মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর গুটিবসন্তের টিকা

ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের মে'র শুরু থেকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে কয়েকজনের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আফ্রিকার কিছু অংশে স্থানীয় এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের বেশিরভাগ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে, কিছু ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স মারাত্মক হতে পারে। যদিও তা বিরল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশে হাজার হাজার মানুষের মাঝে এই রোগের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে এটি বিরল।

কিন্তু, ফ্রান্স শুক্রবার মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করেছে বলে এএফপি জানিয়েছে।

মাঙ্কিপক্স কী

মাঙ্কিপক্স এমন একটি ভাইরাস যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। এর উপসর্গ গুটিবসন্তের মতো হলেও ক্লিনিক্যালি কম গুরুতর।

আফ্রিকায় কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ায় শিকারি ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানরসহ অনেক প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ সীমিত।

মাঙ্কিপক্সের আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গের মধ্যে আছে- মুখ ও হাতের তালুতে ক্ষত বা গুটি, খোসপাঁচড়া, জ্বর, পেশীতে ব্যথা এবং ঠাণ্ডা লাগা।

এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সালে জায়েরে (বর্তমানে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) মানুষের প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। তখন সেখানের একটি অঞ্চলের ৯ বছর বয়সী ছেলের মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া যায়।

১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি আফ্রিকান দেশ - বেনিন, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন এবং দক্ষিণ সুদানে মানুষের মাঝে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।

২০০৩ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা ছিল প্রথমবারের মতো আফ্রিকার বাইরে কোনো দেশে এই রোগের সংক্রমণ।

কীভাবে ছড়ায়

সংক্রামিত প্রাণীর রক্ত, শারীরিক তরল, ত্বকের ক্ষত বা শ্লেষ্মার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ফলে প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে এই রোগ ছড়ায়।

দ্বিতীয়ত সংক্রমিত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়।

শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ফেস টু ফেস যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। যা স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবারের সদস্য এবং সংক্রামিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের যোগাযোগকে বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

কতটা গুরুতর

সাধারণত এই রোগের উপসর্গ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি গুরুতর হতে পারে। কারণ, ভাইরাস এক্সপোজারের মাত্রা রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং জটিলতার ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এএফপি বলছে, শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বিভিন্ন হতে পারে। তবে, নিবন্ধিত সংক্রমণে তা শূন্য থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে আছে।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক সাইমন ক্লার্ক এসএমসিকে বলেন, আমাদের অনুমান- পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেন যা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে আছে সেখানে মৃত্যুর হার প্রায় এক শতাংশ। কঙ্গো অঞ্চলে এমন একটি স্ট্রেন পাওয়া যায় যা প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে এই স্ট্রেন নেই।

কোনো চিকিৎসা আছে?

এএফপি বলছে, এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কিন্তু, গুটিবসন্তের ভ্যাকসিনের সরবরাহ এখন সীমিত। কারণ বিশ্বব্যাপী এই রোগটি নির্মূল হয়েছে।

এপিডেমিওলজিস্ট এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ এরিক ফিগল-ডিং বলেন, ভালো খবর হচ্ছে গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। কিন্তু, দুঃসংবাদ হলো ৪৫ বছরের কম বয়সী বেশিরভাগ মানুষের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া নেই।

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago