রানির মৃত্যুতে শোক করছে না অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা 

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ইতিহাস প্রায় ৫০ হাজার বছরের। ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ নৌ কমান্ডার জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া দখল করে ঔপনিবেশিকতার গোড়াপত্তন করেন। 
কেয়ার্নসের তাজাপুকাই আদিবাসী সাংস্কৃতিক পার্কে রানি
কেয়ার্নসের তাজাপুকাই আদিবাসী সাংস্কৃতিক পার্কে রানি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ইতিহাস প্রায় ৫০ হাজার বছরের। ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ নৌ কমান্ডার জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া দখল করে ঔপনিবেশিকতার গোড়াপত্তন করেন। 

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এখনো বিশ্বাস করে, ৫০ হাজার বছর ধরে বাস করা আদিবাসীদের ভূমি দখল করে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করা হয়েছিল। 

তারা মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল নৃশংস। তখন গণহত্যা হয়েছিল। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো নিপীড়িত হয়েছিল। তাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। চুরি হওয়া প্রজন্মের গল্পগুলো ছিল আরও নিদারুণ। 

সিডনির ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির আদিবাসী অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক স্যান্ডি ও'সুলিভান শুক্রবার সকালে টুইটারে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আদিবাসীরা রানির প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রতিক্রিয়া জানাবেন এমনটা আশা করা 'আপত্তিজনক'।

তিনি আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের জীবনকে আরও খারাপ করে তুলেছে তার মৃত্যুতে আদিবাসীরা সম্মান দেখাবে এই দাবি করা অযৌক্তিক। পরিবর্তনকে প্রভাবিত করার জন্য তিনি কী করতে পারতেন এবং করেননি তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।'

রানি এলিজাবেথ তার ৭০ বছরের শাসনামলে ১৬ বার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাংবিধানিক প্রধান। ২০০২ সালে তিনি বিখ্যাত কেয়ার্নসের তাজাপুকাই আদিবাসী সাংস্কৃতিক পার্কে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেছিলেন। সেটাই আদিবাসীদের সঙ্গে তার প্রথম এবং শেষ দেখা। 

ব্রিটিশদের অস্ট্রেলিয়া দখলের ১৩৪ বছর পর রানী এলিজাবেথের জন্ম হলেও তার ক্ষমতার ৭০ বছরে তিনি আদিবাসীদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তার মৃত্যুতে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন না। কেউ কেউ ঔপনিবেশিকতায় তার ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

একজন আদিবাসী নারী সংগঠক রানিকে ঔপনিবেশিকতার একজন 'স্থপতি' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আদিবাসীদের 'বেদনা ও কষ্টের' ওপর রানি তার সম্পদ তৈরি করেছিলেন।'

অনেকেই বলছেন, রানি জমি চুরিতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে আদিবাসীদের জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারতেন বলেও জানান তারা।

কিছু সমালোচক রানির উত্তরাধিকারের অংশ হিসেবে আদিবাসী সাংস্কৃতিক শনাক্তকারীদের চুরি করা এবং মুছে ফেলাকে উদ্ধৃত করেছেন, তাকে চিহ্নিত করেছেন 'যুদ্ধাপরাধী' হিসেবে।

ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে 'আদিবাসী শিল্প সমষ্টি' জানায়, 'আজ আমরা সেই সমস্ত চুরি, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আঘাতপ্রাপ্ত জীবনের জন্য শোক প্রকাশ করছি, যারা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে নির্যাতিত এবং ধ্বংস হয়েছিল।'

মেলবোর্নভিত্তিক নারী অভিবাসী ও শরণার্থী গ্রুপ হারমনি অ্যালায়েন্সের প্রধান আইনজীবী নিয়াডল নিউন এক টুইটে বলেন, 'এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সবাই যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকার উদযাপন করে না। ২০ শতক জুড়ে বহুবার তিনি আদিবাসীদের অধিকারের ব্যাপারে  হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। পারতেন আদিবাসী এবং 'মুকুট' এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে। তার কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতার চেয়েও বেশি ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তিনি  কিছুই করেননি।'

অধ্যাপক উইরাডজুরি স্যান্ডি বলেন, 'আজ একটি নৃশংস ঘটনা যে যুদ্ধাপরাধীকে  সম্মানিত করা হবে যখন সমগ্র জনসংখ্যা এবং ঔপনিবেশিক গণহত্যা, আক্রমণ, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের যুদ্ধের দাগ বহন করছে।'

অধ্যাপক স্যান্ডি আরও বলেন,' সবাই বলে যে তিনি একজন সদয় অভিভাবক ছিলেন। তারা দেখতে ব্যর্থ হয় যে, তার কয়েক দশক ধরে এমন একটি চাকরি ছিল যা আদিবাসীদের জীবনকে আরও খারাপ করে তুলেছিল।'

গেটআপের সিইও বুন্ডজালুং লারিসা বাল্ডউইন বলেছেন,   রানির শোকে ১৫ দিনের জন্য সংসদ বসবে না জানতে পেরে তিনি হতাশ। 

'একজন আদিবাসী হিসেবে তিনি আমার রানি নন কিন্তু সংসদ তো আমার,' বলেন তিনি।

অনেক আদিবাসী সিডনি হারবার ব্রিজে আদিবাসী পতাকা অর্ধনমিত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, এমন একজনের মৃত্যুকে সম্মান জানাতে আদিবাসী পতাকা অর্ধনমিত করা হবে কেন যিনি আদিবাসী নিপীড়নের প্রতীক ছিলেন? 

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Reference Institute for Chemical Measurements (BRiCM) developed a dengue rapid antigen kit

Diagnose dengue with ease at home

People who suspect that they have dengue may soon breathe a little easier as they will not have to take on the hassle of a hospital visit to confirm or dispel the fear.

9h ago