যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা মানেই গবেষণা

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা মানেই গবেষণা
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি ইন্টারন্যাশনাল কানফারেন্সে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান ও মনিরা মনি।

গবেষণার কথা মনে করলে প্রথমেই যে শব্দটি মাথায় আসে তাহলো, 'গো+এষণা' অর্থাৎ কোনো কিছুর ব্যাপক অনুসন্ধান। ব্যাপক অনুসন্ধান আসলে কত প্রকার এবং কী, তার হাতেনাতে বাস্তবায়ন পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসে। 

যদিও দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এবং শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারণে গবেষণার প্রয়োগ ছিল অবশ্য কর্তব্য। তবে শুনতে নেহায়েত খারাপ লাগলেও, এটা সত্য যে মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণার যে প্রকৃত অর্থ এবং তার যে প্রয়োগ তা এখানে এসেই হয়েছে। গবেষণা এখানে কতটা নিখুঁত এবং সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা হয় লেখনীতে, সেটা বুঝতে পেরেছি এখানকার শিক্ষকদের গবেষণা প্রবন্ধ থেকে। 

মূলত যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা গবেষণাকেন্দ্রিক। আপনি যদি মনে করে থাকেন, দেশের মতো পুরো সিমেস্টার খুব একটা নিয়মিত পড়াশোনা না করে, পরীক্ষার আগে পড়ে ভালো করা যাবে বিষয়টা মোটেও তা নয়। এখানে রোজকার পড়া যেমন রোজই শেষ করতে হয়, তেমনি ক্লাসে শিক্ষকের সামনে আলোচনায় অংশ নিতে হয়। নতুবা নম্বরের খাতায় আপনার কিছুই যোগ হবে না।

ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে নাদিয়া রহমান।

কথা হচ্ছিল গবেষণা নিয়ে। একে তো এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোটাই গবেষণাকেন্দ্রিক। এ ছাড়া এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় বিস্তারিত আলোচনা এবং সৃজনশীলতার ওপর। অর্থাৎ, আপনাকে যে শত শত গবেষণা প্রবন্ধ পড়তে দেওয়া হচ্ছে, এ থেকে আপনি নিজে নতুন কী জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারবেন এবং তার প্রয়োগে বাস্তবে কী ভিন্নতা আসবে, সেদিকে আপনাকে নিয়োজিত করা। কোনো শিক্ষার্থী যদি সত্যই ভালো গবেষণা করতে চান, তাহলে এমন একাডেমিয়ার কোনো বিকল্প নেই। 

একটু কষ্ট হলেও ভালো লাগা কাজ করে যখন দেখি বিভিন্ন দেশের বহু অধ্যাপক গবেষণা নিয়ে তাদের বিভিন্ন চিন্তা আলোচনা করছেন। এমন পরিবেশ আপনাকে আসলেই উপলব্ধি দেবে যে, আপনি প্রকৃত অধ্যাপকদের সঙ্গেই আছেন। যেহেতু এখানে গবেষণার অনেক সুযোগ রয়েছে, তাই নিজের গবেষণার বিষয় কোনো অধ্যাপকের কাজের সমধর্মী হলে সহজেই গবেষণা সহকারী হিসেবে শেখার এবং কাজের সুযোগ পাওয়া যায় এবং এখানে কোনো গবেষণাই বৃথা যায় না। আপনি যে কাজটাই করবেন, সেটার প্রয়োগ মিলবে। 

সামার বা গ্রীষ্মে যখন দীর্ঘ ছুটি থাকে, অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখেছি গবেষণা সহকারী হিসেবে অধ্যাপকের সঙ্গে বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজ করতে। একে তো এর মাধ্যমে কাজের সংস্থান হলোই, পাশাপাশি অভিজ্ঞতার তালিকায় নতুন সংযোজনও হলো। ইতিবাচক দিক হলো, এখানে শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে গবেষণার পরিবেশ, পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের সরবরাহ রয়েছে। খারাপ লাগে ভেবে যে দেশে কত থিসিস পেপার, গবেষণা প্রকাশনার মুখ দেখে না। অথচ এখানে উচ্চশিক্ষা মানেই গবেষণা।

তাই যেসব শিক্ষার্থী মার্কিন মুল্লুকে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করছেন, তাদের অবশ্যই এমন একটি ভিন্ন একাডেমিয়ার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে, যেখানে শ'খানেক গবেষণা প্রবন্ধের মধ্য দিয়েই এই যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হবে। এমনকি আবেদনের সময়েই দেখতে চাওয়া হয়, এ নাগাদ আপনার কোনো গবেষণা কাজ কিংবা প্রস্তাবনা আছে কি না! আর যারা প্রকৃতঅর্থেই গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য অবশ্যই এটি একটি বড় সুযোগ!

 

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

4h ago