বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা যাচাই করবে সৌদি প্রতিষ্ঠান

বহির্বিশ্বে দক্ষ ও অর্ধ-দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের চাহিদা বরাবরই বেশি। সাম্প্রতিক  বছরগুলোতে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে। শ্রমবাজার ধরতে বাংলাদেশও সে দিকে নজর দিয়েছে, জোর দিয়েছি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানিতে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানসহ কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

বহির্বিশ্বে দক্ষ ও অর্ধ-দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের চাহিদা বরাবরই বেশি। সাম্প্রতিক  বছরগুলোতে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে। শ্রমবাজার ধরতে বাংলাদেশও সে দিকে নজর দিয়েছে, জোর দিয়েছি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানিতে।

কিন্তু, নানা কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতার ওপর আস্থা রাখতে পারেন না বিদেশি নিয়োগদাতা ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। দক্ষতা ও সনদের মান নিয়ে সন্দিহান থাকেন তারা। ফলে যোগ্য বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো বেতন ও সুবিধার চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। আর প্রতিনিয়ত এমন সমস্যা মুখামুখি হচ্ছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এমন বাস্তবতার ‍মুখে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমবাজার সম্প্রসারণে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সৌদির সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই দক্ষতা যাচাই করা হবে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের।

এজন্য সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

গত বুধবার ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে  বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিএমইটি মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এবং সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

চুক্তির অধীনে সৌদির সরকারি প্রতিষ্ঠান তাকামল হোল্ডিং বাংলাদেশ বসেই দক্ষ/ অর্ধ-দক্ষ কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের কাজ করবে এবং সনদ প্রদান করবে। প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, ওয়েল্ডিং, কার্পেন্টার পেইন্টার, প্লাস্টারার, বিল্ডারসহ ২৩টি বিষয়ে দক্ষতা যাচাই ও সনদ প্রদান করা হবে।

'তাকামল' সৌদি আরবে শ্রমবাজার উদ্ভাবনের মূল চালক হিসেবে টেকসই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব সক্রিয়করণ, নিয়োগকর্তা ও সম্ভাব্য কর্মীদের মধ্যে ব্যবধান দূর করা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের নির্দিষ্ট চাকরিতে যোগ্য করে তোলার কাজ করছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ৫ বছর মেয়াদী এ সনদের মাধ্যমে একবার সৌদি আরব গেলে আর কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। সনদধারী বাংলাদেশি কর্মীদের সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট খাতে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। এছাড়া বেতন ভাতাদিও দক্ষতা অনুযায়ী পাওয়া যাবে।

বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের যাচাই করতে এই  ব্যবস্থার খুব শিগগির শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এ চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছে। আশা করছি, আগামী দিনে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ/ অর্ধ-দক্ষ কর্মীরা সনদ নিয়েই সৌদি আরবে আসবেন।

'সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীরা ভাল বেতন-ভাতার চাকরির সুযোগ পাবে। এতে  আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে', তিনি যোগ করেন।

এ নিয়ে সৌদি যেতে ইচ্ছুক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশ আনন্দিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিকে যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ দীর্ঘসূত্রিতা, অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে নজর দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন। কারো অভিমত, দক্ষতা যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে দেশে ভালো মানের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

সৌদির একটি তেল কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি খুরশিদ আলমের মতে, 'ভালো উদ্যোগ, যার ফলে অভিজ্ঞ লোক পাঠালে ভালো বেতনে চাকরি ছাড়াও সৌদি এসে বেকার থাকবে না বাংলাদেশিরা।'

সৌদির তাবুক প্রবাসী আয়াজ উদ্দিন শাকিল বলছেন, 'আশাকরি সৌদি আরবে ভালো বেতন নিয়ে কর্মী আসতে পারবে এবং দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।'

দেরিতে হলেও অনেক ভালো কাজ উল্লেখ করে সিলেটের বাশার শিকদার বলেন, 'বাংলাদেশে যেন কেউ টাকা দিয়ে সনদ কিনতে না পারে সেদিকটা কিন্তু চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।'

জেদ্দায় কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী নিজাম খান লিখেছেন, 'শুরু থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম সৌদির তত্ত্বাবধানে হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।'

দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশ বসে সৌদির সরকারি প্রতিষ্ঠান যেহেতু দক্ষতা যাচাই ও সনদ প্রদান করবে, কাজেই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

লেখক: ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Net foreign investment in stocks

Foreign investors returning to stock market

After a long time, foreign investors are showing renewed interest in buying shares of listed companies in Bangladesh as they hope good governance will return to the local stock market following the recent political changeover.

11h ago