ব্লু মিটস গ্রিন: নীলচে ঘাসের শহরে বিজয় দিবস উদযাপন

ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকিতে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন। ছবি: নাদিয়া রহমান

'ব্লু গ্রাস' বা নীলচে ঘাসের শহর কেন্টাকির লেক্সিংটন। আনুমানিক ১৬ শতকের দিকে কিছু ইউরোপীয় যারা 'অদেখাকে দেখার উদ্দেশ্যে' আমেরিকায় পাড়ি জমান, তাদের হাত ধরে আসে এই নীলচে-সবুজাভ ঘাসের বীজ। এই লেক্সিংটন থেকে প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি মাইল দূরে বাংলাদেশের অবস্থান। 

দেশ থেকে এতটা দূরে পাড়ি জমালেও, নিজ দেশ, সংস্কৃতি তো সবসময় নিজেরই। নানা অভিযোগ, ভিন্ন মতামত থাকলেও দিন শেষে আমরা প্রতিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীই চাই ইতিবাচকভাবে নিজের দেশকে উপস্থাপন করতে। যেহেতু ডিসেম্বর মাস, একইসঙ্গে বিজয় দিবস। তাই শীতকালীন ছুটির আগে যত সেমিস্টার ফাইনালই থাকুক না কেন, বিজয়ের ইতিহাসটা উদযাপন করা চাই। 

সেই উদ্দেশ্যেই এই নীলচে ঘাসের শহরে আমরা যে কয়জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছি, তাদের উপস্থিতিতে এবং মূলত বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ইভেন্ট 'ব্লু মিটস গ্রিন'র আয়োজন করা হয়। শুধু নিজেদের মধ্যেই উদযাপনের আনন্দ যাতে সীমিত না থাকে, তাই আমরা চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীকেও আমন্ত্রণ জানানোর। 

শুরুটা হলো রবীন্দ্রনাথের 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে' দেশাত্মবোধক গান দিয়ে। গানের ভাষা ভিন্ন ছিল বটে, তবে গানের সুর, সঙ্গে আমাদের কয়েকজনের হাতের তাল এবং ছন্দে গানটির অর্থ খুব একটা দুরূহ নিশ্চয়ই হয়নি উপস্থিত থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: নাদিয়া রহমান

৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬'র ছয় দফা, কালরাত্রির পর স্বাধীনতা কিংবা আমাদের মুক্তির ঘোষণা এবং সব শেষে আমাদের বিজয়। ভিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দেশের ইতিহাস যখন উপস্থাপন করা হচ্ছিল, তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে হয়েছে ফিরে গেছি সেই উত্তাল সময়গুলোতে। বর্তমান প্রেক্ষাপট যাই হোক, ইতিহাস তো আমাদের বারংবার প্রতিবাদেরই। 

সংস্কৃতি, সুদীর্ঘ ইতিহাসের পথ পাড়ি দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর আয়োজনের শেষটুকুতে ছিল এই সকার (ফুটবল) আর রাগবির দেশে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট নিয়ে উপস্থাপন। এবারই প্রথম আমাদের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিক্রিয়েশন সেন্টার ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করেছে তাদের তালিকায়। যত যাই হোক, খেলার মাঠ পেরিয়েও ক্রিকেট বা আমাদের নিজেদের ফুটবলের তো ভিন্ন এক আবহ রয়েছে। তাই ইভেন্টের দ্বিতীয় দিনটা ছিল শুধুই ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচের। মূলত যেসব দেশের শিক্ষার্থীর কাছে ক্রিকেট এখনো নতুন তাদের জন্য। 
 
এই দুই দিনের আয়োজন শেষে আমাদের মনে হচ্ছিল, শত ব্যস্ততার মাঝেও স্বাধীনতার ইতিহাস, নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রচেষ্টাটুকু ক্ষুদ্র ছিল না। দেশেও যেমন এ সময়টা বার্ষিক পরীক্ষার তাড়া থাকতো, এখানেও তাই। হয়তো এখানে একটু বেশিই। গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দেওয়া, পিএইচডি যাত্রার নানা গুরুগম্ভীর কাজগুলো তো এ সময়টাতেই থাকে। এতসব জমাদানের তারিখ কিংবা ডেডলাইনের মধ্যেও আমাদের কয়েকজনের চেষ্টা ছিল, আর যাই হোক সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিজের দেশকে উপস্থাপন করব। সকার কিংবা বাস্কেটবল তালিকার পাশে যুক্ত হোক ক্রিকেট। আর আমাদের ইতিহাস তুলে ধরা, যেখানে আমরা প্রতিবাদ করেছি বারে বারে। কারণ আর যাই হোক, মানুষ তো কোনো শেকলেই বন্দি থাকার জন্য জন্ম নেয়নি।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh RMG sector

RMG sector on edge as tariff talks make no headway

The diverging outcomes threaten to create a multi-tiered tariff landscape in Asia, placing nations like Bangladesh at a serious disadvantage in the US market.

11h ago