‘পৃথিবী একটি নতুন ছবি পেয়েছে’

Food For God
শোয়েব ফারুকীর তোলা ছবি “ফুড ফর গড”।

আলোকচিত্রের জগতে শোয়েব ফারুকী একটি পরিচিত নাম। তাঁর পরিচয়ের ব্যাপ্তি দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। একশটির বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে। শোয়েবের জন্ম ১৯৬০ সালের ৫ মে। ১৯৮০ সালে তাঁর ছবি তোলা শুরু। তবে আগ্রহটা জন্মায় ১৯৭০ এর দশকে। বাবা ছবি আঁকতেন। তিনি স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী ছিলেন। শোয়েব হয়েছেন স্বশিক্ষিত আলোকচিত্রী।

সম্প্রতি শোয়েব ফারুকী অর্জন করেছেন এ বছরের পিঙ্ক লেডি ফুড ফটোগ্রফি পুরস্কার – এটি বিশ্ব ফুড ফটোগ্রাফির সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। এ বিষয়ে তিনি কথা দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে:

“আমি গত ছয় বছর থেকে ‘পিঙ্ক লেডি ফুড ফটোগ্রফি’ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত। এখানে টাকা দিয়ে এন্ট্রি নিতে হয়। এ বছর আমি প্রতিযোগিতায় পাঁচটি বিভাগে অংশ নিয়েছিলাম। দুটিতে পুরস্কার পেয়েছি। দুটিতে ছোট তালিকায় ছিলাম।”

“প্রতিযোগিতায় ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগ থেকে এসেছে ১ম পুরস্কার এবং ‘ফুড ফর অ্যাকশন’ থেকে এসেছে ২য় পুরস্কার। এছাড়াও, পুরো প্রতিযোগিতার ‘ওভারঅল উইনার’-এর পুরস্কারটাও এবার আমি পেয়েছি।”

গত বছরও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন শোয়েব ফারুকী। ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ এ পেয়েছিলেন প্রথম পুরস্কার। “তবে, গত বছর আমাকে গ্র্যান্ড পুরস্কারটি দেওয়ার বিষয়ে বিচারকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমি একটু বিব্রত হয়েছিলাম। কেননা, বিশ্বের বড় বড় আলোকচিত্রীরা এর বিচারক হিসেবে থাকেন।”

Shoeb Faruquee
লন্ডনে পিঙ্ক লেডি ফুড ফটোগ্রফি প্রদর্শনীতে শোয়েব ফারুকী। ছবি: অ্যান্ড্রু ইমিংটন

শোয়েবের মন্তব্য, “ছবি জমা দেওয়ার সময় আগে ভেবে নেই ছবিটি কোন লেভেলে যাবে। গতবার গ্র্যান্ড পাবো এমন একটা প্রত্যাশা ছিলো। এবার ভেবেছিলাম ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’-এ প্রথম হবো। তবে ওভারঅল বিজয়ী হবো তা ভাবিনি।”

যে ছবিটির মাধ্যমে শোয়েব দেশের জন্যে এমন সুখ্যাতি বয়ে আনলেন সেই ছবিটির শিরোনাম “ফুড ফর গড”। ছবিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি তুলেছিলাম গত ডিসেম্বরে। যে অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছি সে অনুষ্ঠানটি দেখছি কয়েক বছর থেকে। অনুষ্ঠানস্থলে স্বল্প আলো থাকে। ধোঁয়া থাকে। মনে হয় যেন একটি চিত্রকর্ম দেখছি। অনুষ্ঠানস্থলে মোমবাতি জ্বালানো হয়।”

এ বছর সেরা পুরস্কারটি শোয়েবকে দিতে বিভক্ত হোননি প্রতিযোগিতার বিচারকরা। মোট ৩৯জন বিচারকের সবার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। শোয়েব বলেন, “ভালো লেগেছে। তাঁরা এটাকে ‘নতুন ছবি’ বলেছেন। অনুষ্ঠানে খাবার দেখে অভিভূত হয়েছিলেন বিচারকরা। পৃথিবী একটি নতুন ছবি পেয়েছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন।”

শোয়েব ফারুকী ২০০৫ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার পান সমকালীন বিষয়ে। তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে সব মিলিয়ে রয়েছে একশটির বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

“আমার শতকরা ৯৫ ভাগ ছবি চট্টগ্রাম থেকে তোলা। ফটোগ্রাফির জন্যে দূরে যেতে হয় না। যেখানে আছেন সেটাকেই সেরা ভাবতে হবে। এদেশে প্রচুর বিষয় রয়েছে।”

“অনেকে হয়তো একটি বা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করেন। আমি কাজ করি প্রকৃতি, স্থাপত্য, খাবার, প্রেস, শিল্পকলা, জনগণ, মাইক্রো ফটোগ্রাফি, শিশু, পোট্রেট, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে। মনের খোরাক হিসেবে ছবি তুলি। সেটার মূল্যায়নের জন্যে প্রতিযোগিতায় দেই। তবে পুরস্কারের জন্যে ছবি তুলি না।”

ছবি বিক্রি শোয়েবের রোজগারের প্রধান উৎস। চট্টগ্রামে একটি স্টুডিও চালান তিনি। নতুন শুরু করেছেন হোটেল ফটোগ্রাফি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফিও করছেন। তিনি চুয়েট-এ স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে খণ্ডকালীন ক্লাস নেন আলোকচিত্রের ওপর।

ছবি তোলার পেছনের কথা বলতে গিয়ে শোয়েব বলেন, “১৯৭০ এর দশকে আমাদের এলাকায় কয়েকটি স্টুডিও ছিলো। কয়েকজন প্রবীণ আলোকচিত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মৃণাল সরকার ছিলেন বন বিভাগের আলোকচিত্রী। মুর্তজা তৌফিক ইসলাম ছিলেন প্রেস ফটোগ্রাফার। অধ্যাপক ইয়ার মোহাম্মদ ছিলেন সৌখিন আলোকচিত্রী। ১৯৮০ দশকে প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে ছিলেন দেবু দাশ ও মোমেনুল হক।”

“তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। তাঁদের কাছে থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম। এভাবেই ফটোগ্রাফি শেখা। তারপর বই পড়ে শিখি। ক্যামেরা খুলে আবার তা লাগিয়ে ক্যামেরার প্রযুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করি। সবকিছুই নিজে নিজে শেখা।”

শোয়েবের মতে, আলোকচিত্র আইকিউ বাড়ায়। এটি সবার শেখা উচিত। দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, “ভালো কিছু করার ভাবনা নিয়ে এগোতে হবে।”

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

1h ago