ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত, বিপাকে টেক্সটাইল মিলার

ব্যাংকিংখাতে চলমান ডলার সংকটে স্থানীয় টেক্সটাইল মিলার ও স্পিনারদের জন্য হুমকির সৃষ্টি করেছে। দেশের তৈরি পোশাকখাতকে সহায়তা করতে কাঁচামাল ও তুলা আমদানির লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন তারা।
স্টার ফাইল ছবি

ব্যাংকিংখাতে চলমান ডলার সংকট স্থানীয় টেক্সটাইল মিলার ও স্পিনারদের জন্য হুমকির সৃষ্টি করেছে। দেশের তৈরি পোশাকখাতকে সহায়তা করতে কাঁচামাল ও তুলা আমদানির লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন তারা।

আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো অক্টোবর থেকে এপ্রিলে তৈরি পোশাকের অর্ডার ২৫ শতাংশ কম দিয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক টেক্সটাইলখাতে অর্ডারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

ডলার সংকটের কারণে বেশিরভাগ স্থানীয় ব্যাংক এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় বেশি নিচ্ছে। এতে রপ্তানি বাজারে বিক্রি হওয়া পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ তুলা, ডাইস কেমিক্যাল, ভিসকোস ও ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের আমদানিতে প্রভাব পড়ছে।

প্রাথমিক টেক্সটাইল মিলাররা ক্রমবর্ধমান পোশাকখাতকে সহায়তা করতে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। তা সত্ত্বেও, এই মিলগুলো তাদের পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না।

অপেক্ষাকৃত কম রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমদানি বিল বাড়তে থাকায় দেশে মার্কিন ডলারের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার উদ্দেশ্যে অত্যাবশ্যক নয় এবং বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে প্রচলিত নীতি আরও কঠোর করেছে।

এসব কারণে টেক্সটাইলের ফ্যাব্রিক আমদানির উদ্দেশ্যে খোলা এলসির পরিমাণ চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে এর আগের বছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে।

এ সময়ে অপরিশোধিত তুলার আমদানি ৪১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তুলা থেকে তৈরি সুতা, সিনথেটিক ফাইবার ও সুতার আমদানিও অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বড় আকারে কমে গেছে।

ভুলতাভিত্তিক এনজেড টেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেউধ জামান খান জানান, ডলার সংকটের আগে ব্যাংকগুলো এলসি খোলার জন্য সর্বোচ্চ ৩ দিন সময় নিয়েছে। এনজেড টেক্স গ্রুপ মূলত তুলা থেকে সুতা ও অন্যান্য কৃত্রিম ফাইবার তৈরি করে থাকে।

বিদেশি ব্যাংকগুলো ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এলসি খুলতে পারছে, কারণ তাদের কাছে ডলার আছে। যেসব স্থানীয় ব্যাংক ভালো করছে, সেগুলো ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এলসি খুলতে পারছে।

'তবে যেসব ব্যাংক ডলার সংকটে ভুগছে, তারা এলসি খোলার জন্য ১৫ থেকে ২০ দিন সময় নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ দিনও সময় লাগছে', যোগ করেন সালেউধ জামান। তবে ব্যাংকগুলো তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর কারখানাগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানান, কিছু ফাইবারের আমদানিতে বিলম্ব দেখা দিয়েছে।

একজন মিলারকে অন্তত ২৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।

কাঁচামালের সংকটের কারণে সিমকো স্পিনিং এখন প্রতিদিন ৭ টন সুতা উৎপাদন করছে। তবে কারখানাটি পূর্ণ সক্ষমতায় ২০ টন সুতা উৎপাদন করতে পারে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, অক্টোবর-এপ্রিল মৌসুমে ২৫ শতাংশ অর্ডার কমেছে।

প্রাইমারি টেক্সটাইল মিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন সতর্ক করেন, 'এলসি খোলার পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে এই খাত কাঁচামাল সংকটে ভুগবে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

1h ago