অস্ট্রেলিয়া ডে: উৎসব ও শোকের মহাকাব্য

অস্ট্রেলিয়া ডে: উৎসব ও শোকের মহাকাব্য
আদিবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন আর্থার ফিলিপ নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনি কোভে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সেই দিনটিকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি পালিত হয় অস্ট্রেলিয়া ডে। 

এই দিনে সরকারি ছুটি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ানরা দিনটিকে উদযাপন করতে মেতে ওঠে আনন্দ উল্লাস ও উৎসবে।
 
অন্যদিকে দেশটির আদিবাসীরা দিনটিকে তাদের ভূমিতে নৃশংস উপনিবেশের সূচনা এবং তাদের সার্বভৌমত্ব, পরিবার ও সংস্কৃতি হারানোর প্রতীকী স্মৃতি হিসেবে দেখে থাকে। তাদের নারীদের ধর্ষণ এবং শিশুদের ছিনিয়ে নেওয়ার নৃশংসতার দিন হিসেবে বিবেচনা করে দেশটির প্রথম জাতি গোষ্ঠী। 

এ কারণে তারা ২৬ জানুয়ারিকে 'আক্রমণ দিবস' বা 'শোকের দিন' হিসেবে উল্লেখ করে।

প্রতি বছর এই দিনে নতুন নাগরিকদের জন্য প্রত্যেক রাজ্যে আলাদাভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

আজ দেশটিতে একদিনে প্রায় ২০ হাজার নতুন নাগরিককে স্বাগত জানানো হয়েছে।  

ক্যানবেরায় একটি নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ যখন নতুন নাগরিকদের বরণ করে নিচ্ছিলেন তখন ১০ হাজারেরও বেশি আদিবাসী এবং তাদের সমর্থকরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছিলেন। 

২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ডে উপলক্ষে সরকারি ছুটি বাতিল এবং আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন কয়েক হাজার শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানও। 

ক্যানবেরায় নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ স্বীকার করেছেন, ২৬ জানুয়ারি আদিবাসী এবং টোরেস স্ট্রেট দ্বীপবাসীদের জন্য একটি কঠিন দিন। তিনি জানান, জাতীয় দিবসের তারিখ পরিবর্তন করার জন্য ফেডারেল সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।  

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বের প্রাচীনতম অবিচ্ছিন্ন আদিবাসী সংস্কৃতির পক্ষে আমরা কাজ করছি। এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদে ভয়েস টু পার্লামেন্ট গণভোটে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিকে সমর্থন করার জন্য সর্বোত্তম উপায় বের করা হবে।' 

অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র কমনওয়েলথ দেশ রয়ে গেছে যার প্রথম জাতির জনসংখ্যার সঙ্গে ফেডারেল স্তরে কোনো চুক্তি নেই। ভিক্টোরিয়া এবং কুইন্সল্যান্ডের মতো রাজ্য সরকারগুলো রাজ্য স্তরে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সিডনিতে আজ প্রতিবাদকারীরা ১৯৯১ সাল থেকে পুলিশের হেফাজতে থাকা ৫২৭ জন আদিবাসীর মৃত্যুর স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন।

২০১৫ সালে হেফাজতে মারা যাওয়া আদিবাসী ডেভিড ডংগে জুনিয়রের মা লিটোনা ডুংয়ে ১২ বার 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না' বাক্যাংশটি পুনরাবৃত্তি করার পর বলেছিলেন, তার ছেলের মৃত্যু এমন একটি দাগ যা কখনো মুছে ফেলা যাবে না। 

তিনি বলেছেন, 'অনেকের জন্য হেফাজতে আদিবাসীদের মৃত্যু শুধু পরিসংখ্যান। আমার জন্য না। আমার ছেলের বেঁচে থাকার অধিকার ছিল। তার নিরাপদ থাকার অধিকার ছিল। ডেভিডের সঙ্গে যা ঘটেছে তার বিচার দাবি করার অধিকার আমার আছে।' 

১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিশতবার্ষিকীতে হাজার হাজার আদিবাসী এবং শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ান দিবসটির প্রতিবাদে প্রথম মিছিল করেছিল। তার আগে ২৬ জানুয়ারি উদযাপনের বিরোধিতা করে আদিবাসীরা ১৯৩৮ সালের প্রথম দিকে এটিকে শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Eliminate gender disparities in laws

The Women’s Affairs Reforms Commission has proposed a series of comprehensive reforms to eliminate all forms of discrimination against women embedded in the country’s laws, constitution, policies, and institutions.

9h ago