প্রবাসে

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সুবাদে জমজমাট এসকর্ট ব্যবসা

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভা শেষে সন্ধ্যার পরে বিশ্বের অতি ধনী ও প্রভাবশালীরা বিনোদনের জন্য এসকর্টদের সঙ্গ নিচ্ছেন— এমন খবরে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৩ সালের বার্ষিক সভা হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের দাভসের আলপাইন রিসোর্টে দাভস কংগ্রেস সেন্টারে। ১৪ জানুয়ারি ২০২৩। ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভা শেষে সন্ধ্যার পরে বিশ্বের অতি ধনী ও প্রভাবশালীরা বিনোদনের জন্য এসকর্টদের সঙ্গ নিচ্ছেন— এমন খবরে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

ফোরামের এই সভার সময় প্রতি বছরই এসকর্টদের যথেষ্ট চাহিদা থাকে। তবে এ বছর এই চাহিদা একটু বেশিই। ফলে, বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে এ বিষয়ে।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জুরিখের এসকর্ট এজেন্সি সুইস ইভের প্রধান একটি স্থানীয় পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে বলছেন, এ বছর তাদের ব্যবসা 'অত্যন্ত ভালো'। তিনি গত ৬ বছর ধরে জুরিখভিত্তিক এসকর্ট এজেন্সিটি চালাচ্ছেন।

জানা যায়, অধিকাংশ প্রভাবশালীরা সন্ধ্যায় খাবার খেতে চান ছিমছাম ও সাধারণ একজন নারী এসকর্টের সঙ্গে। এরপর কিছুটা সময় তার সঙ্গে ঘুরে বেড়াবেন এবং একাংশ সময় কাটাবেন একান্তে, হোটেলের কামরায়। তাদের মধ্যে অবশ্য অনেকেই শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহী না।

এসকর্ট হিসেবে অনেক নারীই আসেন সাময়িক সময়ের জন্য। সুইস ইভে কেউ পূর্ণকালীন কাজ করেন না। তাদের অধিকাংশের রয়েছে অন্য কোনো পেশা। অনেকে আবার শিক্ষার্থী। নিজের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাতে অল্প সময়ে এত ভালো আয়ের সুযোগ তারা লুফে নেন।

ফোরামের কর্তারা মূলত এই এসকর্টদের সঙ্গে অনেকটা বন্ধুর মতো সময় কাটাতে চান। উচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে দূর থেকে তাদেরকে দেখলে মনে হবে যেন দুজনে দুজনার পূর্বপরিচিত। ভাবটা এমন, পরিচিত কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

এসকর্টদের সহচার্যের জন্য খরচ কত? এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর, এ বছর ফোরাম চলাকালীন সময়ের জন্য 'প্রতি ঘণ্টায় ৭০০ ফ্রাঙ্ক'। যেকোনো পেশার, যেকোনো মানুষের জন্যই এই খরচ একই।

মোট খরচের তালিকা করতে গেলে বিষয়টি এমন, প্রতি ঘণ্টার জন্য ৭০০ ফ্রাঙ্ক, রাত্রিযাপন করলে ২ হাজার ৪০০ ফ্রাঙ্ক এবং পুরো দিনের জন্য সহচার্য পেতে গুনতে হবে ৩ হাজার ২০০ ফ্রাঙ্ক। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে যাতায়াত ভাড়া হিসেবে আরও ২০০ ফ্রাঙ্ক।

প্রতি ফ্রাঙ্কে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২০ টাকা হিসাবে সারা দিনে একজন এসকর্টের জন্য খরচ হবে অন্তত ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। সেইসঙ্গে তার খাবার-পানীয়সহ অন্যান্য খরচের হিসাব তো থাকছেই।

এ বছর অন্তত ৩ হাজার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের প্রতিনিধি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভায় অংশ নিয়েছেন। এটা একটা রেকর্ড। এত ধনীর সভার কারণে এসকর্ট ব্যবসার পাশাপাশি রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে প্রাইভেট উড়োজাহাজের পার্কিং ব্যবসাতেও।

একটি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে অপর একটি এসকর্ট এজেন্সির প্রধান বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় এসকর্ট সংকটের কারণে আশেপাশের দেশ থেকেও উড়িয়ে আনা হয়েছে অনেক এসকর্টকে।

অর্থনৈতিক ফোরামের সভা

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা সুইজারল্যান্ডের দাভসে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ফোরামের মূলমন্ত্র 'একটি খণ্ডিত বিশ্বে সবার সহযোগিতা'।

বিশ্বের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা এবং আগামী বছরের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক করণীয় নিয়েই আলোচনার হয় সভায়।

সুইসের প্রগতিশীল সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অনেকেই পুঁজিবাদের সমালোচনা করে এই সভার সময়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এ বছর রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধিকে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি জেলেনিস্কা এ বছরের সম্মেলনের এক বিশেষ আকর্ষণ।

করোনা মহামারির প্রভাবে ২ বছর বন্ধ থাকার কারণে এ বছরের সভায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক বেশি।

একটি তথ্য জানলেই নয়, পৃথিবীর মোট সম্পদের প্রায় ৭৫ শতাংশ রয়েছে এই ফোরামে যোগ দেওয়ার ব্যক্তিদের হাতে।

তাদের অনেকের জন্য দাভস ক্লান্তি দূর করার জায়গা। এতগুলো ধনী মানুষের ক্লান্তি দূর করতে তাই তৈরি হয়ে যাচ্ছে এসকর্ট সংকট।

Comments