সরকারকে ২ কোটি ডোজ স্পুতনিক-ভি টিকা কেনার প্রস্তাব গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের

সরকারকে রাশিয়ান স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিনের দুই কোটি ডোজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতি ডোজের দাম পড়বে আট ডলার। গত ৬ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করে ও তাকে চিঠি লিখে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোভিড সমন্বয়কারীও উপস্থিত ছিলেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর ৯ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া আরেক চিঠিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালকে রাশিয়ান টিকার বাংলাদেশি ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এই দুই চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে গত ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখান থেকেও কোনো উত্তর না পাওয়ায় সর্বশেষ গত ২৪ জুন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসকে।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার আসলে তেমন কিছু বলার নেই। আমরা চিঠি দিয়ে সরকারকে বিস্তারিত জানিয়েছি। হ্যাঁ বা না, কোনো উত্তর পাইনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কি আপনার বৈঠক হয়েছিল টিকা কেনার বিষয়টি নিয়ে? তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আপনারা যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের থেকে জানতেন, তবে, ভালো হতো। কারণ, এই তিন জনের সঙ্গে বৈঠক করেই আমরা টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেই বৈঠক অত্যন্ত সন্তোষজনক ছিল। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্ট ফার্ম (আরডিআইএফ) তাদের টিকা বিক্রির জন্যে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে এলএলসি এমইবিটিইএক্সকে নিয়োগ দিয়েছে এবং এলএলসি এমইবিটিইএক্স লিখিতভাবে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালকে বাংলাদেশে তাদের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। চিঠিতে আমরা এসব সংযুক্তি পাঠিয়েছি। রাশিয়ান কোম্পানির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করিনি, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’

রাশিয়ান কোম্পানি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করল কেন, জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আরডিআইএফ যে দেশের সঙ্গে চুক্তি করে, প্রথমে তারা সেই দেশের যেকোনো বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগটা করে। সে কারণে আরডিএফআই সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমাদের সঙ্গে করেছে। কিন্তু, আমার সঙ্গেই যোগাযোগ করার কী কারণ, সেটা তো আমি বলতে পারব না। এক বছর আগেও গবেষণায় সহযোগিতার জন্যে আরডিআইএফ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তখন সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তেমন কোনো আগ্রহ না পাওয়ায় আমি তাদেরকে সরাসরি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেই। সম্প্রতি দেশে স্পুতনিক-ভি অনুমোদন পাওয়ায় তারা আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’

‘বহু বছর আগে থেকে, অর্থাৎ সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। হয়তো আরডিএফের কাছে সেসব তথ্য রয়ে গেছে। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা খোঁজ নিয়ে হয়তো মনে করেছে যে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করা যায়, হয়তো তারা আমাদের কাজ সম্পর্কেও জানে। এসব কারণেই হয়তো তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা যোগাযোগ করায় আমি সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছি। যেহেতু বাংলাদেশের এই মুহূর্তে টিকা খুব দরকার’, বলেন তিনি।

চুক্তি হলে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা পেতে কতদিন সময় লাগবে, জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘চুক্তি সাপেক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই তারা এক কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পারবে। আর এক মাসের মধ্যে আরও এক কোটি ডোজ। রাশিয়ার চার্টার্ড প্ল্যানে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে আট ডলার। ভবিষ্যতে চাইলে এই দাম আরও কমানোর আলোচনা করা যেতে পারে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে রাশিয়া বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনেও সহায়তা করতে আগ্রহী হবে। কিন্তু, যদি দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে বর্তমানে যে দামে তারা দিতে চাইছে, তা ধরে রাখাও কষ্টকর হবে। কারণ, সারাবিশ্বে বর্তমানে টিকার চাহিদা খুব বেশি। একইসঙ্গে দ্রুত টিকা পাওয়ায় নিশ্চিত করা যাবে না।’

এখানে এজেন্ট হিসেবে আপনার লাভ কী?, তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো লাভ নেই। কিছু আর্থিক লাভ হবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের। আর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের লাভ মানে দেশের গরিব মানুষের লাভ। গরিব মানুষের জন্যে কাজ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দেশ ও দেশের জনগণ। টিকা ছাড়া স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যাবে না। চীনের টিকার চেয়েও দুই ডলার কমে সরকার যদি রাশিয়ান টিকা না কিনতে চায়, আমাদের কিছু করার নেই, বলারও নেই। আমাদের টিকা দরকার কোটি, কিনছি লাখ—এভাবে তো হবে না। গণটিকা দেওয়া যাবে না।’

দেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায় না?, জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অবশ্যই যায়। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাকে দায়িত্ব দিলে রাশিয়ান টিকা দেশে উৎপাদনের অনুমোদন এনে দিতে পারব। ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দিলে তিনি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন এনে দিতে পারবেন। কিন্তু, সিদ্ধান্ত তো সরকারকে নিতে হবে। আমরা বারবার চিঠি লিখছি, তার উত্তরই দিচ্ছে না সরকার!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Chattogram’s garment factories fear fallout from US tariffs

Owners of Chattogram-based readymade garment factories, many of which do business with buyers in the United States, are worried about a US tariff hike to 35 percent set to take effect on August 1.

11h ago