করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’

করোনা মহামারির শুরুর পর থেকে সংক্রামক ভাইরাসটি জিনের গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্রমাগত রূপ পাল্টে ফেলছে। এর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বকে মহামারির দ্বিতীয় দফা বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছিল। টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে সেই বিপর্যয় প্রায় কাটিয়ে উঠেছিল বিশ্ব।
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির শুরুর পর থেকে সংক্রামক ভাইরাসটি জিনের গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্রমাগত রূপ পাল্টে ফেলছে। এর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বকে মহামারির দ্বিতীয় দফা বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছিল। টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে সেই বিপর্যয় প্রায় কাটিয়ে উঠেছিল বিশ্ব।

মানুষ একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল। কিন্তু, হঠাৎ করেই মহামারি নিয়ে আবার নতুন শঙ্কার মধ্যে পড়েছে বিশ্ব। কারণ, কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এটিকে 'উদ্বেগজনক' হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর নাম দিয়েছে ওমিক্রন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, রূপান্তরিত এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট আরও বেশি সংক্রামক। একইসঙ্গে বর্তমানে যেসব করোনার টিকা আছে সেগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়তো অতিক্রম করতে পারে। তবে, এ নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা এটিকে 'সুপার স্ট্রেইন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর জিনে সর্বপ্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের সঙ্গে ৩০ ধরনের বেশি মিউটেশন হয়েছে। যা এ পর্যন্ত শনাক্ত যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি এবং ডেল্টার তুলনায় দ্বিগুণ।

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণা অনুযায়ী, ওমিক্রন প্রতিরোধে টিকার সক্ষমতা অন্য যে কোনো ধরনের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। রূপান্তরিত এই করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে ৩২টি মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে। এই স্পাইকের মধ্যে ২টি খুব দ্রুত ছড়াতে সহায়ক এবং ৩টি কোষে ঢোকার ক্ষেত্রে সহজে অনুপ্রবেশ করতে ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়াও, ওমিক্রনের কোষের দেওয়ালে অন্যান্য ধরনের তুলনায় একটি প্রোটিনের ঘাটতি আছে। যে কারণে এটি বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা পেয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এইডস আক্রান্ত কোনো মানুষের দেহে সংক্রমণের পর করোনাভাইরাস তার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের রূপ পেয়েছে। ওমিক্রন বয়স্কদের চেয়ে শিশু এবং কম বয়সীদের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশটিতে নতুন আক্রান্ত ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ওমিক্রন শনাক্ত হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও বতসোয়ানা, হংকং, ইসরাইল, ইউরোপের যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়ামে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কয়েকটি দেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ভারত ইতোমধ্যেই আফ্রিকার দেশগুলো থেকে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশেও সেই পথে হাঁটছে। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ।

তবে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে নিরাপদ থাকতে করোনার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English
2712 Compete for 300 Seats in national polls 2024

12th national election: 2,713 aspirants to vie for 300 seats

A total of 29 registered political parties have nominated their candidates for the election scheduled for January 7

2h ago