ঈদের উপহার

ঈদ মানেই আনন্দ! খুশির ছটা চারপাশে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর সমাজের সবাই চায় পরিবারকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। সেই আনন্দের মাত্রাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দিতেই কিনা অনেকেই চায় গোপনে না জানিয়ে পরিবারের মানুষকে, প্রিয়জনকে, বন্ধু-বান্ধবকে কিছু উপহার দিতে। ঈদের উপহার হিসেবে কিন্তু অনেকেই মনে করে ড্রেস ছাড়া কিছু দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এতে রয়েছে বেশ জটিলতা! একেকজন মানুষের রঙ, ডিজাইন, সাইজ, বৈচিত্র্য, ম্যাচিং সেন্স ইত্যাদি একেকরকম। তাই পোশাক উপহার দেয়ার আগে অনেক কিছু ভাবতে হয়। তারপরও শেষ পর্যন্ত যাকে গিফট করা হবে তার যে সর্বাগ্রে পছন্দ হবে তা কিন্তু নয়। বরঞ্চ মন রক্ষার খাতিরে সবাই-ই বলে দেয় যে খুব পছন্দ হয়েছে। এত জটিলতায় না গিয়ে ঈদের উপহারটি হোক না ড্রেসের বাইরে অন্য কিছু!
ঈদের উপহারে সবার আগে যাদের কথা মাথায় আসে তা হলো বাবা-মা। বাবাকে দিতে পারেন তার প্রিয় লেখকের বই বা মিউজিক সিস্টেমসহ তার পছন্দের গায়কের গানের সেট। কাঁধের কোণে একখানা চাদর রাখার অভ্যাস করা বাবাকে নতুন একখানা চাদরও গিফট করতে পারেন। বদলে দিতে পারেন বাবার অনেক দিনের ব্যবহার করা পুরনো ভারী ফ্রেমের চশমাটিও। আর মা’কে? পৃথিবীর এমন একজন; যা দেবেন তাতেই খুশি। মায়ের হাতব্যাগটি পুরনো হয়ে গেছে। এই ঈদে বদলে দিন না সেই পুরনো হাতব্যাগটি। মাকে নিয়ে বসে যান কম্পিউটারের সামনে, কোনো ওয়েবসাইটে বসে মায়ের পছন্দমতো অর্ডার দিয়ে দিন। নতুন একটি পানের বাটা বা গয়নার বাক্সও মার মুখে হাসি ফোটাতে পারে এই ঈদে খুব সহজেই।

আদরের ছোট বোনটার অনেক দিনের বায়না একটা ভালো স্মার্টফোন কিনে দেয়ার। এই ঈদে সেটাই হোক না বোনের মুখে হাসি ফোটানোর কারণ। তবে একেক ঘরে একেক বোনের আবদারের বৈচিত্র্য কিন্তু একেকরকম। কারো ভার্সিটির নতুন ব্যাগ চাই, কারো নতুন কোনো মেকআপ বক্স চাই, কেউবা চায় নিজের সুন্দর কোনো একটা ছবি বড় করে বাঁধাই করতে। এই ঈদেই সুযোগ বোনের অনেক দিনের অপ্রাপ্তিগুলো ঘোচানোর। ছোট হোক, বড় হোক সব ছেলেরই শখ থাকে জীবনে এক দিন হলেও ভালো ব্র্যান্ডের ঘড়ি ব্যবহার করবে। এই ঈদে হয়ে যাক না ভাইকে সেই চমকে দেয়া। ভাইয়ের বহু দিন ধরে একটা ক্যামেরার বড্ড শখ। তাছাড়া আজকাল ফ্যামিলি প্রোগ্রামে ছবি তুলতে গেলেও একটা ক্যামেরা লাগে। সব খাপে-খোপে মিলিয়ে ভাইয়ের বহু দিনের শখ এই ঈদেই মিটিয়ে ফেলতে পারেন। এছাড়াও কারো কারো আবার থাকে মুভি দেখার পাগলামি। মুভি সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটারে নেই পর্যাপ্ত স্পেস। তাই ঈদে ভাইকে খুশি করার আরেকটি মাধ্যম হতে পারে এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক!

পরিবার তো হলো, এবার সঙ্গী-সঙ্গিনীর কথায় আসা যাক। জুয়েলারি উপহার হিসেবে পেতে পছন্দ করে না এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া ভার। এবার ঈদে আপনার সঙ্গিনীকে উপহার হিসেবে বানিয়ে দিতে পারেন স্বর্ণের নূপুর বা একজোড়া চুড়ি। বাজেট কম হলে রূপা দিয়েও বানাতে পারেন। দিতে পারেন ঘর সাজানোর জন্য শৌখিন ল্যাম্পশেড। বিভিন্ন রঙের, ডিজাইনের ও সাইজের মোমবাতিও হতে পারে সুন্দর উপহার। উপহার হতে পারে পছন্দের শোপিস টি কিংবা ওয়াল হ্যাঙ্গিং টিও! পরিবারের গৃহকর্তার তরুণ বয়সে দেশে-বিদেশের অনেক লেখকের বই পড়ার শখ ছিল। কিন্তু আজ ব্যস্ততার কারণে সেই শখ, প্যাশন মিলিয়ে গেছে কোথায় জানি। শহুরে ব্যস্ততার কারণে মিলিয়ে যেতে থাকা সেই অভ্যাসকে জাগ্রত করতে পারেন খুব সহজেই। নিত্যদিন অফিসে যাওয়ার সময় ব্রিফকেসে গল্পের বই কেউ না নিলেও ছোট্ট একটা ই-বুক রিডার কিন্তু যে কেউ নিতে চায়। এই ঈদে সেটাই হোক না তার জন্য স্পেশাল উপহার! দিতে পারেন তার পছন্দের কোনাে ব্র্যান্ডের পারফিউম।

সর্বোপরি আপনি চাকরিজীবী হোন বা ব্যবসায়ী হোন বা স্টুডেন্ট; ঈদের আনন্দে শামিল হতে নিজেকে কিছু গিফট করতে ভুলবেন না। তা সেটা প্রিয় লেখকের বই হতে পারে, নতুবা প্রিয়জনের সঙ্গে বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে সদলবলে কোথাও ঘুরতে যাওয়াও হতে পারে। হতে পারে পরিবারের সবার ডিম্যান্ডের কথা মাথায় রেখে বাসায় সম্পূর্ণ নিজেদের হোম থিয়েটার বানানো। হতে পারে অনেক কিছুই। ছোট্ট কিছু জিনিস, যা আগত ঈদের দিনে আপনার একান্তই কাছের মানুষগুলোর মুখে ফুটাবে এক চিলতে হাসি!
সাখাওয়াত হোসেন সাফাত
ছবি : সংগ্রহ
Comments