মালয়েশিয়ায় বিয়ে করে নারীদের শোষণ করছে বিদেশিরা: ইমিগ্রেশন বিভাগ

প্রতীকী ছবি

মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে বিয়ে করে স্থানীয় নারীদের বিদেশিরা শোষণ করছে বলে অভিযোগ পেয়েছে রাজ্যের ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এ ঘটনায় রাজ্যের নাগরিকদের সতর্ক করে তেরেঙ্গানু রাজ্যের ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, বিদেশি পুরুষরা স্থানীয় নারীদের টার্গেট করে এবং বিয়ে করে শুধু তাদের ব্যক্তিগত লাভের আশায়।

সোমবার তেরেঙ্গানু রাজ্যের ইমিগ্রেশন পরিচালক আজহার আবদ হামিদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিদেশিদের প্রায়ই সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবসায়িক লাইসেন্স পাওয়ার জন্য স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে।

বিয়ের পরে তারা স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করে এবং স্ত্রীদের নাম ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর থেকেই আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওই রাজ্যে স্থানীয় নারী ও বিদেশি পুরুষের মধ্যে অন্তত ৬১টি নতুন বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে এবং ১৯২ দম্পতি তাদের সামাজিক ভিজিট পাস পুনর্নবায়ন করেছে।

আজহার বলেন, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ান দম্পতিদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ১ হাজার ৯৫টি আবেদনসহ মোট ২৪৩টি নতুন বিয়ের রেকর্ড করা হয় এবং ২০২৩ সালে বিদেশিদের সঙ্গে মোট ৯২৫টি বিবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৩টি নতুন বিয়ে এবং দম্পতিদের জন্য ৮৫২টি মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন ইমিগ্রেশনে জমা পড়ে।

স্থানীয় নারীদের মধ্যে যারা বিদেশি পুরুষদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের মাসে মাত্র ৩০০ রিঙ্গিত দেওয়া হয়। অবহেলিত নারীদের অনেকেই তাদের বিদেশি স্বামীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা হারানোর ভয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে অনিচ্ছুক থাকেন।

২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ বলেন, বিদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করলে বিতাড়িত করা হবে। মালয়েশিয়ায় অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিটধারী বিদেশি কর্মীদের স্থানীয় নাগরিকদের বিয়ে করা ইমিগ্রেশন আইনে নিষিদ্ধ।

এ আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

তিনি বলেছিলেন, 'ইমিগ্রেশন আইন ভেঙে স্থানীয় নারী পিএলকেএসধারী (শ্রমিক ভিসা) কোনো বিদেশিকে বিয়ে করলে পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। দেখা গেছে, বিদেশি কর্মীরা বিয়ে করে এবং একটা সময় মালয়েশিয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে নিজ দেশে ফিরে যান।'

এনজিওর তথ্য অনুযায়ী, এ কারণে মালয়েশিয়ায় সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

পিএলকেএস হলো মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে বিদেশি শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এক থেকে ১০ বছরের জন্য সাতটি খাতে দেওয়া হয়।

মালয়েশিয়ায় মুসলিম দম্পতির বিবাহ বৈধ হবে, যদি বিবাহের আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদ শুধু তখনই হতে পারে যদি তালাকের আবেদনটি শরিয়াহ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
অমুসলিম দম্পতিরাও একই ঝুঁকির সম্মুখীন হন। তবে সিভিল হাইকোর্টের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

পিএলকেএসধারীদের মধ্যে যারা মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বা কর্মরত বিদেশি বিয়ে করতে চান, তাদের আবেদন নিজ নিজ দূতাবাসে পাঠাতে হবে।

ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহ বলেন, তার ডিপার্টমেন্ট স্থানীয় ও বিদেশিদের, বিশেষ করে পিএলকেএসধারীদের বিয়ের বিষয়ে রাজ্যের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, অভিযোগ আছে যে স্থানীয় ও বিদেশি, বিশেষ করে পিএলকেএসধারীদের বিয়ে সংক্রান্ত ইমিগ্রেশনের কঠোর শর্ত ও বিধিবিধান উপেক্ষা করা হয়।

২০২৩ সালে বেরিতা হারিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি পুরুষরা, বিশেষ করে পাকিস্তানিরা মালয়েশিয়ায় থাকার জন্য এবং ব্যবসা করার জন্য আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় নারীদের বিয়ে করেন। পাকিস্তানিরা অধিকাংশ বয়স্ক মালয় নারীদের বিয়ে করেন।

তারা দেখতে পেয়েছেন যে পাকিস্তানিরা বয়স্ক মালয়েশিয়ান নারীদের বিয়ে করেছেন এবং স্ত্রীর নামে সেখানে ব্যবসা করছেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেরিতা হারিয়ানের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা পাকিস্তানি পুরুষদের কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য শহর ও বস্তির উপকণ্ঠে অবস্থান করা, যেখানে কর্তৃপক্ষ খুব কম নজরদারি করে।

আরেকটি কৌশল হলো, তারা স্থানীয় নাগরিকের নাম ব্যবহার করে বা ব্যবসার লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে স্থানীয় বাসিন্দার মালিকানাধীন ব্যবসা দখল করে নেন।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

45m ago