মুক্তিযুদ্ধ

আজকের দিনে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ধলইয়ে অসম সাহসীকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান।

এদিন ভোর ৪ টার দিকে লেফটেন্যান্ট আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এবং লেফটেন্যান্ট নুরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ১২৫ জনের একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুর্ভেদ্য ধলই ঘাঁটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এসময় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় সিপাহী হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। শহীদ হন তিনি। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। এই যুদ্ধে হাওলাদার মকবুল হোসেন ও সিপাহি আব্দুর রহমান অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

এদিন মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ খুব দ্রুতই শত্রুমুক্ত হবে। এরই মধ্যে আমরা আমাদের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। শিগগির তার ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা আমাদের দেশকে নতুন করে গড়বো। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যেন কোনো ধরনের জাতীয় সংকট সৃষ্টি না হয় তার জন্য আমরা এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সমস্ত দেশেই এখন মুক্তিবাহিনীর কাছে হানাদারেরা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বহন করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শত্রুও বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।'

ঢাকায় এদিন

২৮ অক্টোবর দুপুর সোয়া ১টার দলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা নজিবুল্লাহ জন ও সৈয়দ মাহবুব আলী মতিঝিল দিলকুশার ডিআইটি ভবনে অবস্থিত পাকিস্তান টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের টাওয়ারে প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এর আগে দুই মাসের মধ্যে ১২ দিনে মোট ১৪ পাউন্ড বিস্ফোরক নেয়া হয়েছিল ডিআইটি ভবনে।

২৮ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন আসন্ন উপনির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ৫০ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। এই নির্বাচিতদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আজম, প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলীম লীগ প্রধান খাজা খয়রুদ্দিন, কাইয়ুম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক খান এ সবুর, জামায়াতের সহকারী আমীর আব্বাস আলী খান ও এ কে এম ইউসুফ আছেন।

ভারতে এদিন

২৮ অক্টোবর ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কমিটিতে দেয়া এক চিঠিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে অযৌক্তিক মন্তব্য ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা আইন বিরুদ্ধাচরণের অভিযোগ আনে। একই সঙ্গে ভারত পাকিস্তানকে শরণার্থী সমস্যার জন্য প্রধান দায়ী বলে উল্লেখ করে। ভারত এই চিঠিতে আরও উল্লেখ করে, 'যতদিন না পাকিস্তান বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করছে ততদিন পর্যন্ত এই অঞ্চলে শান্তির আশা করা যায় না।'

দেশব্যাপী এদিন

২৮ অক্টোবর মুজিবনগরে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় যে সকল জাতীয় পরিষদ সদস্য বিদেশি প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সতর্ক করে দেয়। এদিন কার্যনির্বাহী কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, 'এরপর কেউ এমন উদ্যোগ নিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোনো শর্তেই আমরা আর কোনো আলোচনা করতে রাজি নই।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৮ অক্টোবর ফেনীর পরশুরামে মুক্তিবাহিনীর একটি অ্যামবুশ দল গুতুমার কাছে হানাদার বাহিনীর একটি বাঙ্কারে এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এসময় বাঙ্কারে টহলরত ১ জন হানাদার সেনা নিহত হয়।

২৮ অক্টোবর সিলেটে জেড ফোর্সের 'বি' কোম্পানী ভারতীয় আর্টিলারীর সাহায্যে হানাদার বাহিনীর পাত্রখোলা চা ফ্যাক্টরি ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে হানাদার সেনাদের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা পাত্রখোলা চা ফ্যাক্টরি দখল করে নিজেদের ক্যাম্প স্থাপন করেন।

২৮ অক্টোবর ঝিনাইদহের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আবদুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল হরিণাকুণ্ডু থানা আক্রমণ করে। এ হামলায় হানাদার বাহিনীর এক ডিএসপিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ নিহত হয়। বাকিরা থানা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

২৮ অক্টোবর ৮ নং সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একটি অ্যামবুশ দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দলকে গরিবপুর থেকে আসার পথে ফতেহপুরে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে হানাদার বাহিনীর ৩ সৈন্য নিহত হয়।

সূত্র:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র তৃতীয়, সপ্তম, একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ড

দৈনিক পাকিস্তান ২৯ অক্টোবর ১৯৭১

দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা ২৯ অক্টোবর ১৯৭১

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

UN Security Council to meet Sunday over US strikes on Iran

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

11h ago