যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর

চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আজ রাত থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছে। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে।

এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর মোট শুল্ক ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।

যদিও এটি প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারে, তবু শিল্প-নেতারা মনে করছেন এটি বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা প্রমাণ করার একটি সুযোগ। কারণ বাজারে থাকা অন্য প্রতিযোগীদের ওপরও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি গন্তব্য।

হোয়াইট হাউস থেকে গত ৩১ জুলাই জারি করা নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, নতুন শুল্ক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আজ রাত ১২টা ১ মিনিটের পর পাঠানো সব চালানের ওপর প্রযোজ্য হবে। এর আগে পাঠানো চালানগুলো এই বাড়তি শুল্কের আওতায় পড়বে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'যখন ট্রাম্প প্রশাসন এপ্রিলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তখন পশ্চিমা ক্রেতারা দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এখনো দর কষাকষির চাপ দেখা যায়নি।'

তিনি বলেন, সাধারণত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে ২৮ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগে, ফলে আজ রাতের পর যেসব চালান চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়বে, সেগুলো নতুন শুল্ক কাঠামোর আওতায় পড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ২০ শতাংশ শুল্ক আদর্শ না হলেও, ৩৫ শতাংশের তুলনায় এটি ভালো। তিনি জানান, বিশেষ করে নিটওয়্যারে, যেখানে ৮০ শতাংশেরও বেশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান এখনো শক্তিশালী। তিনি বলেন, 'সময়মতো অর্থ পরিশোধ ও নৈতিক ব্যবসায়িক আচরণের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সুনাম রয়েছে।'

তবে তিনি উল্লেখ করেন, পারস্পরিক শুল্ক সমন্বয় বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হা-মীম গ্রুপ। এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, 'ক্রেতাদের সঙ্গে কিছু শেষ মুহূর্তের আলোচনা হয়েছে, যারা এখন নতুন শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তাদের প্রস্তাবিত দাম কমানোর চেষ্টা করছেন।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবাই চাপের মধ্যে আছে। যেহেতু শুল্ক ২০ শতাংশ বেড়েছে, তাই ক্রেতারা আমাদের এই বাড়তি শুল্কহার ভাগ করে নেওয়ার জন্য বলছেন।'

'কিন্তু আমরা এটি পারছি না।'

তিনি বলেন, 'আমাদের মুনাফার মার্জিন এমনিতেই খুব কম। নতুন করে খরচ বাড়লে সেটা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে, সরবরাহকারীদের দাম কমানোর জন্য বলা টেকসই বা ন্যায্য হবে না।'

যদিও নতুন শুল্ক আগামীকাল থেকে কার্যকর হচ্ছে এবং আগেই পাঠানো পণ্যে পুরোনো শুল্ক হার প্রযোজ্য থাকবে, রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে শেষ মুহূর্তে কোনো হুড়োহুড়ি নেই।

প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তানভীর বলেন, 'বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকরের আগে পণ্য পাঠাতে রপ্তানিকারকরা তাড়াহুড়ো করছেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেকেই এখন পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে। দীর্ঘ শিপমেন্ট সময় ও ক্রেতাদের দরদাম কৌশল বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।'

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'অনেক মার্কিন ক্রেতা নতুন শুল্ক এড়াতে ৩১ জুলাইয়ের আগেই চালান পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন, যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি বেড়ে গিয়েছিল।'

তিনি বলেন, এখন অনেক ক্রেতা নতুন অর্ডারে বাড়তি শুল্কের খরচ ভাগাভাগির প্রস্তাব দিচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Anatomy of BGB shootings in Rampura

It was 6:14pm on Friday, July 19, 2024. Two Border Guard Bangladesh (BGB) personnel were advancing into Banasree G Block in Dhaka.

12h ago