অনেক বড় পাওয়া অনেক বড় ভয়
নতুন প্রজন্মের মডেল অভিনেত্রী দোয়েল। হরলিক্স ও সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে নজর কেড়েছেন। সিনেমায় কাজ করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘আলফা’, এম রাশেদ জামান পরিচালিত ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ ও নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’-তে। সম্প্রতি ‘এতদিন কোথায় ছিলে’ নামের একটা গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন অন্তু করিমের সঙ্গে। তার ভাষায়, তার জীবনে সবকিছু এসেছে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়া। জীবনের অনেক কিছু ভাগাভাগি করেছেন আনন্দধারার সঙ্গে।
আনন্দধারা : মিডিয়ার সঙ্গে সখ্যের শুরু কবে থেকে?
দোয়েল : আমার শুরু হয়েছিল একটা ফটোশ্যুট দিয়ে। সেখানেও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। হুট করে করেছিলাম। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের ১৪ তারিখে। আমার মনে আছে বিষয়টা। একটা কারণে সেটা মনে রেখেছি। প্রথম আলো পত্রিকার নকশার শ্যুট ছিল সেটা। তারপর থেকেই কাজ করার শুরু। একে একে বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে আমাকে আনা হয়। তারপর র্যাম্পে কাজ করা শুরু করলাম। একসঙ্গে দুটো কাজই চলছিল। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া মিডিয়ায় এসেছি। এখানে এসে একটু একটু করে শিখছি।
আনন্দধারা : র্যাম্প মডেলদের জীবনযাত্রা নিয়ে কিছু অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টা নিয়ে আপনার কী অভিমত?
দোয়েল : এই এরিনায় আসার আগে আমিও অনেক কিছু শুনেছি। কিন্তু কাজের জায়গায় কাজ করতে এসে এই কয়েক বছরে বেশ কিছু বড় বড় শো করেছি। এমন কোনো কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি আমাকে। ডার্ক কোনো কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি। আমার কাছে মনে হয় এটা পুরোপুরি নিজের ব্যাপার। কাজের ক্ষেত্রটা আসলে এমন হয় না। এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে কী করবেন? নিজেকে পরিচালনা করবেন কীভাবে এটা নিজ নিজ বিষয়।
আনন্দধারা : স্বনামখ্যাত পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত আলফা সিনেমায় কাজের সুযোগটা কীভাবে এলো?
দোয়েল : প্রথমেই বলেছি, আমার কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই মিডিয়ায় কাজ করার জন্য। র্যাম্প আর ফটোশ্যুটের কাজ করছি চুটিয়ে। একদিন আলফার জন্য স্ক্রিন টেস্টের ফোন আসে। আমার কোনোরকম অভিজ্ঞতা নেই। এখানে এসে আমার এষা ইউসুফ আপার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে বলেন বিষয়টি জানাবেন। তিন-চার দিন পর আমাকে তিনি খোঁজ করলেন। আমাকে তারা নিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। তার কয়েকদিন পর শুরু হয়েছিল আলফার শ্যুটিং। এটাও একদম হুট করে। এটা ঠিক হওয়ার পর বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে কিছুদিন রিহার্সেল করেছি। স্পটে গিয়ে রিহার্সেল করেছি। আমার জেলা যেহেতু রংপুর তাদের ডিমান্ড ছিল ভাষাটা কোন অঞ্চলের হবে। আমি তাদের বললাম আমি রংপুরের ভাষায় কথা বলতে পারব।
আনন্দধারা : কী শেখা হলো এই কয়দিনে কাজ করতে এসে?
দোয়েল : অনেকেই অনেক কথা বলে কিন্তু কিছুই মনে করি না। আজকে যে এখানে এসেছি। তার পেছনে সবটাই বাচ্চু ভাইয়ের অবদান। আমি কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইনি। তাকে এত বড় একটা আয়োজনের ছবিতে নেয়া হয়েছে। এটা যেমন অনেক বড় পাওয়া অনেক বড় ভয় একদিকে। অনেক উত্তেজনা রয়েছে আমার মধ্যে।
আনন্দধারা : র্যাম্প থেকে অনেকে এসেছেন, অভিনয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেননি?
দোয়েল : আমার মনে হয় এটা হতেই পারে। অনেকের আগ্রহ হয়তো থাকে না অভিনয় করার। র্যাম্পের জায়গাটা কী এখানে অনেক চকচকে দেখছেন দারুণ আউটফিটে দেখছেন। কিন্তু সিনেমার সেট অনেক বড়। এখানে কাজ করতে হলে সেভাবেই আসতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। র্যাম্প থেকে এসে আমিও কেমন করেছি সেটা ছবি মুক্তি না হলে বলতে পারব না।
আনন্দধারা : নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
দোয়েল : আমি একজন ভালো অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। মডেলিং, অভিনয় একটা প্যাশন থেকে করছি। আমার শুরুটা যেহেতু সিনেমা দিয়ে, তাই নিজেকে বড় পর্দার একজন অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
আনন্দধারা : কোন ধরনের চরিত্রে দেখা যাবে দোয়েলকে।
দোয়েল : ‘আলফা’তে আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা এম রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ সিনেমাতেও ভালো একটা চরিত্র করছি। এখানে চন্দ্রাবতী চরিত্রে অভিনয় করছি। এরপর নুরুল আলম আতিক ভাইয়ের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমাতে কাজ করেছি।
আনন্দধারা : এছাড়া আর কী কী করছেন?
দোয়েল : বিজ্ঞাপনচিত্রে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। প্রায় সবার সঙ্গে কাজ করেছি। ফারুকী ভাই, মেজবাউর রহমান সুমন, কিসলু ভাই সবার সঙ্গেই বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করেছি। আমার প্রথমটা ছিল ‘সার্ফ এক্সেল’, পরপর তিনবার হরলিক্সের বিজ্ঞাপনচিত্র করলাম। আনোয়ার টাইগার সিমেন্টসহ অনেক কিছু করেছি।
আনন্দধারা : মিডিয়ায় আসার আগের আর এখনকার জীবনের পার্থক্য কেমন?
দোয়েল : আগেই বলেছি আমার কোনোরকম প্রস্তুতি ছিল না। তবে সত্যি আমার আগের জীবনটা অনেক সুন্দর ছিল। পড়াশোনা করতাম ইউনিভার্সিটি যেতাম-আসতাম। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, একটা সার্কেল ছিল। এটা মিলে বেশ ভালো ছিল। এখন কাজের সময় কাজ করতে হয়। তবে কাজের বাইরে এখনো আগের মতো আছি। আগের মতো আড্ডা দিতে থাকি বন্ধুদের সঙ্গে।
আনন্দধারা : নিজের কোন ইমেজটা গড়ে তুলতে চান?
দোয়েল : আমি যেখানেই কাজ করতে যাই কাজটা ঠিকমতো করতে চাই। সবাই যেন বলে দোয়েল খুব সাধারণ, খুব সিম্পল। এমনই থাকতে চাই। সিম্পলভাবে জীবনটা কাটাতে চাই।
আনন্দধারা : মডেলিং আর অভিনয় বাদে আর কোনো শখ আছে কিনা?
দোয়েল : আমি সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করি। ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করি কিন্তু খুব পপুলার জায়গায় না। যেটা খুব ফোকাসড না, সেসব জায়গা আমাকে খুব টানে। কেন সেটা জানি না। দেশে কিংবা দেশের বাইরে গেলে এটা আমি করি।
আনন্দধারা : অভিনয়ে আপনার অনুপ্রেরণা কে?
দোয়েল : আমার বড় বোন আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, তুমি যেটা করবা সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে করবা। আমার বেড়ে ওঠা রংপুরে। শুরু থেকে দেখতাম আজরা আপু, এমি আপুদের। তাদের দেখে মনে হতো তাদের মতো যদি হাঁটতে পারতাম। আমার পরিবারের কেউ এই মাধ্যমে কাজ করেনি। সবাই রংপুরে থাকে। এছাড়া প্রত্যেকের ভালো কাজ আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। মনে হয় এমন যদি কাজ করতে পারতাম, সেখানে যদি থাকতাম।
আনন্দধারা : একটা শর্ট ফিল্মও করেছেন?
দোয়েল : হ্যাঁ, তাসমিয়া আফরিন মৌর ‘কবি স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জবানবন্দী’। এটার প্রথম প্রিমিয়ার হয়েছে দেশের বাইরের একটা ফেস্টিভ্যালে। তারপর বাংলাদেশের শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও এটা বেস্ট ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে। মুম্বাইতেও পেয়েছে। অনেক সম্মান পেয়েছি এই কাজটা করতে। আমি ভালো কাজ করতে চাই। ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই। নিজেকে একটা গণ্ডিতে আটকে রাখতে চাই না।
আনন্দধারা : ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাই।
দোয়েল : চন্দ্রাবতী এই উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কবি। এটা ময়মনসিংহ গীতিকা। আমি পড়েছি, পড়ার চেষ্টা করেছি। ভাষাটা কিন্তু কিশোরগঞ্জের ছিল। আয়ত্তে আনতে একটু কষ্ট হয়েছিল।
আনন্দধারা : আর কী বলতে চান?
দোয়েল : নতুনদের কাজ করার খুব ইচ্ছা মিডিয়ায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা করতে পারছে না। অনেক বাধা-নিষেধ রয়েছে। তারা যদি প্রোপার গ্রুমিং করে কাজ করতে আসে, তাহলে ভালো হয়। কাজ করে যাচ্ছি, জানি না কী হবে? ভক্তদের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
Comments