ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল 

৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ৪৫

শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেককে। ছবি: স্টার

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। ৮ শয্যার ওয়ার্ডে আজ শনিবার শিশু ভর্তি আছে ৪৫ জন। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেককে।

১০০ শয্যা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত শয্যা ৮টি। কিন্তু, গত বৃহস্পতিবার এ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৩৬ জন ও গতকাল ভর্তি ছিল ৩২ জন। আজ ভর্তি শিশু ৪৫ জন।

আজ দুপুরে হাসপাতালে সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ফরিদপুর ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন অনেকে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ওয়ার্ডের শয্যাগুলোতে রোগী আছে। ওয়ার্ডের ভেতরের মেঝেতেও অনেক রোগী।

শিশু ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায়, রাজবাড়ী থেকে আসা মাধবীকে নবজাতকসহ ওয়ার্ডের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। ছবি: স্টার

রাজবাড়ী সদরের গাছি গ্রামের বাসিন্দা মাধবী (২৫) গত শুক্রবার রাতে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে একটি সন্তানের জন্ম দেন। তবে, শিশুটির বেশ কিছু জটিলতা থাকায় তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

কিন্তু, শিশু ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায়, নবজাতকসহ মাধবীকে ওয়ার্ডের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে।

মাধবীর স্বামী নয়ন জমাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুক্রবার ফরিদপুর পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। এসে সিট পাই নাই। ওয়ার্ডের মেঝেতেও থাকার মতো জায়গা ছিল না। তাই নবজাতকসহ তাকে বারান্দায় চাদর পেতে থাকতে হচ্ছে।'

শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স দয়ারানী ঠাকুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তো ভালভাবেই জানি এভাবে মেঝেতে রেখে নবজাতক ও প্রসূতির চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় না। কিন্তু, আমরা কি করব। লোকজন এলে আমরা তো আর চিকিৎসা না দিয়ে বিদায় করে দিতে পারি না। তাই কষ্ট হলেও চালিয়ে নিতে হচ্ছে।'

তিনি জানান, এ হাসপাতালে শিশু বিষয়ক একজন কনসালটেন্ট থাকলেও, শিশু ওয়ার্ডের মেডিকেল অফিসারের পদটি শূন্য আছে অনেকদিন। এ ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত নার্স মাত্র ২ জন। এর পাশাপাশি আরও দুই জন শিক্ষার্থী (নার্সিং) দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

১০৪ বছর আগে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী এলাকায় মুজিব সড়কের উত্তর পাশে ও ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম পাশে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা হয়।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি ৫০০ শয্যা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়। এতে বাকি রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ১০০ শয্যার এ জেনারেল হাসপাতালে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক গনেশ কুমার আগরওয়ালা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করায়, আমাদের এখানে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।'

হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদ তৈরি করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক থাকলে তিনি সার্বিকভাবে হাসপাতালের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি জানতে ও জানাতে পারবেন। তাতে হাসপাতালের সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। বর্তমানে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এ হাসপাতালের সবকিছু পরিচালনা করেন। সিভিল সার্জনকে অনেক কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়।'

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে তীব্র জনবলের ঘাটতি আছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের মোট পদ ৩৭টি থাকলেও, কর্মরত আছেন ১১ জন। তবে ১৪৩টি কর্মচারীর পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১১২জন।

এ বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক গনেশ কুমার বলেন, 'জনবল সংকটের কথা প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও, অনেক সময় জনবলের সমস্যার কারণে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown after government warning

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

1h ago