অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আজকের নির্বাচন

‘শেখ হাসিনার দল যে আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হচ্ছে না। তবে সংসদকে যেন একদলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত না করা যেতে পারে সেই প্রচেষ্টার আপাত প্রচেষ্টা হিসেবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি।’
নিউজ ডট কম অস্ট্রেলিয়ার অনলাইনে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ক প্রতিবেদনটি। ছবি: সংগৃহীত

'গণগ্রেপ্তারের কারণে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় বসানোর নিশ্চয়তা দিতে নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশে।'

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে প্রতিবেদনের শুরুটা এভাবে করেছে অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা নিউজ ডট কম অস্ট্রেলিয়া।

বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, 'শেখ হাসিনার দল যে আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হচ্ছে না। তবে সংসদকে যেন একদলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত না করা যেতে পারে সেই প্রচেষ্টার আপাত প্রচেষ্টা হিসেবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি।'

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় প্রকাশিত ওই বিশ্লেষণে আরও লেখা হয়, 'বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অন্যান্য দল নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করেছে।'

এতে বলা হয়েছে, বিএনপি দাবি করছে যে দলটির শীর্ষ স্থানীয় সব নেতাসহ প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই সংখ্যা ১১ হাজার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'একসময়ের দারিদ্র পীড়িত দেশটিতে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা, কিন্তু তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্মমভাবে বিরোধীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে।'

'কিছু ভোটার বলেছেন যে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভোট না দিলে তাদের সামাজিক সুরক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় সরকারি সুবিধা কার্ড বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।'

'ফরিদপুরের লাল মিয়া (৬৪) এএফপিকে বলেছেন, "আমি ভোট না দিলে তারা আমার কাছ থেকে কার্ড কেড়ে নেবে।"'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা এবং সাবেক সামরিক শাসকের স্ত্রী ও দুইবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রভাব করেছে।'

'২০০৯ সালে ভূমিধস জয় পাওয়ার পর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। এরপর তার অধীনে দুটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।'

'২০১৮ সালে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত অবস্থায় তার পরিবর্তে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।'

'তারেক রহমান এএফপিকে বলেছেন, তার দলসহ আরও কয়েক ডজন দল এই "প্রহসনের নির্বাচনে" অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।'

'গত বছরের আন্দোলনে বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শেখ হাসিনা, যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।'

'তার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই অত্যধিক বল প্রয়োগের অভিযোগে অভিযুক্ত—যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।'

'দক্ষিণ এশিয়ার ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশটির জন্য বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি এলিট পুলিশ ইউনিট এবং এর শীর্ষ কমান্ডারদের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।'

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পিয়েরে প্রকাশ বলেছেন, "শেখ হাসিনা সরকার স্পষ্টতই কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন কম জনপ্রিয়।"'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক

Comments