন ধারাবাহিকভাবে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। এমন কী, এই আগ্রহের কথা তাদের সংবিধানেও উল্লেখ করা হয়েছে।

জোটে যোগ দিলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন হবে। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠা চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণকে সব মিত্রদের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। যার ফলে একে ওপরকে সুরক্ষিত রাখতে সদস্য রাষ্ট্ররা দায়বদ্ধ।

ছবি: রয়টার্স

৪। ন্যাটো কি ইউক্রেনকে সমর্থন করে?

২০০৮ সালে ন্যাটোর তৎকালীন নেতারা ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুতি দেন, কোনো একদিন দেশটিকে জোটে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়লেও বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, আপাতত ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

পশ্চিমের পরাশক্তিরা এখনো নিশ্চিত নয় যে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দূর করার যথেষ্ট পরিমাণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, জোটে যোগ দেওয়ার জন্য কিছু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক মানদণ্ড রক্ষা করতে হয়, যেগুলো এখনও ইউক্রেন ছুঁতে পারেনি।

এছাড়াও, রাশিয়ার আপত্তির মুখে ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া নিয়েও কিছু সদস্য রাষ্ট্র দ্বিধান্বিত, কারণ এরকম কিছু হলে ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে চলে আসতে পারে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ কিয়েভে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জানান, ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ তাদের আলোচনার অংশ ছিল না। তবে জেলেনস্কি বিভিন্ন সময়ে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নতুন কোনো দেশকে সদস্যপদ দিতে হলে ন্যাটোর ৩০ সদস্যের সবাইকে সে বিষয়ে একমত হতে হবে।

৫। রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর ঝামেলা কোথায়?

পুতিন বলেছেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ এখনি বন্ধ করতে হবে এবং কিছু পরিমাণে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে আনতে হবে। এছাড়াও, তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, ইউক্রেনকে কখনোই সদস্যপদ দেওয়া হবে না।

তিনি যুক্তি দেন, পশ্চিমের শক্তিরা মস্কোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তার মতে, স্নায়ু যুদ্ধের শেষের দিকে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর মৌখিক চুক্তি হয়েছিল যে তারা ইউরোপের পূর্বদিকে তাদের প্রভাব আর বিস্তার করবে না। তবে ন্যাটো এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতির কথা মেনে নেয়নি।

ন্যাটোর পাল্টা অভিযোগ, রাশিয়া ইউক্রেনের সীমানায় ১ লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন করে চাপ সৃষ্টি করছে।

ফলে, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মিত্ররা মস্কোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে এ সব কূটনৈতিক তৎপরতা তেমন কোন সাফল্য আনেনি। ওয়াশিংটন ও ন্যাটো ক্রেমলিনের মূল দাবিগুলো মেনে নেয়নি আর রাশিয়াও তাদের দাবিতে অনমনীয় থাকছে। ফলে পূর্ব ইউরোপের উত্তেজনা কমছেই না।

কিয়েভের একাধিক মিত্র (যারা ন্যাটোর সদস্য) ইতোমধ্যে অস্ত্র দিয়ে দেশটিকে সহায়তা করছে, যাতে তারা সম্ভাব্য কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

তবে এ তালিকায় নেই জ্বালানী গ্যাসের উৎস হিসেবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে যুদ্ধ বাঁধলেও তারা ইউক্রেনের সহায়তায় সেনাবাহিনী পাঠাবে না।

ন্যাটো বাহিনীও ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে অতিরিক্ত সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের কলেবর বাড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

9h ago