ভয় নেই, সন্তানদের হাসিমুখে সাহস জোগাচ্ছেন ইউক্রেনের মায়েরা

রাশিয়ান হামলার মধ্যেও বাচ্চাদের সাহস দিতে ইউক্রেনীয় মায়েরা ভয়ে থাকা সত্ত্বেও হাসছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দিনিপ্রো থেকে বিবিসির ইস্টার্ন ইউরোপ করেসপন্ডেন্ট সারাহ রেইনসফোর্ড এমনটাই জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আমি এই লেখা লিখছি মাটি থেকে কয়েক তলা নিচের একটি বোম শেল্টার থেকে, যেখানে মানুষের অনেক ভিড়। পাশাপাশি ৪টি কুকুর ও একটি পোষা খরগোশ আছে।
হোটেলের কর্মীরা মধ্যরাতের পরপরই দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে আমাদের দৌড়াতে দৌড়াতে নিয়ে অনেকগুলো সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে নামিয়ে দেয়।
দেখে মনে হয়েছিল, তারা রাশিয়ান প্যারাট্রুপারদের অবতরণের গুজব সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, যদিও বিষয়টি তেমন আশ্চর্যজনক নয়। সবাই এখানে এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছে।
সন্ধ্যার আগে আমরা রাস্তার পাশের একটি বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হানা সিভা ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করি।

২ দিন আগে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তিনি পুরো পরিবারকে সোফার পেছনে ঘুমানোর জন্য বসার ঘরে নিয়ে যান।
তার স্বামী বন্দুক বের করেন। যেটি এখন তাদের জানলার ধারে একটি বড় খেলনার পাশে পড়ে আছে।
২ সন্তানের এই জননীকে দেখে উচ্ছ্বসিত মনে হচ্ছে, তিনি অবলীলায় তার সমস্ত প্রস্তুতির কথা বর্ণনা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন যে, সন্তানরা যাতে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়, সেজন্য তিনি মুখে হাসি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হানা বলেন, 'গতকাল ওরা কান্নাকাটি করছিল। ওরা এমনিতেই বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই আমার ভয় পাওয়া চেহারা ওদের কাছে প্রদর্শনের আর কোনো সুযোগ নেই।'

তার ২ ছেলে জরুরি ব্রেসলেট পরে আছে, যা তিনি ১ সপ্তাহ আগে অর্ডার করেছিলেন ওদের নাম, মোবাইল নম্বর এবং রক্তের গ্রুপসহ।
হানা বলেন, 'যখন প্যারামেডিস্কের জন্য আমি ওদের রক্তের গ্রুপ দিচ্ছিলাম, তখন আমার কাছে বিষয়টি অবিশ্বাস্য লাগছিল। একজন মা হিসেবে আমি ভীষণ শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।'
এখন পর্যন্ত দিনিপ্রোর কাছে একটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এরপর থেকে শহর শান্ত আছে। কিন্তু রুশ বাহিনী এখানকার দক্ষিণ, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ করছে।
তাই হানা যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রাত্যহিক কাজে মনোনিবেশের চেষ্টা করছেন।
তিনি ও প্রতিবেশীরা মিলে বোম শেল্টারের মেঝে পরিষ্কার করছিলেন। এ ছাড়াও, দরজার কাছে জামাকাপড়, জলখাবার ও পানির পাত্র সাজিয়ে রাখছিলেন।
এতো বেশি মানুষের জন্য বেসমেন্টটিকে খুবই ছোট মনে হচ্ছিল। কিছু কিছু বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আরও পশ্চিমে চলে গেছেন।
ডনবাস থেকে আসা কিছু মানুষ তাদের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
Comments