খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় দেশের ৫ কোটি ২ লাখ মানুষ

বাংলাদেশে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি ২ লাখে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে।
ফাইল ফটো

বাংলাদেশে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি ২ লাখে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে।

'এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পর্যালোচনা-২০২১' শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

যখন কারো খাবার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চিয়তা থাকে তখন তারা মাঝারি ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। অর্থ বা অন্যান্য সম্পদের কারণে বছরের পর বছর ধরে তাদের খাবারের পরিমাণ ও গুণগতমান হ্রাস করতে হয়।

মানুষ যখন সহনীয় মাত্রায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তখন তাদের মাঝেমধ্যে খাবার সংগ্রহের ব্যাপারে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় এবং অনেক সময় অর্থের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে খাবারের পরিমাণ ও গুণগত মান কমাতে বাধ্য হতে হয়।

এ ছাড়া, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অর্থ হলো, কারো খাবার ফুরিয়ে যাওয়া, ক্ষুধায় কষ্ট পাওয়া এবং দিনের পর দিন না খেয়ে থাকার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়া।

গত ২ বছরে, বাংলাদেশে সহনীয় ও তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার সাড়ে ৩১ শতাংশ।

যদিও এফএও মহামারিকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি। তারা বলছে, বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সংকট, ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও গ্রাস করেছে। তার একটি গুরুতর প্রভাব পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাহবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধির পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে।'

'খাদ্যের উৎপাদন কমে গেলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। আবার খাদ্যের দাম বাড়লে মানুষের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা কমে যায়। আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে কী কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে পারে।'

এ ছাড়া, বাংলাদেশে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে বলেও উল্লেখ করে আকাশ বলেন, 'ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। এটি ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আরেকটি কারণ হতে পারে।'

প্যারিসভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ মানুষের কাছে। এ ছাড়া, বাকি অর্ধেক জনগোষ্ঠির রয়েছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। যা একটি দরিদ্র এবং অসম দেশের প্রতিচ্ছবি।

বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৭টি দেশের মধ্যে একটি। সহনীয় বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ৩০ শতাংশের উপরে। এ তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, ইরান, কিরিবাতি, নেপাল ও ফিলিপাইন।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ সালে, প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। যা ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। যেটি ২০১৪ সালের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৭ লাখ কম।

২০২০ সালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় (১৯ দশমিক ৯ শতাংশ)।

অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি

২০১১ সালে অপুষ্টির হার ছিল ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৭ দশমিক ৯ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২০ সালে, দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যার মধ্যে অপুষ্টির হার ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।

গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখে। যা ২০১৮ সালের হিসাব থেকে ২ কোটি কমেছে। প্রতিবেদনে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে অপুষ্টির শিকার মানুষের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টির 'খুব বেশি প্রকোপ' থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০ দশমিক ২ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার। দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির পরিণতি হচ্ছে বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর থেকে অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। সে সময় ৬ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার ছিল। এ ছাড়া, তীব্র মাত্রায় অপুষ্টির শিকার হওয়া অন্যান্য দেশগুলো হলো—আফগানিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি ও পূর্ব তিমুর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় ২৩ শতাংশ শিশু এখনো অপুষ্টির শিকার।

Comments

The Daily Star  | English

Old, unfit vehicles taking lives

The bus involved in yesterday’s crash that left 14 dead in Faridpur would not have been on the road had the government not given into transport associations’ demand for keeping buses over 20 years old on the road.

49m ago