ডব্লিউইউএসটির সমাবর্তনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শুভেচ্ছা বার্তা

শিক্ষার্থীরা সনদ হাতে পেয়ে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ ও প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্কের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শুভেচ্ছাপত্র পেলেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ডব্লিউইউএসটি) গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টিথ্রির শিক্ষার্থীরা গাউন ও হ্যাট পরে সমাবর্তনে অংশ নেন এবং গ্রহণ করেন সনদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিক্ষার্থী এই সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন।

শনিবার ভার্জিনিয়ার জর্জ সি মার্শাল হাইস্কুল প্রাঙ্গণটি ভরে উঠেছিল কালো ও কমলা গাউন পরা নতুন গ্রাজুয়েটদের পদচারণায়।

এই আয়োজনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা বহন করে এনেছিলেন তারই সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বব জে ন্যাশ। চিঠিতে তিনি ডব্লিউইউএসটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'পরিবর্তনশীল পৃথিবীটাকে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন আপনাদের।'

সমাবর্তন শুরু হয় দুপুর ২টায়। তখন গাউনধারী শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন প্যারেড করে নির্ধারিত নিজ নিজ আসনে বসেন। মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকরা।

আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ তুলে ধরেন তার জীবনের গল্প। সাফল্যের পথটি যে নয় মসৃণ, সেখানে কত উত্থান-পতনের গল্প থাকে, তা তিনি তুলে ধরেন। সমাবর্তন বক্তৃতায় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'জীবনের প্রকৃত যুদ্ধ এখান থেকেই শুরু। একটা দৃঢ়চেতা মন নিয়ে অব্যাহত চেষ্টাই কেবল পারবে জীবনের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে।'

সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ও কি-নোট স্পিকার সাবেক ইউএস রিপ্রেজেন্টেটিভ জিম মোরানের বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। নিয়মিত শরীরচর্চা, প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা এবং নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

গেস্ট স্পিকার ছিলেন ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের স্টেট সিনেটর চ্যাপ পিটারসেন। নতুন এই গ্রাজুয়েটদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, শিক্ষার আলো নানাভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার। তিনি বলেন, 'ডাইভারসিটিই যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সৌন্দর্য। প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে আবুবকর হানিপ এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন, যা আমাদের গৌরবান্বিত করে।'

ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ডব্লিউইউএসটির গ্রাজুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানান ইউএস সেনেট মেজোরিটি লিডার চ্যাক শুমার। তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে সবখাতেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে এগিয়ে যেতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেটা পারবে বলে আমি আশা করি।'

এ ছাড়া, ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন কংগ্রেসম্যান গ্যারি কন্নলী ও গ্রেস মেং।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে স্বীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অনেক বাংলাদেশি-আমেরিকান। তারা সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাট স্টেট সেনেটর বাংলাদেশি-আমেরিকান শেখ রহমান তুলে ধরেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি তার জীবনকে কীভাবে বদলে দিয়েছে।

টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, কতগুলো ডিগ্রি তাকে নিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে, নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে নিতে।

আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইটি উদ্যোক্তা ড. ফয়সাল কাদির নব্য এই গ্রাজুয়েটদের পরবর্তী করণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন।

প্রকৌশল উদ্যোক্তা ও ফিলানথ্রপিস্ট, মোলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সৈয়দ জাকি হোসেন বলেন, 'অসীম সম্ভাবনা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। শিক্ষার্থীদের সামনে রয়েছে অপার সুযোগ।'

এ ছাড়া, বক্তব্য রাখেন ডব্লিউইউএসটির উপদেষ্টা মো. মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা মো. সিদ্দীক শেখ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএফও ফারহানা হানিপ শিক্ষাউদ্যোগে তার পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, 'ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারকেই খুঁজে পাবেন এই ক্যাম্পাসে।'

শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বক্তব্যে স্কুল অব বিজনেসের কেলি ডি আলসেন্টারা এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির অফুনি এডা আগাডা তাদের এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনার কথা তুলে ধরেন।

এরপর একে একে শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের সনদ তুলে দেওয়া হয়।

প্রথমে স্কুল অব আইটির গ্রাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেন স্কুলের পরিচালক অধ্যাপক ড. পল এপোস্টোলস আগাসপোলস। এরপর স্কুল অব বিজনেসের গ্রাজুয়েটদের সনদ দেন এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মার্ক রবিনসন।

শিক্ষার্থীরা সনদ হাতে পেয়ে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ ও প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্কের সঙ্গে।

সমাবর্তনে মাস্টার অব দ্য সেরিমনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা র‌্যাচেল রোজ।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২১ সাল থেকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান পরিচালিত প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও এমবিএ-বিবিএ কোর্সে বর্তমানে ১২১ দেশের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

NBR removes import duty on onions

The tariff withdrawal will remain effective until Jan 15 next year

2h ago