চীনা নববর্ষে মালয়েশিয়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজন

আকাশ ছোঁয়া নানান রঙের আতশবাজি ফুটিয়ে জমকালো উৎসবের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ।
মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ
মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষে ড্রাগন নাচ। ছবি: সংগৃহীত

আকাশ ছোঁয়া নানান রঙের আতশবাজি ফুটিয়ে জমকালো উৎসবের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ।

গতকাল রোববার চীনকে অনুসরণ করে মালয়েশিয়ায় হয় চীনা নববর্ষ উদযাপন উৎসব।

মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী প্রায় ৭৬ লাখ চীনা মেতে উঠেছেন 'কং সি ফা চাই' উৎসবে।

মুসলিম মালায়ু সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ায় চীনারা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব চীনা নববর্ষ বা 'কং সি ফা চাই'।

'কং সি'র অর্থ 'টাকা আসুক' ও 'কং সি ফা চাই'র অর্থ 'নতুন বছর আপনার জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনুক' বা 'শুভ নববর্ষ'।

মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ
মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ছবি: সংগৃহীত

চীনে এ উৎসবকে 'ছুন জিয়ে' বলা হলেও ইংরেজিতে তা 'স্প্রিং ফেস্টিভাল' বা 'বসন্ত উৎসব' নামে পরিচিত।

চীনা নববর্ষে একটি প্রাণীকে ওই বছরের প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এভাবে ১২ বছরে ১২ প্রাণী চক্র হিসেবে প্রতীক হয়ে উঠে। ২০২৩ সালকে 'খরগোশবর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ার প্রতিটি প্রদেশ নতুন সাজে সেজেছে। দোকানপাট, বাজার, শপিংমল, অফিস ও আবাসিক ভবনগুলো সাজে সাজানো হয়েছে।

সাজের বৈচিত্র্যে প্রাধান্য পেয়েছে লাল গোলাকৃতির লণ্ঠন।

লাল চীনে সর্বাধিক ব্যবহৃত রঙ। এই রঙ আনন্দ, শান্তি, সুখ ইত্যাদির প্রতীক। চীনাদের উৎসবে লালের ব্যবহার বেশি। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও লাল রঙ থাকে। চীনাদের বিশ্বাস লাল রঙ সৌভাগ্যের প্রতীক।

মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ
এ বছর চীনা নববর্ষকে ‘খরগোশবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

'খরগোশবর্ষ' সুখ সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসবে এ প্রত্যাশায় মালয়েশিয়ায় চীনারা নববর্ষের রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উৎসব পালন করেন। উপহার হিসেবে বড়রা ছোটদের লাল রঙের খামে দেন চীনা মুদ্রা ইউয়ান। যা অনেকটা মুসলমানদের ঈদ বকশিসের মতো।

মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বড় ছুটিও মেলে চীনা নববর্ষের সময়। সরকারিভাবে ২ দিন ছুটি থাকলেও চীনারা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ১ থেকে ২ সপ্তাহ।

নিজেদের বছরের সেরা উৎসব ও লম্বা ছুটি থাকায় এই উৎসবে অধিকাংশ চীনা শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে উদযাপন করেন 'কং সি ফা চাই'।

হাত জোড় করে মাথা নুয়ে একজন আরেকজনকে বলেন, 'কং সি ফা চাই'। একজন আরেকজনের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।

বিবাহিত চীনারা ছোটদের 'আমপাও' বা বখশিশ দেন। সম্পর্ক বুঝে এই বখশিশ ৫-১০ রিঙ্গিত থেকে কয়েক শ বা কয়েক হাজার রিঙ্গিতও হয়। 'আমপাও' হিসেবে কত রিঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা দেওয়ার সময় বোঝা যায় না।

মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ
জমকালো উৎসবের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় চলছে চীনা নববর্ষ উদযাপন। ছবি: সংগৃহীত

বখশিশ দেওয়ার জন্য আছে বছরের প্রতীক প্রাণীর ছবিওয়ালা লাল রঙের প্যাকেট। যেমন এ বছরের প্যাকেটের গায়ে আছে খরগোশের ছবি। এই প্যাকেটে বখশিশের নোট দিয়ে মুখ আটকিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্যাকেট খুললেই জানা যায় বখশিশ হিসেবে কত রিঙ্গিত পাওয়া গেছে।

চীনা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কমলা। কাউকে কমলা উপহার দিলে 'সৌভাগ্য' আসে—এমনই বিশ্বাস চীনাদের।

চীনা নববর্ষ শুরুর ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে চীনাদের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কমলা থাকবেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের তারা ১-২টি কমলা উপহার দেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের দেন ১-২ প্যাকেট কমলা। প্রতি প্যাকেটে ২০ থেকে ২৫টি কমলা থাকে।

মালয়েশিয়ায় ফলের মধ্যে সারা বছর মাল্টা দেখা গেলেও কমলা তেমন দেখা যায় না। সারা বছর যিনি একটি কমলাও খাননি, তিনি চীনা নববর্ষে সাধারণত অনেকগুলো কমলা খান। চীনা মালিকের অধীনে কাজ করা প্রবাসীদেরও প্যাকেটভরা কমলা উপহার দেওয়া হয়।

মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ
মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছরই প্যাকেটগুলো থাকে লাল রঙের। যারা মালায়ু বা তামিল মালিকের অধীনে কাজ করেন তারাও তাদের চীনা মালিকের অধীনে কাজ করা বন্ধুদের কাছ থেকে কমলা পান।

চীনা মালিকেরা সাধারণত তাদের অধীনে কাজ করা শ্রমিকদের বোনাস দেন।

মালয়েশিয়ায় বছরের অন্যতম আনন্দঘন সময় উদযাপিত হয় 'কং সি ফা চাই' উৎসবে। চীনাদের পাশাপাশি সবাই এই উৎসবে আনন্দময় সময় কাটান।

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাদ যান না চীনা নববর্ষের আনন্দ থেকে।

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
RMG export to EU rises

Garment export to US falls 9.16% in Jan-Aug

Data released from the Office of Textiles and Apparel (OTEXA) showed the fall

2h ago