কোনো কোনো দেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে জামানত চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের হর্সশু ফলস দেখতে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা। প্রতীকি ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের হর্সশু ফলস দেখতে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা। প্রতীকি ছবি: রয়টার্স

মোটা দাগে পর্যটনবান্ধব দেশ হিসেবেই পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র। তবে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাগরিকদের জন্য কঠোর হচ্ছে দেশটির ভিসা নীতি। মোটা অংকের ডলার জামানত রেখে তবেই তারা পাবেন আরাধ্য মার্কিন ভিসা।

গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই নতুন নীতি চালু করতে যাচ্ছে দেশটি। সোমবার এক সরকারী প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিজনেস ও টুরিস্ট ভিসা দেওয়ার আগে তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার ডলার জামানত রাখা হবে। এই মর্মে একটি বন্ডে সই করতে হবে তাদেরকে।

ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের প্রবণতা দূর করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব দেশের নাগরিকদের এ ধরনের প্রবণতা দেখানোর পূর্ব নজির রয়েছে, তারাই মূলত এই নিয়মের আওতায় পড়বেন।

এই প্রকল্পের আওতায় মার্কিন কনসুলার কর্মকর্তারা চাইলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জামানত রাখতে পারবেন।

এমন কী, ভিসাপ্রার্থীর তথ্যে যাচাই-বাছাই ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ঘাটতি চিহ্নিত হলেও জামানত চাইতে পারবেন কর্মকর্তারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বর্তমান মেয়াদে অবৈধ অভিবাসন কমানোর লক্ষ্য হাতে নিয়েছেন। তিনি সীমান্ত সুরক্ষিত করতে বাড়তি সম্পদ খরচ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশিদের চিহ্নিত করার অভিযান শুরু করেছেন।

জুনে তিনি জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ১৯ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আংশিক ও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করেছেন।

ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইটের ভাড়া নাটকীয়ভাবে কমেছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় সর্বশেষ এত কম ভাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত সম্ভব ছিল।

মে মাসে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা এর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০ আগস্ট থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন এই ভিসা উদ্যোগের মেয়াদ আপাতত এক বছর।

কনসুলার অফিস চাইলে ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে পাঁচ, ১০ অথবা ১৫ হাজার মার্কিন ডলার জামানত চাইতে পারে। তবে ন্যুনতম ১০ হাজার ডলার চাওয়া হতে পারে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

ভিসার শর্ত মেনে ভ্রমণ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার সময় জামানতের পূর্ণ অর্থ পর্যটকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রজ্ঞাপনে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষ মাসে একই ধরনের নীতি চালু হয়েছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

২০২০ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া ওই নীতি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। 

ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে কীভাবে একটি দেশকে চিহ্নিত করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। তবে তিনি জানান, দেশের তালিকা আগামীতে হালনাগাদ করা হতে পারে। আরও বড় হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ  দেশের তালিকা।

মুখপাত্র বলেন, 'ওভারস্টে (ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও থেকে যাওয়া) হার, তথ্য যাচাই-বাছাই ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় ঘাটতি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস না করে শুধু বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ এবং পররাষ্ট্রনীতিকে বিবেচনায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ চিহ্নিত করা হবে।'

নতুন নীতি চালুর পর কতজন ভিসাপ্রত্যাশী প্রভাবিত হতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পররাষ্ট্র দপ্তর।

ট্রাম্প যেসব দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, সেসব দেশগুলোতেও ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এ ধরনের দেশের মধ্যে আছে চাদ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, মিয়ানমার ও ইয়েমেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন সংস্থাগুলোর সংগঠন ইউএস ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নতুন এই নীতিতে খুব বেশি ভিসা আবেদনকারী প্রভাবিত হবে না। খুব বেশি হলে দুই হাজার ভিসা আবেদনকারীকে এ ধরনের জামানত দিতে হতে পারে। মূলত, ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে খুব বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণও করেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। দেশগুলোর মধ্যে আছে বুরুন্ডি, জিবুতি ও টোগো।

জুলাই মাসে মার্কিন পার্লামেন্টে পাস হয় ট্রাম্পের 'বিগ, বিউটিফুল বিল'। এই অন্তর্বর্তী বাজেট প্যাকেজে অর্থায়নের অন্যতম উৎস হিসেবে ২৫০ ডলারের 'ভিসা সততা ফি' চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে বাস্তবায়ন হবে।

১ অক্টোবর থেকে অভিবাসন সংক্রান্ত ভিসা ছাড়া অন্য যেকোনো ভিসার ক্ষেত্রে ২৫০ ডলার জামানত রাখা হবে। যারা ভিসার শর্ত মেনে ভ্রমণ শেষ করবেন, তাদেরকে ওই জামানত ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

ইউএস ট্র্যাভেল নামের সংগঠন জানিয়েছে, এই নীতি বাস্তবায়ন করা হলে 'পর্যটক ভিসার খরচের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশের তালিকায় নাম লেখাবে যুক্তরাষ্ট্র।'

Comments

The Daily Star  | English
Unused Foreign Loans in Pipeline

Govt tightens foreign loan rules amid poor project fund use

The government has tightened its control over new foreign loans by introducing multiple preconditions for ministries and divisions, following their poor performance in using funds already in the pipeline.

11h ago