ভালো মানুষেরাই প্রাণীদের ভালোবাসে: ‘প’ এর গল্প
যখন নেকড়েকে প্রথম কোন মানুষ খাবার দিল তখন প্রথমবার কুকুরের আত্মপ্রকাশ ঘটলো। এরপর থেকে এই প্রাণীটি মানুষের বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। তারা শিকারে আদি মানুষের কার্যকর সঙ্গী ছিল, প্রহরী হিসেবে ছিল বিশ্বস্ত। কিন্তু, আধুনিক সময়ে এসে যখন মানুষ শিকারের বদলে বাজারে যাওয়া শিখলো এবং প্রহরায় আসলো সিসিটিভি ক্যামেরা, তখন কুকুরের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যেতে থাকলো। আমাদের বিশ্বস্ত এই বন্ধুকে ছুঁড়ে ফেলা হলো রাস্তায়।
মর্মস্পর্শী এই গল্পটি বলছিলেন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল, যখন তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। এমিল তাঁর অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রাণীদের ভালোবাসেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন অবহেলিত ও নির্যাতিত প্রাণীদের জন্য। প্রাণীদের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা থেকেই ২০১৫ সালে স্থাপন করেন ‘পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ বা ‘প ফাউন্ডেশন’। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি পায়।
এমিল স্থাপত্যবিদ্যা পড়ার সময় থিসিস করেছিলেন অ্যানিমেল হসপিটালিটির ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক আহত কুকুরকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন সাহায্য করার জন্য, কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারেননি। এরপর, তিনি অনেক প্রাণীকেই সাহায্য করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। প্রথমে তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতেন, তারপর, ধীরে ধীরে অনেক মানুষ স্বোচ্ছাসেবার হাত বাড়ান, অন্যেরা অর্থদান করেন, যা অনেক প্রাণীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।
“যেহেতু এরা মানুষের খুব কাছাকাছি থাকে এবং মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগটা এদের বেশি তাই মানুষের দ্বারা তারা নির্যাতিতও হয় বেশি, খুব সহজেই এদেরকে আঘাত করা যায়, বিশেষ করে কুকুরকে,” বলেন এমিল।
“মানুষের ভিতরে ভালোবাসাটা থাকে, এটার অস্তিত্ব আছে, এটাকে একটু পিন পয়েন্ট করা দরকার, যেমন এই প্রাণীটি আপনার প্রতিবেশীর এবং এর প্রতি আপনার দায়িত্ব রয়েছে।”
এমিলের স্বপ্ন তিনি বাংলাদেশে একটি প্রাণিকল্যাণ ইন্সটিটিউট গড়ে তুলবেন যেখানে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাণীদের ডে-কেয়ার, পঙ্গু প্রাণীদের জন্য ফিজিওথেরাপি সেন্টার, প্রাণীর চিকিৎসার উপর বিভিন্ন ধরনের কোর্স বা প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রাণিকল্যাণ বিষয়ে গবেষণা করার সুযোগ, লাইব্রেরি ইত্যাদি।
‘প ফাউন্ডেশন’ মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্নরকম কার্যক্রম ও প্রচারণা করে আসছে, যা মানুষের মনে প্রাণীদের সম্পর্কে কুসংস্কার ও ভুল ধারণাকে দূর করবে বলে তিনি আশা করেন। সংগঠনটি শুধুমাত্র প্রাণীদের সুস্থ করে তোলার কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তাদের দত্তক দেওয়ার কাজটিও তারা করে থাকে।
Comments