অভিবাসী কূটনীতিতে সরকারের দক্ষতা দৃশ্যমান হচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

কূটনীতিতে বাংলাদেশের দক্ষ প্রায় সবারই জানা। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার তাদের ১০ লাখেরও বেশি নাগরিককে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ দৃশ্যমান কিছুই করতে পারেনি। এমনকি বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকেও বাংলাদেশের পক্ষে বা মিয়ানমারের অন্যায়ের বিপক্ষে সমর্থন আদায় করতে পারেনি।

সম্প্রতি মিয়ানমারের ছোড়া গোলা বাংলাদেশের ভেতরে পড়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের জল-স্থল-আকাশসীমা বারবার লঙ্ঘন করছে। কিন্তু, বাংলাদেশের কূটনীতি কিছুই করতে পারেনি, পারছে না। 'বন্ধু রাষ্ট্র'গুলোর মাধ্যমে এসব ঘটনায় নিন্দাও করাতে পারেনি বাংলাদেশ।

ভারত বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে আমাদের দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। আমাদের 'কূটনীতি' কিছু করতে পারেনি। তারা আমাদের ন্যায্য অধিকার নদীর পানি বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছে। আমরা কিছু করতে পারিনি। এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে আমাদের কূটনীতি কাজ করে না, করেনি।

ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা, শ্রমবাজারসহ আরও অনেক সুযোগ আছে, যেগুলো আমাদের পাশের দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। দেশের অর্থ পাচার হয়েছে, হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু এসব কোনো জায়গায় বাংলাদেশের কূটনীতি কাজ করে না। অন্য কোনো দেশে বা বিশ্বরাজনীতিতে অথবা আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা তো দূরের কথা, নিজেদের অধিকারগুলোও আমরা কোনো দরবার থেকে আদায় করে আনতে পারি না, পারেন না আমাদের কূটনীতিকরা।

গোটা দুনিয়ায় এখন অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের কূটনীতি পাড়ায় সেগুলো আলোচনা হয় বলে মনে হয় না। অথচ অনেক দেশই তাদের দূতাবাস বা হাইকমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের চাহিদা মতো শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে তাদের শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলছে। আমাদের দূতাবাস বা হাইকমিশনগুলো কী করছে?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, 'অভিবাসী কূটনীতি' নামে তারা এক নতুন কূটনীতি শুরু করেছে। এই কূটনীতি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে না, বরং নিজ দেশের অভিবাসী নাগরিকদের সঙ্গে। বিদেশে থেকে যারা সরকারের মন্দ কাজের সমালোচনা করেন, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে এই কূটনীতি।

মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নয়নে, প্রয়োজনে কোনো সরকারি দপ্তরে ইমেইল করলেও অনেক সময় বছর গড়িয়ে যায় তার উত্তর পেতে। কিন্তু অভিবাসী কূটনীতি প্রয়োগ করতে সরকারের বা বিদেশি মিশনগুলোর একটুও সময় লাগেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আমাদের দক্ষ কূটনীতিকরা। বিশেষ এই কূটনীতিতে তারা ইতোমধ্যে দক্ষতা দেখাতে শুরু করেছেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি নুর আলম চৌধুরী পারভেজকে সাদা পোশাকের ডিবি বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম এই গ্রেপ্তার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'একটি গোয়েন্দা সংস্থার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পারভেজকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্য পুলিশ খতিয়ে দেখছে।'

পারভেজের পরিবার জানিয়েছে, পারভেজের নামে মামলা তো দূরের কথা, কোনো অভিযোগও নেই থানায়। এমনকি কখনো তার নামে কোনো মামলা ছিল না। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূলত প্রবাসী সাংবাদিক শামসুল আলম লিটনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

লিটন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক এবং গ্রেপ্তারকৃত পারভেজের ছোট ভাই। লন্ডন থেকে প্রকাশিত সবচেয়ে পুরাতন ও প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা সুরমার সম্পাদক লিটন। অভিযোগ রয়েছে, লিটন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির সময়ে তিনি রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের উপ-প্রেস সচিব ছিলেন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরকে কেন্দ্র করে সুরমা পত্রিকায় তার সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগ রয়েছে। সেখানে সরকারের গুম, খুন, নির্বাচনহীনতা তুলে ধরেছে। অভিযোগ উঠেছে, লিটনকে নিয়ন্ত্রণ করতেই তার বড় ভাই পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেমনটা করা হয়েছিল ড. কনক সরোয়ারের বোনের সঙ্গে।

আমাদের কূটনীতি অন্য কোথাও কাজ করুক অথবা না করুক, সরকারের প্রবাসী সমালোচকদের বেলায় ঠিকঠাক কাজ করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের অভিবাসী কূটনীতি দৌড়াচ্ছে একদম খরগোশ গতিতে। ব্যাপক দক্ষতা, সফলতা দেখাচ্ছেন আমাদের অতিদক্ষ কূটনীতিকরা।

বাংলাদেশের সরকার অনেক দিন থেকে প্রবাসী সমালোচকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। দূতাবাসে, হাইকমিশনে প্রবাসী সমালোচকদের পাসপোর্ট আটকে রাখা, নবায়ন না করা, কালো তালিকাভুক্ত করে রাখাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। দলের প্রবাসী নেতাকর্মীদের দিয়েও সরকার সমালোচকদের হয়রানি, নির্যাতনের চেষ্টা করা হয়। এতকিছু করেও আমাদের সরকার সন্তুষ্ট হতে পারেনি, পারছে না। এখন অভিবাসী কূটনীতি শুরু করেছে। অর্থাৎ সরকারের অভিবাসী সমালোচকদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারের এই অভিবাসী সমালোচক বিরোধী কূটনীতি বা অভিযান আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। পাশাপাশি সরকারের সাফাই গেয়ে কলাম লিখতে খোঁজা হচ্ছে ভাড়াটিয়া লেখক।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুরমা পত্রিকার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন বলেন, 'বাংলাদেশের সরকার হয়তো ইউরোপ-আমেরিকার প্রশাসনকেও বাংলাদেশের মতো প্রশাসন ভাবতে শুরু করেছে। তারা হয়তো ভাবছে গোটা পৃথিবী এখন আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। এই জন্যই অভিবাসী কূটনীতি নামের এমন উদ্ভট বুদ্ধি তাদের মাথায় এসেছে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সরকার অভিবাসীদের বাকস্বাধীনতাও কেড়ে নিতে চায়। তারা হয়তো ভুলে গেছে, ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষকে কথা বলতে দেওয়া হয়। এসব দেশের সরকার, প্রশাসন নাগরিকদের সম্মান করে। নাগরিকদের অধিকারে বিশ্বাস করে।'

'শেখ হাসিনার সরকার তার সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে', যোগ করেন লিটন।

পলাশ রহমান, আহ্বায়ক, ভেনিস-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, ইতালি

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago