দেড়শো টাকার ‘নবাব’!

Nabab
“নবাব” চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র: নবাব

পরিচালক: জয়দীপ মুখার্জি

অভিনয়: শাকিব খান, শুভশ্রী, অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখার্জি, রজতাভ দত্ত, অমিত হাসান

সময়: ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট

দুর্বলতা: গল্প

 

নবাব মুক্তির দুই সপ্তাহ পরেও দীর্ঘ লাইন টিকেটের জন্যে। মিরপুরের সনি সিনেমা হলে সন্ধ্যা ছয়টার শো, সাড়ে পাঁচটায় খুলে দেওয়া হলো গেট। অনেক দর্শকের সমাগম। টিকেট কাউন্টারে ভীষণ ভিড়। এই ভিড় সামলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে হয়তো সিনেমা শুরু হয়ে যাবে। তাই বাইরে থাকা দালালের কাছে ৩৫ টাকার ডিসির টিকেট কাটতে হলো দেড়শো টাকায়। একটু পরে সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা গেলো দুশো টাকা উঠে গেছে ডিসির সেই টিকেটের দাম। লাইন মেনে অবশেষে সিনেমা হলের ভেতরে প্রবেশ। চারদিক কানায় কানায় পূর্ণ।

মানুষের স্রোত পুরো হল জুড়ে। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো জাতীয় পতাকাসহ জাতীয় সংগীত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, চারভাগের একভাগ দর্শকও উঠে দাঁড়ালেন না। বিষয়টি কষ্টদায়ক বটে।

ছবির নাম “নবাব” পর্দায় ভেসে উঠতেই হলের দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি আর চিৎকারের জোয়ার। নাম দেখেই এমন চিৎকার তাহলে নবাব পর্দায় এলে কি হবে? সেইটাও দেখা গেলো। বাস থেকে যখন প্রথমবারের মতো শাকিব খানের শুধু পায়ের এন্ট্রি হলো, তা দেখেই আবার একই রকম উল্লাসধ্বনি পুরো হল জুড়ে। দুর্দান্ত লুক আর চোখ জুড়ানো কস্টিউমে উজ্জ্বলরূপে দেখা গেলো তাঁকে; সঙ্গে আকর্ষণীয় হেয়ার স্টাইল, খোঁচাখোঁচা দাড়ি, আর একটু বাঁকানো গোঁফ। ছবিতে বেশ কয়েকটি গেট-আপে দেখা গেছে ঢালিউডের কিং খানকে। সব গেট-আপেই মুগ্ধ উপস্থিতি তাঁর। আমাদের দেশে যাঁরা কস্টিউম ডিজাইন, হেয়ার  স্টাইল, মেকআপ ও অ্যাকশন দৃশ্যগুলো পরিচালনা করেন তাঁদের এই বিষয়গুলোতে একটু মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। নিজেদেরকেই সেটা অনুভব করতে হবে। একটু মনোযোগী হলে তাঁদের দিয়েও ভালো কিছু করা সম্ভব, সেটি “নবাব” ছবির শাকিব খানকে দেখলেই বোঝা যায়। মানুষটিতো একজনই। অভিনয়, নাচে বরাবরই পারদর্শী তিনি। ছবিটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাকিব তাঁর সবটুকু প্রতিভা ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর পুরো গল্প জুড়ে নবাব হয়েই ছিলেন তিনি।

অপরাজিতা আঢ্য বরাবরই ভালো অভিনয় শিল্পী। যতোটা সুযোগ পেয়েছেন অভিনয় করে নিজের অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রে তাঁর সাবলীল অভিনয় চোখে লেগে আছে। এছাড়াও, প্রতিটি চরিত্র কী সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলেন খরাজ মুখার্জি! অভিনয় দিয়ে দর্শকদের বশ করে রাখেন তিনি। এই ছবিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রজতাভ দত্ত খুব ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। না করলেও পারতেন। কোনই ক্ষতি হতো না তাঁর অভিনয় জীবনে। অমিত হাসানের চরিত্রটিও অনেকটা গুরুত্বহীনই বলা যায়। ছবিতে তাঁর সংলাপ অন্যকে দিয়ে ডাবিং করানো হয়েছে যা বেশ শ্রুতিকটু লেগেছে।

শুভশ্রী সুন্দরী অভিনেত্রী, অভিনয় খুব একটা মন্দ করেন না। কিন্তু “নবাব”-এ তিনি কতোটা ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে উঠেছেন প্রশ্ন সেখানেই। একটু চেষ্টা করলে তিনি ভালো ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু সে চেষ্টা তিনি করেননি। তবে গানের দৃশ্যগুলোতে তাঁর গ্লামারাস উপস্থিতি নজর কেড়েছে দর্শকদের। আইটেম গানে নিজেকে বেশ আকর্ষক করে তুলেছিলেন শুভশ্রী। শাকিব খানের পাশে খুব একটা মন্দ লাগেনি তাঁকে। “ষোলআনা” ও “যাবো নিয়ে” গান দুটি ভালো লেগেছে।

তবে “নবাব” সিনেমার গল্পের সঙ্গে অন্য সিনেমার টুকরো টুকরো গল্পের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। শাহরুখ খান অভিনীত হিন্দি “বাদশাহ” ছবির সঙ্গে “নবাব” ছবির শেষের দিকে বেশ মিল রয়েছে। আরেকটি হিন্দি সিনেমা “বাজী”-র গল্পের আবহও খুঁজে পাওয়া যাবে এতে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রিয়াজ-পূর্ণিমা অভিনীত “খবরদার” যাঁরা দেখেছেন তাঁরাও অবাক হবেন “নবাব” এর গল্পে। পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে এটি একটি মৌলিক গল্পের সিনেমা।

“বাংলাদেশের ছেলে” শব্দ দুটি “নবাব”-এরগল্পে রয়েছে কিন্তু “বাংলাদেশের পুলিশ” এটি ছবির কোথাও নেই, শুধু শাকিব খানের কথা-বার্তা আর তাঁর সাক্ষাৎকারগুলোতে রয়েছে বিষয়টি। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন সদস্য ছিলেন “নবাব”-এ। তবে এটি সত্য, তিনি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য হিসেবে চমৎকার অভিনয় করেছেন।

এক নজরে “নবাব” ছবির গল্প একটু জেনে নেওয়া যাক - সিবিআই অফিসার রাজীব চৌধুরী (শাকিব খান) জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বদ্ধ পরিকর। মুখ্যমন্ত্রী অপরাজিতা আঢ্যকে  সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা করার পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বেশ কিছু নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রাইম রিপোর্টার শুভশ্রীর উপর দায়িত্ব পড়ে রাজীব চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার। কিন্তু, কোনভাবেই তিনি ধরতে পারেন না তাঁকে। এক সময় দেখা হয়ে যায় তাঁদের। আগে থেকেই একে অপরকে চিনলেও পরে আবিষ্কৃত হয় শুভশ্রীর সঙ্গে একই কলেজে পড়াশোনা করা নবাবই আসলে সিবিআই অফিসার রাজীব চৌধুরী। তাঁরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেন সেই কলেজ থেকেই। বিভিন্ন কারণে মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন।

শুভশ্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের শুরু হতে না হতেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় রাজীব চৌধুরীকে। পুলিশের বড় অফিসার রজতাভ দত্তের মেয়ে মেঘলার খুন ও ধর্ষণের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। জেলে নেওয়ার পথে পুলিশের গাড়ি থেকে রাজীব চৌধুরী পালিয়ে যান ষড়যন্ত্রের আসল হদিস বের করতে। তাঁর অসুস্থ মাকে কিডন্যাপ করে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাঁকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অপরাজিতা আঢ্যকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। ক্রাইম রিপোর্টার শুভশ্রী সহায়তা করেন শাকিবকে। অবশেষে, ষড়যন্ত্রের পর্দা সরে সব পরিষ্কার হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ গল্প না খুঁজে বিনোদনের খোঁজ করতে পারেন

Comments

The Daily Star  | English
IPO drought in Bangladesh 2025

One lakh stock accounts closed amid IPO drought in FY25

The stock market has almost closed the books on the fiscal year (FY) 2024-25 without a single company getting listed through an initial public offering (IPO), a rare event not seen in decades.

12h ago