রোজায় সুস্থতা

পরামর্শ দিয়েছেন ​অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ কামরুন আহমেদ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড হসপিটাল
দেখতে দেখতে চলে এলো রোজা । আর এরসঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের খাবার-দাবার রুটিন বদলে যাবে। বদলে যাবে ঘুমের সময়সূচিও। ঘুমের সমস্যার সঙ্গে রোজায় সারাদিন না খেয়ে থাকায় সন্ধ্যায় ইফতারে ঝাঁপিয়ে পড়ায় খাওয়ার পরিমাণে কোনো মাপ থাকে না অনেক ক্ষেত্রে। দেথা যায় রোজায় অনেকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, আবার অনেকর অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ায় আর অনিয়মে চলায় ভালোর থেকে খারাপই হয় বেশি। তাই রোজায় রুটিনে বদল এলেও যদি নিয়ম ঠিক করে নেয়া যায়, আর খাবার-দাবারও একটু খেয়াল করে খাওয়া হয় তবে স্বাস্থ্যগত সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। সেহরিতে অল্প মসলাযুক্ত খাবার আর ইফতারে ভাজা খাবার না খেয়ে যদি হালকা স্যুপ আর সালাদ মেন্যুতে রাখা যায় তবে ভালো হয়। খাবার-দাবারে সামঞ্জস্যতা রাখা জরুরি। রোজা ভাঙার পর এবং সেহরিতে প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করুন, অন্তত ৮ গ্লাস।

রমজানে আমাদের খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আসে। যেহেতু সারাদিন না খেয়ে থাকি তাই শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে, সেই জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে। আবার শাক-সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে খাদ্য তালিকায়। অনেকে রমজানে খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি রাখতে চান না। এটা ঠিক না। কারণ শাক-সবজিতে প্রচুর মিনারেলস, ভিটামিন, ফাইবার থাকে। এগুলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন এবং আমাদেরকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখে।

রমজানে ব্যালান্স ডায়েটের প্রয়োজন, তাই প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে ডায়েট চার্টে মাছ-মাংস রাখতে হবে।মাছ-মাংসে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। খাদ্য তালিকায় ফল রাখা জরুরী। সারাদিন রোজা রাখার পর আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলসের ফল থেকেই পেতে পারি। দই খাবার হজমে সাহায্য করে আর দুধ সব পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খাদ্য। তাই ডায়েট চার্টে এগুলো রাখা প্রয়োজন। বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না। রান্নায় তেলের ব্যবহার কম না করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হবে, আর ওজনও বাড়বে। প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে। যেন শরীরে পানিশূণ্যতা না হয়।

রমজান মাসে আমরা মাছ-মাংস বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। ইফতারে ডিমের চপ খাই আবার টক দই-দুধ খাই। তাই এসব প্রোটিন জাতীয় খাবারের পুষ্টিমূল্য দেয়া হলো :

মাছ: ৭০ গ্রাম মাছে প্রোটিন ১২ গ্রাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩ গ্রাম, ক্যালরি ৬৮ কিলো ক্যালরি।

মুরগির মাংস : ৭০ গ্রাম মুরগির মাংসে ক্যালরি ৭৬ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১৮ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম।

ডিম : ক্যালরি ১২১ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১০ গ্রাম, চর্বি ৯.৩ গ্রাম।

দুধ: (ননী ছাড়া ২০০ মিলি) কিলো ক্যালরি ৫৮, প্রোটিন ৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম।

 

শাক-সবজি ও ফল থেকে প্রচুর ভিটামিন মিনারেল পাওয়া যায়।এসব খাবারের পুষ্টিমূল্য দেয়া হলো :

শসা : ভিটামিন মিনারেল আছে। ৯৬ ভাগ পানি ও প্রচুর ফাইবার আছে। ভিটামিন এ, সি, কে ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস রাইবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক, বি-৬ আছে।

পটোল : ৩০ ক্যালরি, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩ মিলিগ্রাম, ফাইবার ৪ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম ভিটামিন-সি ২০ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ গ্রাম।

ফুলকপি : ভিটামিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, মিনারেল আয়রন আছে। ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে আছে ক্যালসিয়াম ৬২৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪০ মিলিগ্রাম। এছাড়াও আছে ভিটামিন এ।

আলু : আলুতে আছে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন বি ও সি। ক্যালরি ৩২১ কিলো ক্যালরি, স্টার্চ ১৫ গ্রাম, ফাইবার ২.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, পটাশিয়াম ৪২১ মিলিগ্রাম, পানি ৭৫ গ্রাম, রাইবফ্লাভিন ০.০৩ গ্রাম, বি ১-০.০৮ গ্রাম।

কলমি শাক : (১০০ গ্রাম), পানি ৮৯৭ গ্রাম, প্রোটিন ৩৯ গ্রাম, আয়রন ০৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৪ গ্রাম, ফাইবার ১৪ গ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ১৪ গ্রাম, ক্যালরি ৩০ কিলো ক্যালরি, নায়াসিন ১৩ মিলিগ্রাম।

পালং শাক : পালং শাকে প্রচুর আয়রন আছে। আরও আছে ভিটামিন এ, বি, কে ও সি।

কমলা: (১০০ গ্রাম) ভিটামিন ‘বি’ ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম।

আপেল : পটাশিয়াম, আয়রন জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম আছে। আপেল ওজন ও কোলেস্টেরল কমায়।

আনারস : আনারস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে আছে ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম। এছাড়াও ব্রমিলিন নামে এক ধরণের জারক রস আছে এতে। খাদ্য পরিপাকেও সাহায্য করে আনারস।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

7h ago