দেশে প্রথম ইনসুলিন কার্টিজ তৈরি করছে এসকেএফ

দেশের প্রথম ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরির কারখানা উদ্বোধন করছেন (বা থেকে) লার্স আর্নল্ডসেন, রাজর্ষী দে সরকার, অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, যারেফ আয়াত হোসেন, সিমিন রহমান ও উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন। ছবি: স্টার

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ও বিশ্বখ্যাত ইনসুলিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নভো নরডিস্ক যৌথভাবে ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরি করবে বাংলাদেশেই। এ লক্ষ্যে দেশের প্রথম ইনসুলিন কার্টিজ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে ইনসুলিন সহজলভ্য হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সফল পরীক্ষা ও অনুমোদনের পর আগামী বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যে ইনসুলিনের কার্টিজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এই অত্যাধুনিক উৎপাদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়।

এসকেএফ এর টঙ্গী ওষুধ কারখানা প্রাঙ্গণে পৃথক একটি বহুতল ভবনে ইনসুলিনের কার্টিজ তৈরির ইউনিট উদ্বোধন করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও এসকেএফ এর সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন রহমান, ডেনমার্কের নভো নরডিস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট (করপোরেট) লার্স আর্নল্ডসেন এবং নভো নরডিস্কের বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক রাজর্ষী দে সরকার।

কারখানাটি উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, ঢাকার ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন।

ইনসুলিনের কার্টিজ বিদেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করে। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে শিশিতে ইনসুলিন থাকে। অন্যান্য ওষুধের মতো শিশি থেকে সুইয়ের মাধ্যমে তা বের করে রোগীর শরীরে দেওয়া হয়।

আবার কলমের মতো একটা যন্ত্র ব্যবহার করে ইনসুলিন দেওয়া যায়। কোনো কোনো কলম একবার ব্যবহার করা হয়, ইনসুলিন ফুরিয়ে গেলে কলম ফেলে দিতে হয়। কিছু কলম আছে যাতে ইনসুলিন শেষ হলে আবার ইনসুলিন ঢোকানো যায়। এটা ঢোকানো হয় কার্টিজের মাধ্যমে। এই কার্টিজকে বলা হয় 'পেনফিল'। এই 'পেনফিল' তৈরি হবে এসকেএফ এর কারখানায়।

বছরে ৫ কোটি ২০ লাখ পেনফিল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এসকেএফ। তবে এর দামের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, 'ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এসকেএফ দেশের পথিকৃৎ। সুতরাং, আমাদের (ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) উচিত তাদেরকে আরও বেশি সহযোগিতা করা।'

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ইনসুলিনকে মানবিক অধিকার হিসেবে অভিহিত করে তিনি প্রত্যাশা করেন, এসকেএফ সাশ্রয়ী মূল্যে লাখো ডায়াবেটিক রোগীর মাঝে ইনসুলিন সরবরাহ করবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ এই যৌথ উদ্যেগের প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন এসকেএফ ও নভো নরডিস্কের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রতি ডেনমার্কের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীদের সেবা দিতে তার প্রতিষ্ঠান ৩ কোটিরও বেশি ইনসুলিনের শিশি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসকেএফ সবসময় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর।

নভো নরডিস্ক বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মহাব্যবস্থাপক রাজর্ষি দে সরকার তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ ডায়াবেটিক রোগী তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ইনসুলিন ব্যবহার করেন। যা দেশের চাহিদার অর্ধেক পূরণ করে।

২০১২ সাল থেকে এসকেএফ তাদের প্লান্টে নোভো নরডিস্কের ইনসুলিন তৈরি করে আসছে।

বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ হবে বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন।

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

15h ago